• সর্বশেষ আপডেট

    ১৮ জেলেকে ফেরতে সাড়া দেয়নি মিয়ানমার

     

    জহুরা খাতুনের দুই সন্তান সোলতান আহমদ ও রশিদ আহমদকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। তবে তারা কোথায় আছে, কেমন আছে, বেঁচে আছে কিনা জানেন না এই মা। শুক্রবার (১৮ মার্চ) সকালে মোবাইলফোনে সন্তানদের বিষয়ে জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

     গত বুধবার কক্সবাজারের টেকনাফে বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে সোলতান ও রশিদসহ ১৮ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার তিন দিন পরেও তাদের ফেরত দেওয়া হয়নি। জহুরা খাতুন বলেন, ‘রোজগারের জন্য ছেলেরা মাছ শিকারে গেছে, কিন্তু আজও ফিরে এলো না। 

    তিন দিন পরেও তাদের ফেরত দেয়নি মিয়ানমার। নাফ নদের পাড়ে ছেলেদের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় বসে থাকি।’কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেখাশোনার কেউ নেই, ওরা দ্রুত না ফিরলে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’ অবিরাম কান্নায় কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি। ধরে নিয়ে যাওয়া ১৮ জেলেকে ফেরতের বিষয়ে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মিয়ানমার বিজিপি কোনও সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার।

     তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। এর আগে, জেলেদের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোনও সাড়া দেয়নি।’  মিয়ানমার বিজিপির ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের মধ্যে রয়েছেন- টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার মো. রমজান, মো. জামাল, মোহাম্মদ জসিম, রশিদ ইসলাম, মো. ফয়সাল, মো. আকবর, নজিম উল্লাহ, মো. রফিক, আবু তাহের, মো. হোসেন, হাসমত, মো. সাব্বির, মো. সুলতান, মো. ইসহাক, আবদুর রহমান, নুর কালাম, রেজাউল করিম ও মো. হেলাল।জেলে হেলালের ভাই মো. আয়াছ বলেন, ‘তিন দিনেও ভাইদের ফেরত দেয়নি। 

    ফলে পরিবারের স্বজনরা খুবই ভয়ভীতির মধ্য রয়েছেন। তারা কেমন আছেন কেউ কিছু বলতে পারছে না। তাছাড়া প্রায় সময় সাগর থেকে জেলেদের ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার বিজিপি। অনেক সময় মুক্তিপণ দিয়ে ফেরে আবার অনেক সময় জেলেও পাঠায়।’  ধরে নিয়ে যাওয়া ১৮ জনের মধ্যে ছিল ১১ বছরের শিশু আরাফাতও। এখন সন্তানকে ফিরে পেতে দিন কাটছে মা রেহেনা বেগমের।স্থানীয়রা জানান, সকালে প্রতিদিনের মতো টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা মো. জসিম, নুর কালাম, মো. ইসলাম ও নুর কালামের মালিকানাধীন চারটি নৌকায় ১৮ মাঝিমাল্লা সাগরে মাছ শিকারে যায়। 

    মাছ শিকার শেষে ফেরার পথে শাহপরীর দ্বীপের কাছাকাছি নাইক্ষ্যংদিয়ার এলাকায় কাঠবোঝাই ট্রলার দেখতে পান। এসময় জেলেরা ডুবে যাওয়া ট্রলারের উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। পরে তারা ফিরে আসার সময় মিয়ানমার বিজিপি স্পিড বোটে এসে তাদের ধাওয়া করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায়। তিন দিন পরও তাদের ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনও সাড়া দেয়নি মিয়ানমার।   

     টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে আটক জেলেদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করা হয়েছে। পরিবারগুলোকে আর্থিক অনুদানসহ খাদ্রসামগ্রহী সরবরাহ করেছে উপজেলা প্রশাসন। এছড়া তাদের দ্রুত ফেরত আনার বিষয়ে বিজিবি কাজ করছে বলে জানান তিনি।

    প্রকাশিত: শুক্রবার ১৮ মার্চ ২০২২