• সর্বশেষ আপডেট

    হুজুরের লেভাস নেন ইয়াবা বিক্রি করতে, দেন নামাজের পরামর্শ!


    দিগন্ত ডেস্কঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন মসজিদে। দাঁড়ি রেখে, পাঞ্জাবি পড়ে ধারণ করেছেন হুজুরের বেশ। বাসার আশপাশের মানুষকে আহ্বানও জানান নামাজ পড়ার জন্য। বাসার বুকশেলফেও সাজানো বিভিন্ন ইসলামিক বই।

    মোহাম্মদ ফোরকান প্রকাশ মাসুদ (২৯)। বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে।

    বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে বিসমিল্লাহ স্টোর নামে একটি মুদি দোকানও রয়েছে মোহাম্মদ ফোরকানের। পাশের দোকানদাররাও ফোরকানকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে জানেন। কারও সঙ্গে কখনও ঝামেলায় জড়াননি তিনি।  

    ফোরকানকে দেখে যে কারও মনে হবে একজন নিখাদ ভদ্রলোক। অথচ মোহাম্মদ ফোরকান প্রকাশ মাসুদই চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম একজন ইয়াবা বিক্রেতা। প্রতিবেশীরাও বিশ্বাস করতে পারছেন না তাদের পাশে থাকা ফোরকানই ইয়াবার গডফাদার।  

    শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে বহদ্দারহাট নিউ চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর রোডের সামসুল হাজীর বাড়িতে তৃতীয় তলার বাসায় অভিযানের পর এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।

    ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ নগদ ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৬২২ টাকা, ২৩ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১২টি চেক বই উদ্ধার করে।  

    এর আগে ফোরকানকে আটক করে বাকলিয়া থানা পুলিশ। পরে ফোরকানের দেওয়া তথ্যে মোবারক হোসেন ও মো. রাসেলকে আটক করে এবং নিউ চান্দগাঁও আবাসিকের বাসা থেকে ফোরকানের স্ত্রী শামীম আরা শমীকে আটক করে।  

    চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ, সহকারী কমিশনার (চকবাজার জোন) মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম ও বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন।

    সহকারী কমিশনার (চকবাজার জোন) মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম  বলেন, ফোরকান খুবই চালাক। তিনি নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচয় দেন। কখনও ফোরকান বা কখনও মাসুদ নামে পরিচয় দেন। কাউকে কাউকে নিজেকে পুলিশ সদস্য বলেও পরিচয় দেন।  

    ‘ধর্মীয় লেবাস ধরে তিনি মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। এসব কিছু করেন যাতে তাকে কেউ কখনও সন্দেহ না করে। বেশ কয়েক বছর ধরে ইয়াবা ব্যবসা করে আসলেও তার প্রতিবেশীরা কখনও বুঝতে পারেননি বিষয়টি। ’ 

    তিনি বলেন, নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করতে মানুষকে নামাজ পড়তে আহ্বান জানাতেন ফোরকান। ইয়াবা ব্যবসার বিষয়টি যাতে কেউ বুঝতে না পারে সেজন্য বহদ্দারহাটে একটি মুদি দোকান চালু করেন।  

    মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম বলেন, ফোরকান সরাসরি মিয়ানমার যোগাযোগ করে ইয়াবা বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ইয়াবাগুলো আনার পর প্রথমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জমা করা হয়। সেখান থেকে বাহকের মাধ্যমে কৌশলে চট্টগ্রামে ফোরকানের বাসায় এনে রাখা হয়। পরে এখান থেকে বিভিন্নজনের কাছে সরবরাহ করা হয়।

    ফোরকান যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন সে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য শাহিদা আক্তার জাহান। তিনি  বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে স্বামী-স্ত্রী দুইজন এ বাসায় ভাড়া থাকেন। তাদেরকে দেখে কখনও মনে হয়নি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। হুজুরের বেশ ধারণ করে চলাফেরা করতেন ফোরকান।  

    শুক্রবার সন্ধ্যায় বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের মার্কেটে ফোরকানের মালিকানাধীন বিসমিল্লাহ স্টোরে গিয়ে সেটি বন্ধ দেখা যায়। পাশের দোকানদার মো. আশেক  বলেন, বিসমিল্লাহ স্টোরটি ফোরকানের। তিনি দোকানে তেমন বসেন না। দোকানে কর্মচারী রেখে পরিচালনা করেন।  

    ফোরকানের ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে পেরে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রতিবেশী দোকানদাররা 

    ফোরকানের সন্ধান যে ভাবে পায় পুলিশ!

    গত ৫ নভেম্বর টেকনাফ থেকে ঢাকায় নিয়ে বিক্রির পর ঢাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার পথে বাকলিয়া থেকে অস্ত্রসহ আব্দুর রাজ্জাক নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যে টেকনাফ হ্নীলা লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে মো. কামাল নামে আরও একজনকে আটক করে বাকলিয়া থানা পুলিশ।

    আব্দুর রাজ্জাক ও মো. কামালকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে আসে বাকলিয়া থানা পুলিশ। রিমান্ডে দুই আসামির কাছ থেকে ফোরকান প্রকাশ মাসুদের বিষয়ে তথ্য পায়। পরে শুক্রবার সকালে অভিযান চালিয়ে ফোরকানকে আটক করে পুলিশ।

    বাকলিয়া থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দীন  বলেন, রিমান্ডে আব্দুর রাজ্জাক ও কামাল আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। তাদের দেওয়া তথ্যে আমরা ফোরকানের বিষয়ে জানতে পারি। ফোরকান, মোবারক, রাসেলসহ কয়েকজনকে নিয়ে ইয়াবার ব্যবসা করে। ফোরকানের স্ত্রী শামীম আরা শমীও বিষয়টি জানেন। তিনি স্বামীকে ইয়াবা ব্যবসায় সহযোগিতা করেন।

    ৫ নভেম্বর ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন জানিয়েছিলেন, আব্দুর রাজ্জাক ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে গিয়েছিলেন। ঢাকা থেকে ফেরার পথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। রাজ্জাক অস্ত্রটি নিয়ে কামালের কাছে হস্তান্তরের কথা ছিল।  

    ওসি জানান, জনৈক মাস্টারের অধীনে ১০০ জনের মতো রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ রয়েছে যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পৌঁছে দেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি টেকনাফের স্থানীয় কয়েকজনও রয়েছেন তাদের দলে। তারাও ইয়াবা পৌঁছে দেন ক্রেতার কাছে। ইয়াবা বিক্রির টাকা দিয়ে তারা অস্ত্র কেনেন। এসব অস্ত্র রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার ও সংঘর্ষের সময় ব্যবহার করেন তারা।

    মো. আব্দুর রাজ্জাক টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা দক্ষিণ আলীখালী এলাকার মো. ইউসুফের ছেলে ও মো. কামাল একই এলাকার সিকদার মির্জার ছেলে। কামাল এক রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করে ক্যাম্পের ভেতর অবস্থান করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

    ওসি  বলেন, রাজ্জাক, কামাল, ফোরকানসহ অন্যরা একটি গ্রুপে কাজ করেন। এদের মধ্যে কামাল ইয়াবার বিনিময়ে অস্ত্র সংগ্রহ করেন। ফোরকান চট্টগ্রামে ইয়াবা বিক্রি করেন। ফোরকানের বাসা থেকে উদ্ধার করা টাকাগুলো ইয়াবা বিক্রির। এছাড়া ফোরকানের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১২টি ব্যাংকের চেক বই। এসব ব্যাংকে ইয়াবার টাকা লেনদেন করে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

    সহকারী কমিশনার (চকবাজার জোন) মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম  জানান, ফোরকানের স্ত্রী শামীম আরা শমী চট্টগ্রাম কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রিধারী। ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন। স্বামীর সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি এসব সরকারি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন যাতে তাদের কেউ সন্দেহ করতে না পারে। 
    সূত্র বাংলা নিউজ...

    প্রকাশিত: শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০