• সর্বশেষ আপডেট

    নোয়াখালীর সেই দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা



    মোঃইব্রাহিম নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের আগে ওই গৃহবধূকে দুবার ধর্ষণ করেন দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতা ও দেলোয়ারের ভয়ে তিনি সে কথা প্রকাশ করতে পারেননি। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে নির্যাতিত ওই নারী এমন অভিযোগ করেছেন।আগের সেই ধর্ষণের ঘটনায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগী কালাম ওরফে আবুল কালামের বিরুদ্ধে  মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/১(৩০) ধারায় মামলা করেছেন (মামলা নম্বর-১০, তারিখ : ০৬-১০-২০২০)।

    বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ চৌধুরী জানান, আরেকটি মামলা হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি দেলোয়ার ও কালাম গত বছরের ২২ অক্টোবর বাদীর ঘরে ঢুকে পড়েন। এরপর দেলোয়ার তাঁকে ধর্ষণ করেন। এরপর এ বছরের ৭ এপ্রিল পুনরায় দেলোয়ার ও কালাম তাঁকে ঘর থেকে তুলে পাশের খালে থাকা নৌকায় নিয়ে যান। সেখানে প্রথমে দেলোয়ার তাঁকে ধর্ষণ করেন। পরে কালাম ধর্ষণ করেন। এ সময় হুমকি দিয়ে বলেন, এ কথা কাউকে বা পুলিশকে বললে জীবন শেষ করে মরদেহ মাটিতে পুঁতে ফেলবে। তাই ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ এত দিন কাউকে কিছু বলেননি।মামলা করার আগে গতকাল দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফজলুল কবিরের নেতৃত্বে একটি তদন্তদল বেগমগঞ্জের একলাশপুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কথা বলে। পরে দুপুরে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন আল-মাহমুদ ফজলুল কবির এসব কথা বলেন।ওই নারীর বরাত দিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক বলেন, ‘ওই নারী বলেছেন, প্রথমবার দেলোয়ার তাঁকে ধর্ষণ করেন বছরখানেক আগে, তাঁর নিজের বাড়িতে রাতের বেলায়। এরপর দ্বিতীয়বার তিনি ধর্ষণের শিকার হন গত রোজার ঈদের আগে। একটি নৌকায় নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়।

     
    দ্বিতীয়বার ধর্ষণের সময় দেলোয়ারকে কালাম নামের আরেক যুবক সহযোগিতা করেছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই দেলোয়ার ওই নারীকে নৌকায় ডেকে পাঠান। পরে কালামকে টাকা দিয়ে বিদায় করে দেন দেলোয়ার। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক।
    গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে একলাশপুর ইউনিয়নে ওই গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তাঁর স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন দেলোয়ার বাহিনীর বাদলসহ অন্যরা। এরপর তাঁরা গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তাঁরা গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। পরে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। 

    এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ওই নারী বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। সেখানে নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো সাত-আটজনকে আসামি করা হয়। এ দুটি মামলায় দেলোয়ারসহ আটজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে চারজন এজাহারভুক্ত আসামি। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুলিশ চারজনকে রিমান্ডে নিয়েছে।
    এ মামলার পলাতক আসামিরা হলেন আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব ও আরিফ। তাঁদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে। তাঁরা সবাই একলাশপুরের দেলোয়ার বাহিনীর সদস্য।
    বাহিনীপ্রধান দেলোয়ারকে গত রোববার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন শিমরাইল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বাসে তল্লাশি চালিয়ে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, দুটি গুলিসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-১১। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামি বাদলকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার রাতে বাদলকে বেগমগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে র‍্যাব।

    অন্যদিকে সোমবার সন্ধ্যায় বেগমগঞ্জে দেলোয়ারের মাছের খামারে র‌্যাব ১১-এর একটি টিম অভিযান চালায়। এ সময় ওই মাছের খামার থেকে সাতটি তাজা ককটেল ও দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়। গতকাল তাঁকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে অস্ত্র আইনে মামলা করে র‍্যাব। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ দুপুরে দেলোয়ারকে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানি শেষে বিচারক ফাহমিদা বেগম দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

    প্রকাশিত: বুধবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২০