• সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ

    নিজের জুতা গলায় ঝুলিয়ে প্রতিবাদ ইজিবাইক চালকের

     

    বরগুনার পরীরখাল থেকে অসুস্থ একটি শিশু ও তার অভিভাবকদের নিয়ে আজ সকাল ১০টার দিকে বরগুনা সদর হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন ইজিবাইকচালক নাসির মোল্লা। সাড়ে ১০টার দিকে তিনি বরগুনা-পরীরখাল-নিশানাবাড়িয়া সড়কের জোমাদ্দার বাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে বাস মালিক সমিতির কয়েকজন লোক ইজিবাইকে যাত্রী পরিবহনে বাধা দেন। ইজিবাইকচালক নাসির মোল্লাকে যাত্রী নামিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। একপর্যায়ে বাস মালিক সমিতির লোকজন ইজিবাইকচালক নাসিরকে গালাগাল করেন এবং মারার জন্য তেড়ে আসেন। পরে যাত্রীরা নেমে গেলে খালি ইজিবাইক নিয়ে নাসির বরগুনা শহরে চলে আসেন। ক্ষোভে ও ঘৃণায় নিজের পায়ের জুতা খুলে রশিতে বেঁধে নিজেই গলায় ঝুলি বরগুনা শহরের প্রেসক্লাব চত্বরে ইজিবাইক স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকেন। গণমাধ্যমকর্মীরা এ দৃশ্য দেখে বিষয়টি জানতে চাইলে নাসির মোল্লা বলেন, ‘আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। রাষ্ট্রের আইন মেনে কাজ করে খাওয়ার অধিকার সবারই আছে। আমি ঢাকা শহরে ব্যবসা করতাম। ব্যবসায় মন্দার কারণে করোনায় বরগুনা গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। সঞ্চিত অর্থ ও ধারদেনা করে ইজিবাইক কিনে বরগুনা-পরীরখাল সড়কে ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। করোনাকালীন ও পরবর্তী কিছুদিন সড়কে অবাধে ইজিবাইক চালাতে পারলেও গত এক-দেড় বছর ধরে বরগুনা বাস মালিক সমিতির লোকজন ইজিবাইক চলাচলে বাধা দিয়ে আসছে। নাসির আরও বলেন, ‘শুধু বাধাই না, চালকদের মারধর ও যাত্রীদের হেনস্তা করেন বাস মালিক সমিতির সড়ক পাহাদার বাহিনী। তাদের অত্যাচারে আমিসহ সব চালক ও যাত্রীরা অতিষ্ঠ। আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করেও কোনো সমাধান পাইনি। আজ ওরা আমার মা-বাপ তুলে গালি দিয়েছে। আমি প্রতিবাদ না করলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না। তাদের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করে তাদেরই অত্যাচার করা হয়। সহ্যসীমা অতিক্রম করায় আমি এভাবে প্রতিবাদ করছি। এ সময় বেশ কয়েকজন ইজিবাইক ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলচালক নাসিরের কথায় সমর্থন করেন।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাসির বলেন, ‘আমার সাত মাসের শিশুর জন্য দুধ কিনতে পারছি না, গাড়ি নিয়ে নামলে ওদের কারণে চালাতে পারি না। আমরা কি এ দেশের নাগরিক না? আমরা কি কাজ করেও খেতে পারব না?’ পরে ইজিবাইকচালক নাসির মোল্লা বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও ব্যর্থ হন। জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান নাসিরের সঙ্গে দেখা না করে বরগুনা সদর থানায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেন। নাসির বলেন, ‘আমি ডিসির সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। আমি ঢাকায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে এভাবেই প্রতিবাদ করব।’বরগুনা জেলা বাস ও মিনিবাস চালক মালিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সগীর হোসেন বলেন, ‘আরটিসির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সড়কে ইজিবাইক, অটোরিকশা ও রেন্ট এ মোটরসাইকেল চলাচল নিষেধ। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত না মেনে জোর করে যাত্রী পরিবহন করে। ইজিবাইকচালক নাসির প্রসঙ্গে সগীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে জানব, সেখানে কী হয়েছিল।’ 
    প্রকাশিত সোমবার ০৩ এপ্রিল ২০২৩