• সর্বশেষ আপডেট

    প্রতিবেদন মিথ্যা, যুক্তরাষ্ট্রে আমার কোনো বাড়ি নেই: ওয়াসার এমডি

     

     
    ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ১৩ বছর ধরে দায়িত্ব পালন, বারংবার মেয়াদ বৃদ্ধি, ভর্তুকিতে চলা প্রতিষ্ঠানটি থেকে মোটা অংকের বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়াসহ নানা কারণেই আলোচিত ও সমালোচিত তাকসিম এ খান। সম্প্রতি তিনি আলোচনায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৪টি বাড়ি থাকার খবরে।

    আজ সোমবার দৈনিক সমকালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'একটি-দুটি নয়, ১৪ বাড়ি! দেশে নয়, সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে কিনেছেন এসব বাড়ি। সব বাড়ির দাম টাকার অঙ্কে হাজার কোটি ছাড়াবে। দেশ থেকে অর্থ পাচার করে তিনি এসব বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

    বাড়ি কেনার অর্থের উৎস ও লেনদেন প্রক্রিয়ার তথ্য তালাশে নেমেছে ইন্টারপোলসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিপুল পরিমাণ অর্থে একের পর এক বাড়ি কেনার ঘটনায় দেশটির গোয়েন্দা তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।'

    এই অভিযোগের বিষয়ে আজ তাকসিম এ খান একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার যে ১৪টি বাড়ির কথা বলা হয়েছে তা শতভাগ মিথ্যা কথা। আমেরিকাতে আমার কোনো বাড়ি নেই। যে প্রতিবেদন হয়েছে তার একটাও সত্য না। গত ১৩ বছর ধরে একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে এসব রটিয়ে যাচ্ছে।'

    যুক্তরাষ্ট্রে আপনার পরিবারের সদস্যরা থাকেন এবং আপনিও বছরের একটি দীর্ঘ সময় সেখানে থাকেন। এর সুবাদেই যুক্তরাষ্ট্রে এত সম্পদ থাকার বিষয়টি সামনে এসেছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি তো আমেরিকার সিটিজেন। এটা আজকে থেকে না, বহু বছর ধরেই। আমি ওয়াসায় এসেছি আমেরিকা থেকে। আমার আমেরিকার নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টি সবাই জানে। তবে, আমার ২টি সিটিজেনশিপ আছে।'

    যুক্তরাষ্ট্রে তাকসিমের সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার কিছুই নেই।'

    নিজ নামে না থাকলে আত্মীয়দের নামে আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না, আত্মীয়দের নামেও নেই। ওখানে তো আমার ইনকাম ট্যাক্সের হিসাবে সবই দেওয়া আছে। আমার যা আছে তার সবকিছুর হিসাব তো ওখানেই আছে।'

    অবৈধ সম্পদ অর্জন ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি থাকার মতো প্রতিবেদন হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'এই স্টাইলে তো ঢাকা ওয়াসা কোনো দিন চলেনি, কোনো সরকারি সংস্থা তো চলে না। ওয়াসায় রিফর্ম করেছি। যাদের বিরুদ্ধে রিফর্ম করেছি, তারা এসব করাচ্ছে। যাদের স্বার্থে আঘাত হয়েছে, তারা এমন খবর করাচ্ছে।'

    এর আগে আজ সোমবার (৯ জানুয়ারি) একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ওয়াসার তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি!’ শিরোনামে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

    এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে ১৪টি বাড়ি কিনেছেন তাকসিম। সব বাড়ির দাম টাকার অঙ্কে হাজার কোটি ছাড়াবে। দেশ থেকে অর্থ পাচার করে তিনি এসব বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাড়ি কেনার অর্থের উৎস ও লেনদেন প্রক্রিয়ার তথ্য অনুসন্ধানে নেমেছে ইন্টারপোলসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

    যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি কেনা এবং অর্থ পাচারকারী হিসেবে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় তাকসিম খানের নাম থাকা নিয়ে সম্প্রতি দুটি অভিযোগ জমা পড়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। অভিযোগে কিছু বাড়ির সুনির্দিষ্ট ঠিকানা, ছবি, কোন বাড়ি কখন ও কত টাকায় কেনা- তা উল্লেখ করা হয়েছে। তাকসিম সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) 'গভর্নমেন্ট ওয়াচ নোটিশ'-এর একটি কপি অভিযোগের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

    সিআইএসহ যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে), ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), দেশটির অন্যান্য সংস্থা ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল) তাকসিম এ খানের বিষয়ে কাজ করছে বলে ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

    এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে তাকসিম এ খানের ১৪ বাড়ি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাকসিমের সম্পদের সন্ধানের তথ্য জানতে চাইবে দুদকও।

    দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন আবদুল্লাহ বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে তার সম্পদের বিষয়ে জানতে আমরা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দেব। বিএফআইইউ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।'

    অন্যদিকে তাকসিম এ খানের দুর্নীতি বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জোর অনুসন্ধান করতে বলেছেন হাইকোর্ট। যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৪ বাড়ির দুর্নীতির বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তা ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

    সোমবার (৯ জানুয়ারি) বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। 

    এদিন তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি বিষয়ে গণমাধ্যমের সংবাদ প্রচারের পর আদালতের নজরে আনেন দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

    দুদক আইনজীবী বলেন, বিষয়টি খুব উদ্বেগজনক। অনেক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ভাড়া বাসায় থাকেন; অথচ ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনার অভিযোগ।

    প্রকাশিত সোমবার ০৯ জানুয়ারি ২০২২