• সর্বশেষ আপডেট

    যারা বলে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, আমার কাছে আসতে বলেন

     

    চট্টগ্রাম ওয়াসার দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানি সরবরাহে দুর্ভোগ বেড়েছে। দূষিত পানির পাশাপাশি লবণাক্ত পানির সরবরাহে দৈনন্দিন কাজে পানি ব্যবহারে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এছাড়া পুরনো সঞ্চালন লাইনের ফুটোর কারণেও দূষিত হচ্ছে পানি। বাসিন্দারা বলছেন এসব কারণে সরাসরি নয়, পান করতে পানি ফুটাতে হচ্ছে। এছাড়া নগরীর বাসায় বাসায় বেড়েছে মিনারেল ওয়াটার বা বোতলজাত পানির কদর। তবে ওয়াসার দাবি, সরবরাহ হওয়া পানিতে কোনও ময়লা-দুর্গন্ধ নেই। বিশুদ্ধ করেই গ্রাহকের কাছে তা সরবরাহ করা হচ্ছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগর জুড়ে পানির সংকট রমজানে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। নগরীর অনেক এলাকায় নেই ওয়াসার পানির সংযোগ। এ কারণে ওয়াসার সংযোগবিহীন এলাকায় টিউবওয়েলই একমাত্র ভরসা।এদিকে হঠাৎ করে চট্টগ্রামে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। প্রতিদিনই সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী। নগরীর বাসিন্দারা বলছেন দূষিত পানি পান করার কারণে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নগরবাসীর এসব অভিযোগ মানতে নারাজ ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘ওয়াসার পানি নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। পানির কারণে ডায়রিয়া হতে পারে এ রকম কোনও জীবাণু পাওয়া যায়নি।’তবে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ। অবশ্যই পানি খাওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে। পানির দূষণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘ওয়াসার পানিতে কোনও ময়লা-দুর্গন্ধ নেই। যারা বলে তাদেরকে পানি নিয়ে আমার কাছে আসতে বলেন। এগুলো অপপ্রচার-গুজব। প্রতি মাসে ওয়াসার পানি পরীক্ষা করা হয়। এতে কোনও ময়লা-দুর্গন্ধের অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। যদি পাওয়া যায় তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো।’  তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। আমরা ৪০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছি। আমাদের পানির কোনও ঘাটতি নেই। প্রায় ৮০০ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপ লাইনের মাধ্যমে নগরীর ৮০ হাজার গ্রাহকের কাছে আমরা পানি পৌঁছে দিচ্ছি। পাশাপাশি পুরনো পাইপলাইন সংস্কারের কাজ চলছে।’ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন) মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়া উপজেলার অবস্থিত শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ ও শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২, মদুনাঘাট এলাকায় অবস্থিত শেখ রাসেল পানি শোধনাগার, মোহরা এলাকায় অবস্থিত মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পসহ নগরীর ৩৫-৪০টি টিউবওয়েল পানির উৎস।’এদিকে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, ময়লা ও লবণাক্ততা চট্টগ্রামবাসীর নিত্য সঙ্গী। সরাসরি এখনও ওয়াসার পানি পান করতে পারি না। ফুটিয়ে পানি খেতে হয়। পানির কারণে ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ পানিবাহিত রোগ বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালে হালিশহরে পানিবাহিত রোগে বেশ কজন মারাও যায়। তখন ওয়াসার পানি নিয়ে ব্যাপক আতংক দেখা দেয়।’তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে ওয়াসার পানি নিয়ে নগরবাসীর অনেক অভিযোগ আসে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পতেঙ্গা, বন্দর, হালিশহর ও পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দাদের। এসব এলাকার অভিযোগ ওয়াসার পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকও করেছি। যদিও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে পানি বিশুদ্ধ করেই সরবরাহ করছে। তবে এ বিশুদ্ধ পানি গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছে না। পুরাতন সঞ্চালন লাইনে পানি সরবরাহ করায় তা কাদা পানিতে একাকার হয়ে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত হচ্ছে। সঞ্চালন লাইন পরিবর্তন না করায় রোধ করা যাচ্ছে না পানির অপচয়।’তিনি আরও বলেন, ‘হালিশহর এলাকায় স্যুয়ারেজ লাইন এবং পানির লাইন এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। এ কারণে ওই এলাকার পানি ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত হচ্ছে।’নগরীর মোহরা এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ জানান, মোহরার সব এলাকায় এখনও পানির সংযোগ পৌঁছেনি। যেসব এলাকায় সংযোগ আছে সেখানে সরবরাহ হওয়া ওয়াসার পানিতে আয়রন বেশি। পানি ফুটিয়েও খাওয়ার অনুপযোগী হচ্ছে। অতিমাত্রায় আয়রনযুক্ত এসব পানি দিয়ে কাপড় পর্যন্ত ধোয়া যায় না।নগরীর পশ্চিম ষোলশহর সঙ্গীত এলাকার বাসিন্দা নুরুল হকও একই ধরনের অভিযোগ করেন। বাকলিয়া এলাকার কল্পলোকসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও পৌঁছেনি ওয়াসার পানি। এ এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নগরীর বাকলিয়ার কল্পলোকসহ বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট আছে। অধিকাংশ স্থানে এখনও পৌঁছেনি ওয়াসার সংযোগ।’ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ১ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিউল আজম বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে প্রায় দুই লাখ লোকের বসবাস। তবে এখানে ওয়াসার কোনও পাইপলাইন নেই। এ এলাকার কোনও মানুষ ওয়াসার পানি পাচ্ছেন না। পানি সরবরাহের জন্য ওয়াসা কর্মকর্তাদের আমরা অনেকবার বলেছি, তবে কোনও সুরাহা মেলেনি।’ চসিকের ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবু বলেন, ‘আমার এলাকায় অধিকাংশ জায়গায় নেই ওয়াসার সংযোগ। সামান্য কিছু এলাকায় সংযোগ আছে। পুরো এলাকায় পানি সরবরাহ দেওয়ার জন্য ওয়াসার কর্মকর্তাদের আমি লিখিতভাবে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি।চসিকের মোহরা ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী নুরুল আমিন মামুন বলেন, ‘মোহরা এলাকায় পানির সংকট দীর্ঘ দিনের। সব এলাকায় এখনও পানির সংযোগ পৌঁছেনি। অথচ এ এলাকায় আছে ৯ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প। এলাকার পূর্ব, মধ্যম ও দক্ষিণ মোহরা, চর রাঙ্গামাটিয়া এলাকায় পানির বেশি সংকট। সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় বিষয়টি আমি তুলে ধরেছি। পানি সরবরাহের জন্য ওয়াসার এমডির কাছেও লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছি।’ 
    চসিকের ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল বারেকও তার এলাকায় ওয়াসার সংযোগ কম বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ড সাগরের তীরবর্তী। এ কারণে টিউবওয়েলের পানিতে লবণাক্ততা ও আয়রন বেশি। দাবির মুখে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কিছু সংযোগ দিলেও তারা পানি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি। 
     চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন সার্বিক বিষয়ে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি দেওয়ার। পুরনো সঞ্চালন লাইন ঠিক হলেই আমরা বিশুদ্ধ পানি গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারবো।

    প্রকাশিত: বুধবার ১৩ এপ্রিল ২০২২