• সর্বশেষ আপডেট

    দলীয় নেতাদের পিটিয়ে আবারও আলোচনায় সাবেক এমপি বদি

     

    নিজ দলের নেতাদের পিটিয়ে আবারও আলোচনায় আসলেন কক্সবাজারের সরকারদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুর রহমান বদি। 

    গত শুক্রবার (২২ এপ্রিল) ইফতারের আগে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা হলরুমে টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা চলাকালে এই ঘটনা ঘটে।বদি এর আগে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে উখিয়া ও টেকনাফ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

    সে সময় তিনি নানা কারণে সমালোচিত হন।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় বদির নেতৃত্বে তার ভাই আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি আবদুশ শুক্কুর, নুর মোহাম্মদ ওরফে লাস্টিপসহ বদির ক্যাডার বাহিনী সভা চলাকালে হলরুমে ঢুকে এ হামলা চালান। এতে আহত হন– টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইউছুফ (মনো), পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউছুফ ভুট্টো ও উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক।হামলার শিকার মো. ইউছুফ (মনো) জানান, বর্ধিত সভা চলাকালে সাবেক সংসদ সংসদ বদি পৌর কমিটিকে ডিঙিয়ে বারবার ওয়ার্ড কমিটিকে প্রাধান্য দিয়ে কথা বলছিলেন। 

    পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইউছুফ (মনো) তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় সেখানে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বদি মঞ্চ থেকে নেমে হলরুমের বাইরে অপেক্ষমান তার ক্যাডার বাহিনীকে ডেকে এনে নিজেই মনোকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। মনোকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে যুগ্ম সম্পাদক ইউছুফ ভুট্টোকেও বেধড়ক মারপিট করেন বদি ও তার লোকরা।এ ঘটনার ভিডিও করতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হককেও মারধর করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন বদির ক্যাডাররা। 

    এ ছাড়া পৌর আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদ হোসেন মুন্নাকেও হামলার চেষ্টা করা হয়। এ সময় বদি বাহিনীর হামলায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, ‘কী আর বলবো। আমার সামনেই তো ঘটনা ঘটেছে। তুচ্ছ ঘটনায় সাবেক এমপি বদি নিজে এসে মারধর শুরু করেন। পরে তার ভাইয়েরা এসে মারধরে অংশ নেন। এতে টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইউছুফ (মনো), পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউছুফ ভুট্টো আহত হন। এ সময় ঘটনার ছবি ওঠাতে গেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হককে আহত করে তারা।’তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ক্ষমতায় থাকাকালেও একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। দলীয়ভাবে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

    এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ বলেন, ‘টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সফল করার জন্য অন্যদের মতো আমিও রয়েছি। ইতোমধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিল অধিবেশন শেষ হয়েছে। এ কারণে ওয়ার্ডের নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে শুক্রবার টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে টেকনাফ পৌরসভা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ছিল। সেই বর্ধিত সভায় ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচিতদের কথা শোনার পর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। পরে ইফতারের সময় হওয়ায় আমরা অন্য জায়গায় চলে আছি। এরপর দলীয় নেতাকর্মীদের মারধর করার বিষয়টি জানতে পারি। এ ঘটনায় স্থানীয় একটি হোটেল তাৎক্ষণিক মিটিংয়ে বসে সমাধান করি।

    ওই মিটিংয়ে অভিযুক্তরা উপস্থিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে রণজিত দাশ আরও বলেন,  ‘অভিযুক্তরা উপস্থিত না থাকলেও তাদের লোকজন ছিল। বৈঠকে আবদুর রহমান বদিকে পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনায় পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করেনি। এরপরও যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    এ বিষয়ে জানতে আবদুর রহমান বদির চারটি মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
    উল্লেখ্য, টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য জেলা সাংগঠনিক টিমের নেতাদের উপস্থিতিতে পূর্ব নির্ধারিত বর্ধিত সভা হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহ আলম রাজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ, ইউনুস বাঙ্গালী, উপজেলা সভাপতি মাস্টার জাহেদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরসহ জেলা ও উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

    প্রকাশিত: শনিবার ২৩ এপ্রিল ২০২২