• সর্বশেষ আপডেট

    ১০ টাকা কেজির বেগুন ঢাকায় বিক্রি ১০০ টাকায়

     

    রমজানে বেগুনের বাড়তি চাহিদাকে ঘিরে বিরামপুর হাট থেকে ১০ টাকায় কেনা এক কেজি বেগুন হাত বদলের মাধ্যমে ঢাকায় গিয়ে খুচরায় ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

    অতিমুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে দাম বাড়ছে বলে দাবি পাইকার ও কৃষকদের। আশপাশের কয়েক উপজেলার মধ্যে বিরামপুরের সবজির হাট সবচেয়ে বড় পাইকারি হাট। এখানে অন্য উপজেলার কৃষক ও পাইকাররাও সবজি বেচা-কেনা করেন। 

    এছাড়া ঢাকার পাইকাররাও আসেন সবজি কিনতে। এখান থেকে সবজি কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন।এ বিষয়ে বিরামপুরের কৃষক লুৎফর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বেগুন চাষাবাদ করে আসছি, তবে বেগুনে কিন্তু খরচ অনেক। কারণ বেগুন উৎপাদনে বিভিন্ন রোগ-বালাই মোকাবিলা করতে হয়। তাই উৎপাদন বাড়াতে জমিতে প্রচুর পরিমাণে ওষুধ স্প্রে করতে হয়। এছাড়া শ্রমও দিতে হয় অনেক।

     আজ হাটে বেগুন নিয়ে এসেছিলাম, ৫২০ টাকা মণ দরে বেগুন বিক্রি করলাম। কিন্তু খুচরা বাজারে সেই বেগুন ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা কৃষকরা তো দাম পাই না। পাইকারসহ অন্যরা দাম পায়। বেগুনের দাম যদি ১০-১৩ টাকা থাকে, তাহলে আমাদের চাষের খরচই উঠবে না। গত কয়েকদিন আগে অবস্থা আরও খারাপ হয়। 

    দাম নেমে প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হয় ৫ টাকায়। তবে রোজার সময়ে দাম একটু বেড়েছে, দবে কৃষকের কোনও লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন লুৎফর। ঢাকা থেকে বিরামপুর হাটে বেগুন কিনতে আসা পাইকার সাজ্জাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিরামপুরের হাটে ভালো বেগুন পাওয়া যায়। যে কারণে আমরা এখান থেকে বেগুন কিনে ঢাকায় পাঠাই। আজ হাটে বেগুন কিনলাম ১৫-২৫ টাকা কেজি দরে, সাথে রয়েছে হাটের খাজনা। এরপর বেগুন নিয়ে যেতে গাড়িভাড়া আছে, আবার ট্রাফিককেও টাকা দিতে হয়, ঢাকায় নিয়ে এই বেগুন আমরা ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। এতে আমাদের কিছুটা লাভ হয় তাই দিয়ে আমরা চলি। 

    এর পরে আমাদের থেকে কিনে খুচরা বাজারে ৮০-১০০ টাকা দরে বেগুন বিক্রি হয়।তবে স্থানীয় পর্যায়ে খুচরা বিক্রেতারা কেনা দামের চেয়ে কিছু টাকা বেশি লাভে বেগুন বিক্রি করছেন। পাবর্তীপুরের খুচরা বিক্রেতা ইসরাইল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি বিরামপুর বাজার থেকে বেগুন কিনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। হাট থেকে যে দামে বেগুন কিনি তারচেয়ে কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করে দেই। তবে বেগুনের বাজার আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। আজ বেগুন কিনলাম একটা ১০ ও ১৫ টাকা কেজি দরে। আর একটা ভালো বেগুন কিনলাম ২৫ টাকা কেজি দরে। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ মিলিয়ে কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করে দেবো। 

       
    হিলি বাজারের সবজি বিক্রেতা ইউসুফ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সাধারণত বিরামপুর ও পার্শ্ববর্তী পাঁচবিবি হাট থেকে সবজি কিনে হিলি বাজারে বিক্রি করি। তবে রমজানে ঢাকার বাজারে বেগুনের বাড়তি চাহিদা থাকায় অনেক পাইকার এখানে এসে বাড়তি দামে বেগুন কিনে নিরেয় যাচ্ছে। যে কারনে মোকামে চাহিদার তুলনায় পণ্যটির সরবরাহ কিছুটা কম। রমজানের কারণে আমাদের স্থানীয় বাজারেও চাহিদা বেড়েছে।
    তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগেও কম দামে কিনে ১৫-২০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করেছি। তবে এখন বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে, এতে করে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।

    হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিবছর রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির একটা চক্রান্ত অসাধু ব্যবসায়ীদের থাকে। এবারের রমজানেও আমরা সেই বিষয়টি লক্ষ্য করছি। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পণ্যের দাম হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে হিলি বাজারে বেশ কয়েকটি দোকানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় মূল্যতালিকা না টাঙানোয় ও নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করায় ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। ভোক্তাদের সুবিধায় এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

    প্রকাশিত: মঙ্গলবার ৬ এপ্রিল ২০২২