• সর্বশেষ আপডেট

    পুরাতন ধারার জেএমবি নিয়ে সক্রিয় ছিল এমদাদুল

      

    নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পুরাতন ধারার সদস্যরা যদি আবার উজ্জীবিত হয়, তাদের কার্যক্রম সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী হবে- গ্রেফতারকৃত এমদাদুল হক ওরফে উজ্জল মাস্টারের কাছে থেকে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে র‍্যাব।

    এমদাদুল হক জেএমবির যে গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছে সেখানে পুরনো সদস্যদের রিক্রুট করা হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমে পড়াশোনার পর জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়ে পড়ছে এমন কাউকে তারা সদস্য হিসেবে নিচ্ছে না। র‍্যাব জানায়, পুরাতন ধারার সদস্যদের দিয়েই এমদাদুল সংগঠনটি চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে।

    বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর বসিলা এলাকায় একটি বাসায় অভিযান পরিচালনা করে বিভক্ত জেএমবির একটি গ্রুপের কর্ণধার এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টারকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। ওই দিন বিকালে রাজধানীর কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

    অভিযান পরিচালনার সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গোলা-বারুদ, নগদ তিন লক্ষাধিক টাকা, রাসায়নিক দ্রব্য, দেশীয় বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, উগ্রবাদী লিফলেট জব্দ করা হয়।

    তিনি বলেন, র‍্যাব গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল বসিলার ওই বাসায় এমদাদুল হকসহ আরও দু'জন সদস্য অবস্থান করছে। অভিযানের সময় শুধু এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টারকে পাওয়া গেছে। অভিযানের আগে দুজন বাসাটি ত্যাগ করে।

    র‍্যাব জানায়, গ্রেফতার এমদাদুল হকের গ্রুপে ৫০ জন অনুসারী রয়েছে। তারা সাইবার ফোর্স তৈরি করেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। তবে আরও কয়েকজন গ্রেফতারের বাকি রয়েছে। আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করেছি।

    গ্রুপটির নেটওয়ার্ক ময়মনসিংহ-জামালপুর উত্তরবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিস্তৃত রয়েছে। করোনাকালেও অনলাইনে তারা সদস্য সংগ্রহ, বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। অর্থ যোগানের জন্য গ্রেফতারকৃত এমদাদুল হকের নির্দেশে ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিয়েছিল তারা।

    কে এই এমদাদুল হক

    এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টার ১৯৯৩ সালে বিএ পাস করে। ১৯৯৫ সালে তার নিজ এলাকায় শুরু করে একটি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা। ২০০২ সালে শিক্ষকতা চলাকালে সে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে জঙ্গিবাদের কারণে চাকরিচ্যুত হয়। ২০০৩ সালে জেএমবির সাবেক শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের বায়াত গ্রহণ করে সে। এরপর সেসহ আরও কয়েকজন জামালপুরের একটি আস্তানায় প্রশিক্ষণ নেয়। জঙ্গি তৎপরতায় দ্রুত ময়মনসিংহ অঞ্চলের আঞ্চলিক নেতায় পরিণত হন সে। তার সাথে তৎকালীন জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই ও সালাউদ্দিন সালেহীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। জেএমবির শীর্ষ নেতারা যখন ময়মনসিংহ অঞ্চল সফর করত  তাদের মিটিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং বয়ানের আয়োজন করা   সবকিছুই এমদাদুল হক ওরফে উজ্জ্বল মাস্টার করতো।

    ২০০৩ সালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ব্র্যাক অফিসে ডাকাতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল সে। সে ডাকাতির মামলায় একজন চার্জশিটভুক্ত আসামি। নাশকতা ও জঙ্গি সংক্রান্ত মামলায় ২০০৭ সালে, ২০১২ সালে, ২০১৫ সালে, ২০১৬ সালে, ২০২০ সালে তার নামে মামলা হয়। মামলায় সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে।

    র‍্যাব জানায়, উজ্জল মাস্টার ২০০৭ সালে তার নিকট আত্মীয় রফিক মাস্টারকে হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। নিহত রফিক মাস্টার বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্ট নেতাদের তথ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে দিয়েছে মর্মে তাকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকে উজ্জল মাস্টার।

    র‍্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে অভিযানে গ্রেফতারকৃত জঙ্গি জুলহাসসহ আরও দশ জনকে সে বায়াত প্রদান করেছিল। ইতোপূর্বে তার কাছ থেকে বায়াত নেওয়া অনেকেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হয়। পলাতক সদস্যদের খোঁজা হচ্ছে বলে জানায় র‍্যাব।


    প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১