• সর্বশেষ আপডেট

    সংরক্ষিত এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারেনা- আব্দুচ ছালাম

     

    চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান  ও  চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুচ ছালাম বলেছেন, আধুনিক সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে আমরাও এগিয়ে যেতে চাই, এগিয়ে থাকতে চাই। তাই, অন্যান্য আধুনিক সুবিধার নানা সংযোজনের সাথে চট্টগ্রামে আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্রও সংযোজিত হবে এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। সিডিএ’র অনন্যা আবাসিক প্রকল্পের ফাঁকা প্লটে আধুনিক হাসপাতালের উদ্যোগ নিয়ে ছিলাম আমি।

     সেখানে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এভার কেয়ার হাসপাতাল গড়ে ওঠেছে। চট্টগ্রামের মানুষ এটিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এর সুফল পাচ্ছে। ইউনাইটেড প্রস্তাবিত ৫০০শয্যার ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চট্টগ্রামে হোক, এটিকেও আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাব। কিন্তু, এটি কোন ভাবে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য নষ্ট করে কিংবা জনস্বার্থের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে নয়।

    ভৌগলিক অবস্থান ও বন্দরের সুবিধা বিবেচনায় তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্মেন্ট আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের কর্মকা- পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় রেল ভবন প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের অদুরেই নৈসঃর্গিক শোভামন্ডিত খুব বেশী উঁচু নয় এমন পাহাড়ের মাঝখানেটাতেই ১৮৯৯ইং সালে সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংটি নির্মান করে তাঁদের কার্যক্রম শুরু করেন। সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং শব্দত্রয়ের আদ্যক্ষরে ভবনটি সিআরবি নামে পরিচিতি লাভ করে, আর পাহাড়টিকে সিআরবি পাহাড় বলা হতে থাকে। অধুনা, পাহাড়টি রেলওয়ের নামে খতিয়ানে রেকর্ডভূক্ত হয় অর্থাৎ সিআরবি পাহাড়টি রেলওয়ের নিজস্ব সম্পত্তি।

     বর্তমানে কেবল রেলওয়ে বিল্ডিংটিই নয়, বরং পুরো পাহাড়টিকেই মানুষ সিআরবি নামে চেনে।

    নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে গড়া রেলওয়ে ভবন, রেলওয়ে হাসপাতাল, স্টাফ কোয়ার্টার ও শতাধিক বৎসরেরও অধিক বয়সী বৃক্ষরাজি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো সমহিমায় টিকে আছে। এখানে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের সমাধি।

    ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর চাপ সামলাতে চট্টগ্রাম শহরের খালি স্থান থেকে সবুজ হটিয়ে যখন ইট পাথুরে দালান জায়গা করে নিচ্ছে ক্রমশ, কলকারখানা ও গাড়ির ধোঁয়া ক্ষতিকর সীসা নির্গত করে বুড়ো চট্টগ্রামের নাভিশ্বাস তুলছে তখন এই সিআরবি পাহাড়টি এক টুকরো অক্সিজেন ফ্যাক্টরী হয়েই রয়েছে। তাই, এ পাহাড়টিকে চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস বলাতে কোন অত্যুক্তি হয়না।

    নাগরিক জীবনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে সিআরবি সন্নিহিত সর্পিল আঁকা-বাঁকা রাস্তা, উঁচু নিচু টিলা, বন-বনানী ছায়া সুনিবিড় এই এলাকাটি যুগ যুগ ধরে মানুষকে বিনোদনের আস্বাদ দিয়ে আসছে। সি.আর.বি পাহাড়ি জনপদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশ ও পাহাড়ের তলদেশে বাঙালির সর্ববৃহৎ বৈশাখী উৎসব, বসন্ত উৎসব ও ঐতিহ্যবাহী বলীখেলায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। বর্তমান সময়ে চট্টগ্রামের সাহিত্য সাংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠেছে এই সি.আর.বি এলাকাটি।

    গবঃৎড়ঢ়ড়ষরঃধহ গধংঃবৎ চষধহ এবং উবঃধরষবফ অৎবধ চষধহ এর দিক নির্দেশনা অনুযায়ী এই সিআরবি এলাকাটি ঈঁষঃঁৎধষ ধহফ ঐবৎরঃধমব অৎবধ'র অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। এখানে কোন প্রকার বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়তে যাওয়া সরকারের হেরিটেজ ও হর্টিকালচার নীতিমালার পরিপন্থি বলেই বিবেচিত হবে।

    একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে রেলওয়ের চুক্তি অনুযায়ী এখানে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ সিটের মেডিকেল কলেজ ও নার্স ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের পায়তারা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং চট্টগ্রামের জনস্বার্থের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। আর, জনস্বার্থ পরিপন্থী  কোন কিছু করতে যাওয়া হবে আমাদের জন্য একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

    একটি সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলে দেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব মুক্ত করতে আমাদের রাষ্ট্র প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যারপর নাই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানে জন্মশতবার্ষিকীকে ঘিরে বছরটিতে সারাদেশে কোটি বৃক্ষের চারা রোপনের কর্মসূচী নিয়ে সফল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তার বিপরীতে সিআরবি উদ্যানের ক্ষতি সাধন করে কোন প্রকল্প সত্যিই বিষ্ময় ও প্রশ্নের উদ্রেক আনে জনমনে।

    এটা ঠিক, এখানে গাছ না কেটে হাসপাতাল নির্মাণের অনেক স্থাপতিক সমাধান হয়তো অনেকেই দেখাতে পারবেন। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতিও ভেবে দেখা উচিৎ। প্রস্তাবিত মেডিকেল হাসপাতাল ও নার্স ট্রেইনিং সেন্টারের কার্যক্রম বহুমুখী কর্মকা-ের সমষ্টি। এটি বাস্তবায়িত হলে, এর ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃরহম ধপঃরারঃরবং হিসেবে আগত এ্যাম্বুলেন্স ও গাড়ি পার্কিংয়ের চাহিদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে, ছাত্রাবাস হবে, ষ্টাফ কোয়ার্টার হবে।

    হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ না চাইলেও সন্নিহিত এলাকায় একটি বাজার গড়ে ওঠবে। অগনিত ফার্মেসী গড়ে ওঠতে থাকবে, ক্লিনিক নির্মিত হতে থাকবে। এমনকি দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগীদের আপতকালীন অবস্থানের জন্য হোটেল, রেস্তোরা গড়ে ওঠার সম্ভাবনাও প্রবলভাবে দেখা দিবে নিস্বন্দেহে। ফলে এই এলাকায় শব্দ ও বায়ু দূষণ হবে একটি অনিবার্য পরিনতি। সিআরবি এলাকা তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বিলুপ্ত হয়ে চট্টগ্রাম শহরের মানুষের কাছে তার যে  মৌলিক গুরুত্ব রয়েছে তা হারাবে।
    প্রাকৃতিক নৈঃসর্গ চট্টগ্রামকে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য প্রদান করে, তাই চট্টগ্রাম অপরূপা। প্রকৃতির উদারতায় পাহাড়, সমতল, নদী, সমুদ্র, সবুজ বন বনানী নিয়ে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম আমাদের গর্ব, আমাদের ঐতিহ্য।

    পরিশেষে, কেবলমাত্র বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত বেসরকারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মান করতে গিয়ে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত করা, চট্টগ্রাম শহরের ফুসফুস ফুটো করে দেয়ার মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সবিনয়ে অনুরোধ জানাই।

    প্রকাশিত: রবিবার ১৮ জুলাই, ২০২১