• সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ

    নারী দিবসের ভাবনাঃ নারীদের মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়!


    এক ভাই দাবি করলেন, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. নাকি নারীদেরকে নিষেধ করেছেন মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা থেকে। তিনি বলছেন, আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. কি আপনাদের থেকে কম বুঝতেন?

    ভাই, প্রশ্নটা খুবই অজ্ঞানতাপ্রসূত। সাহাবায়ে কেরাম এর মাঝে কোন বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। আপনি আমি যেকোন একজনকে অনুসরণ করতে পারি। কারো মতকেই আমরা তাচ্ছিল্য করতে পারি না, অবজ্ঞা করতে পারি না।  যেই খলিফা হজরতে ওমর ফারুক রা. মহিলাদের মসজিদে আসা বন্ধ করেছিলেন বলে প্রচলিত আছে, সেই ওমর ফারুকের রা. স্ত্রীর নাম ছিল হজরত আতিকাহ রা.। হজরত ওমর রা. কে যেদিন পাপিষ্ঠ আবু লুলু মসজিদে আঘাত করে সেদিনও আতিকাহ রা. জামাতের সাথে নামাজ আদায় করছিলেন ওমর রা. এর পেছনে।
     
    এখন আসুন দেখি আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. কী বলেছেন। তিনি বলছেন, " যদি নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজ নারীদের অবস্থা দেখতেন তবে মসজিসে আসা থেকে তাদেরকে বারণ করতেন, যেভাবে বনি ইসরাইলের নারীদেরকে মানা করা হয়েছিল।" (বুখারী, ৮৬৯, মুসলিম ৪৪৫)
    এই হাদিসই প্রমাণ করে যে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের মসজিদে এসে উল্টোপাল্টা কাজ করতে দেখেনও নাই, বারণও করেন নাই। 

    এই হাদিস দিয়ে হারাম বা মাকরুহ কিছুই সাব্যস্ত হয় না। এতে  নারীদের জন্য আছে সতর্কবার্তা। তোমরা সাবধান হও।  যা করছ তা ভাল কাজ না। আল্লাহকে ভয় কর।  
    আর এখন নারী শপিং মলে যায়, সমস্যা নাই, স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি মাদ্রাসাতে যায়, সমস্যা নাই, চাকরি করে মিক্সড পরিবেশে, সমস্যা নাই। বাচ্চার স্কুলে ঘন্টার পর ঘন্টা গিয়ে বসে থাকে, সমস্যা নাই। বাজারে যায়, সমস্যা নাই। কেবল মসজিদে গেলেই সমস্যা হয়ে যায়। আজব কারবার।

    হজরত ওমর ফারুক রা. নারীদেরকে মসজিদে যেতে মানা করেছেন এই কথা শুনার পর তাঁরই সন্তান বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, এই অধিকার নারীদেরকে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়ে গেছেন। (বুখারী, হাদিস নং ৯০০) 
    নারীরা এখন ঘন্টার পর ঘন্টা ঘরের বাহিরে থাকে। তাই আমার অনুরোধ প্রতিটি মসজিদে, শপিং মলে, প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য আলাদা জায়গা থাকা উচিত নামাজ আদায় করার জন্য, ওজু করার জন্য। আর না হয় তাদের ওয়াক্তের পর ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়। বড় বড় শহরগুলোতে কোথাও যাওয়ার জন্য বের হলে ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে আটকে থাকতে হয়। মা ও বোনদের নামাজের সময় এভাবেই চলে যায়। 

    যদি কেউ বলেন এই সংক্রান্ত হানাফি মাজহাবের মতের কথা, তবে আমি বলব, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফিকহ বা ইসলামিক রুলিংস পরিবর্তন হয়। অনেক উদাহরণ দিতে পারব এই বিষয়ে। লেখার কলেবর বৃদ্ধি পাবে তাতে। একটা উদাহরণ দিচ্ছি শুধু। হজ্জ ও ওমরার ক্ষেত্রে মেয়েদের মাহরাম পুরুষ সাথে থাকা আবশ্যকের হুকুম সংক্রান্ত হাদিসখানাই বুখারীর অন্য হাদিস দ্বারা শিথিলযোগ্য। যেখানে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদি ইবনে হাতিম রা. কে বলছেন, "হে আদি! তুমি দীর্ঘজীবি হলে দেখতে পাবে, একজন নারী হেরা দেশ থেকে আসবে কাবা তাওয়াফ করবে (হজ্জের কাজ সমাধা করবে আবার তার দেশে ফেরত যাবে) কিন্তু সে আল্লাহ পাক ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না।" - সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৫৯৫
    এই হাদিসখানা থেকে সুস্পষ্ট যে, হজ্জ ওমরা ও সফরে মাহরাম পুরুষ নারীদের সাথে থাকা শর্ত কেবলমাত্র নারীদের নিরাপত্তাহীনতা থাকলে।

    এখন বর্তমান ওমরা ও হজ্জের সিস্টেমে ৫০-১০০ জন নারী কাফেলা করে একসাথে থাকেন। তাদের নিরাপত্তার কোন সমস্যাই হয় না। আর মিনাতে গিয়ে এমনিতেই নারী ও পুরুষের তাবু আলাদাই হয়ে যায়। কোন পুরুষ যদি তার মা, স্ত্রী ও বোন মেয়েকে একত্রে নিয়ে যান হজ্জ ওমরা করাতে তবে তাওয়াফ ও অন্যান্য কাজের সময় একাকী একজন পুরুষের পক্ষে সকল নারীকে সেইফটি প্রদান সম্ভব হয় না। আলটিমেটলি নারীদেরকে নারী কাফেলার উপরেই নির্ভর করতে হয়। কাজেই নারী কাফেলাতে নারীরা এখন মাহরাম ছাড়াই হজ্জে ওমরাতে যেতে পারেন এ ব্যাপারে অনেক আন্তর্জাতিক মুফতি চিন্তাভাবনা করছেন নতুন করে। সৌদি আরবও ওমরা ও হজ্জরত নারীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।

     
    হানাফি মাজহাবের অনুসারীদেরই বড় বড় ওয়াজ মাহফিলের পোস্টারে লেখা থাকে "নারীদের জন্য আলাদা স্থান আছে"। নারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাবলিগও করেন। শুধুমাত্র মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রেই এই কড়া পাভন্দী কেন আমার তা বুঝে আসে না। 
    যাইহোক, হ্যাঁ, অবশ্যই নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মেয়েদের জন্য তাদের অন্ধকার প্রকোষ্ঠই উত্তম নামাজ আদায়ের জন্য। তবে সাথে এটাও বলেছেন, আল্লাহর বান্দীদেরকে মসজিদে যাওয়া থেকে তোমরা বারণ করো না।  (আবু দাউদ, ৫৬৫, ৫৭০, ৫৬৭, বুখারি, ৯০০, মুসলিম ৪৪২)
    বরং হাদিস শরিফে এসেছে, সালিমের পিতা ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
    তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কারো স্ত্রী মসজিদে যাবার অনুমতি চাইলে তাকে নিষেধ করো না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৫৮)
    সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫২৩৮
    কাজেই ভারসাম্যপূর্ণ কথা বলা উচিত। 

    আমি আফগান তালিবান নারী নীতিতে বিশ্বাস করি না, সরি। আফগান তালিবান নারী নীতি হচ্ছে নারীদেরকে ঘরের ভেতরে রেখে দম বন্ধ করে ফেল। ঘর থেকে বের হতে দিও না। নারীরা ভিক্ষা করুক, কিন্তু চাকরি করতে পারবে না৷ নারীদের স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি মাদ্রাসাতে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। কী ফালতু মনমানসিকতা একবিংশ শতাব্দীতে এসে। এগুলো ইসলাম নয়, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার শিক্ষা নয়। এগুলো নারীর উপর অত্যাচার। 
    প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার পেছনে নারীরা সরাসরি নামাজ আদায় করতেন। প্রথম কাতারে পুরুষ, দ্বিতীয় কাতারে শিশু ও শেষ কাতারে থাকতেন নারীরা। এমনকি নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মেয়েরা যেন একটু দেরীতে সেজদা থেকে মাথা তুলেন। কারণ সাহাবায়ে কেরাম বেশিরভাগ ছিলেন গরিব। তাঁদের নিম্নাঙ্গে কাপড় থাকত কম। পুরুষদের আগে নারীরা মাথা তুললে হয়ত নারীরা পুরুষ সাহাবাদের লজ্জাস্থান দেখতে পাবেন। এজন্য পুরুষ সাহাবারা বসে গেলে পরে বা দাঁড়িয়ে পড়লে পরে নারীরা মাথা যেন সেজদা থেকে তুলেন সেই আদেশ দিয়েছেন। তবুও নারীদেরকে মসজিদে যাওয়া থেকে মানা করেন নাই।  কেবলা পরিবর্তনের আয়াত যখন নাজিল হয় তখনও নারীরা শেষ কাতারে নামাজ আদায় করছিলেন। 

    ভাই,  আমরা প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার যুগের  সেরকম সিস্টেমও চাচ্ছি না। কিন্তু একটু সেপারেট জায়গা কি আল্লাহর বান্দী নারীদেরকে আল্লাহর ঘর মসজিদে দেয়া যায় না?---- সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী--


    প্রকাশিত: বুধবার ০৯ মার্চ, ২০২১