• সর্বশেষ আপডেট

    ময়মনসিংহের নান্দাইলে অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি আইনের তোয়াক্কা করছে না ভাটা মালিকরা

    ময়মনসিংহের নান্দাইলে অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি

    ময়মনসিংহ থেকে, মোঃ ফজলুল হক ভুঁইয়াঃ- ময়মনসিংহে নান্দাইল উপজেলায় অবৈধ ইট ভাটার ছড়াছড়ি।পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে এসব ইটভাটা চালিয়ে আসছে ভাটা মালিকরা। ঝিকঝাক চিমনী ছাড়াই ক্ষতিকর চিমনী দিয়ে ভাটা চালিয়ে আসছে। কৃষি জমি রক্ষার্থে ইটভাটা স্থাপনে আইন করে জায়গা সীমাবদ্ধ করে দিলেও নান্দাইলে লোকালয় ও ফসলি জমিতে গ্রামগঞ্জে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। উর্বর জমিতে ইটভাটা তৈরীর ফলে উপজেলার সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।

    তাদের মতে, বেশীর ভাগ ইটভাটার আশপাশের কৃষি জমির উপরিস্তরের মাটি দিয়ে ইট তৈরী করা হয় বলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু নান্দাইল উপজেলায় ইটভাটার মালিকরা বছরের পর বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের কেনো ছাড়পত্র ছাড়াই অদৃশ্য শক্তির বলে সম্পুর্ণ অবৈধ ভাবে  ইট ভাটা চালিয়ে আসছে। উপজেলা প্রত্যান্ত অঞ্চলের অনেক ইটভাটার মালিকরা কয়লার পরিবর্তে জ্বালানী হিসাবে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন বনজ সস্পদ ধ্বংস হচ্ছে অপরদিকে ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির সস্মুখীন হয়ে পড়েছে।

    এছাড়া ঝিকঝাক চিমনি ব্যবহার না করে পরিবেশের ক্ষতিকর চিমনি ব্যবহার করায় ইটভাটা থেকে নির্গত  কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইড সহ বিভিন্ন ধরনের কালো ধোঁয়া বাতাসে মিশে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি সাধন করে চলেছে বলে পরিবেশবাদীরা দাবী করেন।  নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কার্ষ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলা ২০টি ইটভাটা চালু রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর অফিস সুত্রে জানা গেছে নান্দাইল উপজেলার মাত্র ২ টি ইটভাটার ছাপত্র রয়েছে।

    বাকি ইট ভাটাগুলো পরিবেশ  অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র চালানো হচ্ছে। এক অদৃশ্য কারণে স্থানীয় প্রশাসনকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে দেখা যায় না। যা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ইট পোড়ানো আইনে যা আছে  সরকারীভাবে কোনো ইটভাটায় এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ইট পোড়ানোর অনুমোদন থাকলেও  নান্দাইলে ইটভাটাগুলোতে ২০ থেকে ৪০ লাখ ইট পোড়ানো হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফলে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মে মাস পর্ষন্ত ৬ মাসে একটি ইটভাটায় ৩০ লাখ ইট পোড়ানোর জন্য দেড় হাজার টন কাঠ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

    ইট ভাটা স্থাপন আইনে যা আছে ঃ ১৯৯০ সালের ২৫ জুলাই ভূমি মন্ত্রনালয় দেশব্যাপী জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রত্যেক জেলা প্রশাসন ইটভাটা নিমার্ণের আবেদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করে অনুর্বর অকৃষি জমিতে ইটভাটা নিমার্ণের অনুমোদন দেবেন। যত্রতত্র ইটভাটা না হয়ে ইটভাটা হবে নদীর তীর অথবা বিশেষ কোনো এলাকার সর্বোচ্চ দেড় একর জায়গার ওপর। ১৯৮৯ সালের ১ জুলাই থেকে কার্ষকর হওয়া ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনানুযায়ী ইট পোড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসক বরাবর দরখাস্ত পেশ করে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ ইট পোড়াতে পারবে না। এ আইনটির ধারা ৫-এ বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি ইট পোড়ানোর জন্য জ্বালানী ব্যবহার করতে পারবে না। এ আইনের কোন ধারা লঙ্ঘন হচ্ছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসক অথবা তার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই ইটভাটা পরিদর্শন করতে পারবেন। আইন লঙ্ঘনকৃত ইটভাটার সব ইট এবং জ্বালানী আটক করতে পারবেন। পরে বনজ সস্পদ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকার ১৮৯৯ সালে এক অধ্যাদেশ জারি করে ইট ভাটায় কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোঘণা করেছেন। আবার এ আইন ১৯৯১ সালের সংশোধনী করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বলা হয়েছে, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর অপরাধে ৩ বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে। 
     
    নান্দাইলে ইটভাটার মালিকরা সহজ সরল কৃষকদের বুঝিয়ে অর্থের লোভ দেখিয়ে এবং ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি নিতে রাজি করিয়ে থাকে। এছাড়া ইটভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অরন্যপাশা গ্রামের এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চন্ডিপাশা,গাঙ্গাইল মুশুলি ইউনিয়নের কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা থাকার কারণে  এলাকার ফসলি জমি ব্যাপকহারে বিনষ্ট  হচ্ছে। সাথে সাথে স্থানীয়ভাবে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি সাধন হচ্ছে।

    এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ এরশাদ উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান আমার অফিসে এসংক্রান্ত জনগণ থেকে অভিযোগ  জমা পড়েছে আমি তা পরিবেশ অধিদপ্তের জেলা অফিসে প্রেরণ করেছি। স্থানীয়রা অবৈধ উটভাটা বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।

    প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২১