• সর্বশেষ আপডেট

    ময়মনসিংহে পিবিআইয়ের অভিযানে শিশু জান্নাতুল হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন- বাবা ও মা গ্রেফতার

    মোঃ ফজলুল হক ভুঁইয়া, ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ- জান্নাতুলকে মায়ের গর্ভে থাকাবস্থায় মারা যান বাবা। এই শিশুকে নিয়েই নতুন সংসার করেন মা আকলিমা। সে সংসারে উচ্ছিষ্ট হয় জান্নাতুল। মেয়েকে সহ্য করতে না পেরে গলাটিপে হত্যা করেন সৎ বাবা বাবুল মিয়া। জান্নাতের মা সেই দৃশ্য দেখে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টাও করে কিন্তু ব্যর্থ হয়ে মেয়ের লাশ নিজেই রেললাইনের পাশে ফেলে চলে যান সৎ বাবা ও মা। জান্নাতুল হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৬ মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে ময়মনসিংহ পিবিআই।

    মা ও সৎ বাবা শুক্রবার হত্যাকান্ডে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে। লোমহর্ষক এ ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে।

    শুক্রবার পিবিআই ময়মনসিংহ জানায়,  জন্নাতুল মায়ের পেটে থাকতেই প্রায় তিন বছর আগে বাবা আতিকুল ইসলাম (৪০) মারা যান। জান্নাতুল জন্মের কিছুদিন পরেই মা আকলিমা খাতুন (৩৫) আবারো বিয়ে করেন গৌরীপুরের কোনাবাড়ির বাবুল মিয়ার সাথে। বাবুলের তৃতীয় স্ত্রী আকলিমা। আকলিমা ও বাবুল দু’জনই শ্রমিক হিসেবে কখনও গাজীপুর, কখনও নারায়নগঞ্জে কাজ করেন।

    এদিকে আকলিমাকে বিয়ে করলেও তার শিশু কন্যাকে সহ্য করতে পারতেন না বাবুল। অবুঝ ছোট্ট জান্নাতুলকে মারধর করতেন তিনি। করোনার প্রাদুর্ভাবে বাইরে কাজ না থাকায় বাবুল মিয়া স্ত্রীকে নিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। গত ১৮ মার্চ সকালে বাজার থেকে বাড়িতে ফিরে সৎ বাবা বাবুল শিশু কন্যা জান্নাতুলকে বারান্দায় একা পান। শিশুটিকে বরান্দায় বসিয়ে রেখে বাড়ির পেছনে লাকড়ি আনতে যান। শিশুটি কান্নাকাটি করতে থাকায় চরথাপ্পর দিয়ে এক পর্যায়ে গলাটিপে ধরেন।

    মেয়ের কান্না শুনে মা আকলিমা দৌঁড়ে বাড়িতে এসে দেখেন তার মেয়ে ছটফট করছে। ওই সময় শিশুটিকে বারান্দা থেকে উঠানে ফেলে দেন বাবুল। জান্নাতের প্রাণ ফেরাতে মা অনেক চেষ্টা করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে এবং গ্রামে ফিরলে খুনের রহস্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে এই ভেবে লাশ গুম করার পরিকল্পনা শুরু করেন মা ও সৎ বাবা। বাড়িওয়ালাপাড়া এলাকায় বাবুলের এক বোনের বাড়িতে শিশুটির লাশ নিয়ে যায় তারা। পরে সেখান থেকে গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের ২ নম্বর গেটের কাছে নিয়ে রাতে লাশ রেললাইনের পাশে ফেলে চলে যান গাজীপুরের টঙ্গীতে। 

    পিবিআই আরো জানায়, রেললাইনের পাশে কাপড় মোড়ানো লাশ পেয়ে গৌরীপুর পুলিশ উদ্ধার করে ১৯ মার্চ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তে শিশুটিকে হত্যার আলামত পায়। এ ঘটনায় গৌরীপুর থানার এসআই উজ্জ্বল মিয়া বাদি হয়ে ১৭ আগস্ট গৌরীপুর হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ দেড়মাস তদন্তের পর পুলিশ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তভার গ্রহণ করে। পিবিআই প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি বাবুল মিয়া ও শিশুটির মা আকলিমা খাতুনকে বৃহস্পতিবার টঙ্গী থেকে গ্রেফতার করে।

    গ্রেফতারকৃতরা সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় বলে পুলিশ জানায়। শুক্রবার তাদেরকে আদালতে পাঠানো হলে স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দি দেয়। 

    মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আবুল কাশেম জানান, শিশুটিকে সহ্য করতে পারতেন না সৎ বাবা। সে কারণেই হত্যা করেন। আর লাশটি গুম করতে সহায়তা করেন শিশুটিরই মা। ঘটনার প্রায় ৬ মাস পর রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

    প্রকাশিত: শনিবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২০