• সর্বশেষ আপডেট

    কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে নামাজী যুবককে পুড়িয়ে মারা হল!


    দিগন্ত ডেস্কঃ কোরআন শরীফ অবমাননার গুজবে কান দিয়ে যে যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই শহিদুন্নবী জুয়েল আসলে অত্যন্ত ধার্মিক ও সহজ-সরল ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় এবং নিয়মিত কোরআন-হাদিস পাঠ করতেন।

    শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রংপুর নগরীর শালবনে তার বাসভবনে সরেজমিনে গিয়ে  পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জানা গেছে। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব থেকে জুয়েলকে হত্যা করে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

    শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণি এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক ছিলেন। তার বড় মেয়ে জেবা তাসনিম এবার এইসএসসি পাস করেছে। ছেলে তাশিকুল ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

    শুক্রবার সকালে শালবনে তার বাসভবনে গিয়ে দেখা যায়, খবর পেয়ে এলাকাবাসীসহ আত্মীয়-স্বজনরা ছুটে এসেছেন। পরিবারের স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে ভারী হয়ে আছে পরিবেশ।

    স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে চাকরি চলে যাওয়ায় তার একমাত্র উপার্জনপথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতেন নিয়মিত।

    তার বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেকটি ঘরে পবিত্র কোরআন, হাদিসসহ ইসলামিক বিভিন্ন বই। ঘরের আলমারি ও দেয়ালে ঝুলছে ইসলামিক বিভিন্ন নিদর্শন ও দোয়ার ছবি। তার স্ত্রী হাতে তসবিহ নিয়েই আহাজারি করছেন। স্বজনরা তাকে শান্তনা দিচ্ছেন।

    জুয়েলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার মুক্তা আহাজারি করতে করতে বলেন, আমার স্বামী অনেক সহজ-সরল ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, কোরআন-হাদিস পড়তো। প্রত্যেক বছরই তিন-চারবার করে কোরআন খতম দিতো। করোনা ভাইরাসের সময় কয়েকবার কোরআন খতম দিয়েছে। আগামী বছর আমাকে নিয়ে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমি বিশ্বাস করি না সে কোনোভাবেই কোরআন অবমাননা করতে পারে। যারা গুজব ছড়িয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।

    তার বোন হাছনা আক্তার নিতি  বলেন, ২০১৬ সালে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ রংপুরের গ্রন্থাগারিক পদে ষড়যন্ত্র করে জুয়েলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য করা হয়। এতে প্রচণ্ড রকমের মানসিক ধাক্কা পায়। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনযোগ দেয়। সে নিয়মিত কোরআন-হাদিসসহ ইসলামিক বই পড়তো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতো।

    অনেক সময় আসরের নামাজ পড়ে মসজিদেই কোরআন-হাদিস পড়ে এরপর মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় ফিরতো। সে কোনোভাবেই কোরআন অবমাননা করতে পারে না। যারা গুজব ছড়িয়ে তাকে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি চাই। আমি শুনেছি তার বন্ধুসহ ওষুধ আনতে গিয়ে বুড়িমারীতে মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে সেখানের ওয়ালের তাকে রাখা কোরআন নিতে যায়। এ সময় অসাবধানতাবশত কোরআন ও হাদিসের বই পায়ের কাছে পড়ে যায়। এটা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ’

    জুয়েলের বন্ধু রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পি বলেন, আমরা প্রায় ৪০ বছর ধরে একই এলাকায় থাকি। ছোটবেলা থেকে তাকে চিনি। একসঙ্গে খেলাধুলাসহ নানা কাজ করতাম। সে আমাকে সবসময় তার বিষয়গুলো জানাতো। নামাজের সময় হলে সে নামাজের জন্য ছুটে যেত। আশপাশের লোকজনকেও নামাজের জন্য ডাকতো। ষড়যন্ত্রে চাকরিটা চলে যাওয়ার পর সে অনেকটা ভেঙে পড়েছিল। ফলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মনোনিবেশ করেছিল।

    স্থানীয় এলাকাবাসী ও স্বজনরা এভাবে গুজব ছড়িয়ে নৃশংসভাবে জুয়েলকে হত্যার জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি করছেন। শুক্রবার বিকেলে হত্যার প্রতিবাদে এলাকাবাসী রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধনের আয়োজন করেছেন।

    প্রকাশিত:  শক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০