• সর্বশেষ আপডেট

    পুলিশের উপর সন্ত্রাসী হামলা! অস্ত্র ছিনতাই! নারীসহ ছয় হামলাকারী আটক।


    মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গাজীপুরঃ- গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের নােয়াপাড়া এলাকায় শুক্রবার রাতে জিম্মী ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করতে গিয়ে জনতার হামলায় দুই পুলিশ ও এক আনসার সদস্য ছাড়াও আদম ব্যবসায়িসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। এসময় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অস্র ও গুলি ছিনিয়ের নেয়ারও অভিযােগ করেছে পুলিশ। পরে অভিযান চালিয়ে পাঁচ হামলাকারীকে আটক এবং অস্ত্র - গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

    আটককৃতরা হলেন, শেরপুর জেলার কালিগঞ্জের দমদমা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের মেয়ে রুশমি আরা, শ্রীপুর উপজেলার নােয়াগাঁও গ্রামের নাজমুল হােসেন রকির স্ত্রী মনিশা মনি, একই উপজেলার দিঘিপাড়া নয়নপুর গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ, নড়াইল জেলার লােহাগড়া উপজেলার লাফুয়া গ্রামের জাফর মােল্ল্যার ছেলে তাজুল ইসলাম মােল্ল্যা ও ভােলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ গ্রামের সােলাইমানের ছেলে আব্দুর রহমান।

    হামলার শিকার কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার নবিয়া গ্রামের আবুল হােসেন জানান, তিনি ঢাকার পুরানাে পল্টন এলাকার 'রাখা ইন্টারন্যাশনাল'এর মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।

    লাইসেন্সধারী এ প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে লােক পাঠানাে হয়। এবছরের ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি নােয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হােসেন ও শাহদত হােসেন নামের দুইজনকে দুবাই পাঠানাে জন্য তাদের কাছ থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয়া হয়। তাদের কাগজপত্র প্রক্রিয়া করতে গিয়ে করােনাকালীণ লকডাউনে পড়ে যান তারা।এতে করে তাদের আর বিদেশ পাঠানাে সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় ইসমাইল হােসেন তাদের জমা দেয়া টাকা ফেরত দিতে বলেন। 
    পরে এপ্রিলে ইসমাইলকে ৫০ হাজার টাকা বিকাশ করে ফেরত পাঠানাে হয়। পরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফোন করে ইসমাইল আমাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাওয়াত দেন এবং আরাে লােকজনকে বিদেশ পাঠানাের জন্য আলােচনা করার প্রস্তাব দেন।

    দাওয়াত পেয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার)  বিকেলে তিনি ( আবুল হােসেন ও তার অপর বন্ধু মােঃ ফয়সাল আহমেদকে নিয়ে শ্রীপুরের নােয়াপাড়া ইসমাইলের বাসায় যাই।
     
    পরে ইসমাইল তার ঘরের ভেতর আমাদের খাওয়া দাওয়া সেরে দরজা আটকে দিয়ে তার স্ত্রী শারমিন আক্তার রিমা ও শ্বশুর - শাশুড়িসহ কয়েকজন নানা ভয় - ভীতি দেখিয়ে একটি সাদা স্টাম্পে আমার স্বাক্ষর নেয় এবং আমার সঙ্গে থাকা দুইটি মােবাইল ফোন নিয়ে যায়। পরে ওই স্ট্যাম্পে ইসমাইল আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা পাবেন বলে লিখে এনে আমাকে ওইদিনই পাঁচ লক্ষ টাকা পরিশােধ করার জন্য চাপ দেয়। 

    বিষয়টি জানিয়ে আমার সহকর্মী মােঃ ফয়সালকে খবর দিলে পরদিন শুক্রবার রাত ৮ টায় ফয়সাল, তার বন্ধু ওমর বেপারী, মােঃ কালাম ও মাসুমকে সঙ্গে নিয়ে ইসমাইলের বাড়িতে আসে। মাসুম ছাড়া অন্যরা ওই ঘরে ঢুকেন। তারপর ঘরের দরজা আটকে স্ট্যাম্প দেখিয়ে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে ইসমাইল ও তার লােকজন। একপর্যায়ে টাকা না পেয়ে তাদের উপর হামলা করে। মাসুম বাইরে থেকে টের পেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানায়। 

    শ্রীপুর থানার ওসি খন্দোকার ইমাম হােসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে শ্রীপুর থানার টহল পুলিশের এসআই মােঃ রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল খােরশেদ আলম ও এক অনসার সদস্য ইসমাইলের বাড়িতে যান। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ইসমাইল ও তার লােকজন অতর্কিত পুলিশের উপর হামলা চালায় এবং পুলিশের সঙ্গে থাকা শর্টগান ও পিস্তলের গুলিভর্তি ম্যাগজিন ছিনিয়ে নেয়।

    পরে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুই মহিলাসহ ৫ জনকে আটক এবং অস্ত্র - গুলি উদ্ধার করা হয়। আহত পুলিশকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানায় মারামারি ও অস্ত্র আইনে দুইটি মামলা হয়েছে। মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরাে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মূল হামলাকারী ইসমাইলসহ অন্যরা পলাতক রয়েছে।

    প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০