• সর্বশেষ আপডেট

    জোয়ারের পানির তীব্রতায় ভাসছে১০/১৫টি গ্রাম, হুমকির মুখে বিভিন্ন পয়েন্টের বেড়িবাঁধগুলো

    রাসেল কবির মুরাদ, কলাপাড়া-পটুয়াখালীঃ- কলাপাড়াসহ  সমগ্র  দক্ষিনাঞ্চলে  আবহাওয়ার বৈরীতা, জলোচ্ছাস,পানির তীব্রতা, উল্টো স্রোত কোনটিই কমার যেনো কোন লক্ষননেই। মনি আমাবস্যা ও লাগাতার বর্ষায় জোয়ারের পানিতে শুধুইভাসছে গ্রাম থেকে গ্রাম। সাগর,  নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধিপেয়ে  লালুয়া  ইউনিয়নের  অন্তত:  ১২টি  গ্রাম  তলিয়ে  গেছে।জোয়ারের পনিতে ডুবে গেছে বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়স্থল। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রতিনিয়তই দফায় দফায় পানিপ্রবেশ করে  তলিয়ে গেছে ফসল, জমি ও মাছের  ঘের। মানবেতরজীবনযাপন করছে স্থানীয়  মানুষজন।

    এসব  গ্রামের  অধিকাংশমানুষই এখন অনেকটা জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।মহিপুরের  নিজামপুর  পয়েন্টের  বাঁধটি  এখন  রয়েছে  চরম  হুমকীরমুখে।  জোয়ারের  পানির  তীব্রতায়  যে  কোন  মুহুর্তে  বাঁধটিছুটে ৫টি গ্রাম তলিয়ে যেতে পারে আশংকাা স্থানীয়দের।

    সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অমাবস্যার প্রভাবে  লালুয়াইউনিয়নের বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারেরপানি  ঢুকে মুহুর্তের মধ্যে প্রামের পর  গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। বানভাসী অসহায়  মানুষগুলোর চোখে-মুখে চরম অনিশ্চয়তাল ছাপ, হারাম হয়ে গেছে তাদের ঘুম। অস্বাভাবিক স্রোতের টানে মানুষভেসে বেড়ালেও তাদের আর্তনাদ কেউ শুনছে না। দেখা দিয়েছে চরমখাদ্য সংকট। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামেরযোগাযোগ ।

    তদুপুরিও উদ্যেগ নেয়নি কেউ ভেঙে যাওয়া বাঁধসংস্কারের ।স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, কয়েক দিন ধরে লালুয়ার চারিপাড়া বেড়িবাঁধের  ভেঙে  যাওয়া  অংশ  দিয়ে  রাবনাবাদ  নদীর  জোয়ারেরপানি প্রবেশ করে চারিপাড়া, পশরবুনিয়া, ধঞ্জুপাড়া ও নয়াপাড়াসহ১২/ ১৩ টি গ্রাম প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে।

     এসব গ্রামেরমানুষ  পানিবন্দী  হয়ে  পড়েছে।  ঘর-বাড়ীতে  পানি  ঢুকে  পড়ায়অনেকেই  বাঁচার  আশায়  উচুঁস্থানে  আশ্রয়  নিয়েছে।  দেখাদিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট, গরু কিংবা ছাগলের মালিকদের পড়তেহয়েছে  চরম  বিপাকে।  অন্যদিকে  মহিপুরের  নিজামপুর  বাঁধটিঝুঁকিপূর্ন থাকায় জোয়ারের পানির চাঁপে যেকোন মুহুর্তেছুটে কমরপুর, সুদিরপার, পুরান মহিপুর, ইউসুবপুর ও নিজামপুরগ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা করেছে স্থানীয়রা। এছাড়া ধানখালীরদেবপুর বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি তান্ডবলীলায় মত্ত।

     নিজামপুর গ্রামে বাসিন্দা মো.নুরজামান হাওলাদার বলেন, ২০০৭সালে  ঘুনিঝড়  সিডরের  আঘাতে  ভেঙে  যায়  নিজামপুর  ওসুদিরপুরের  বেরিবাঁধ। এরপর  কয়েক দফা পনিউন্নয়ন  বোর্ডঅপরিকল্পিত ভাবে বর্ষা মৌসুমে নির্মান কাজ করলেও তা টেকসইনা  হওয়ায়  এ  বাঁধটি  ফের  ভাঙন  শুরু  হয়েছে। কৃষক  ইসহাকহাওলাদার বলেন, লবন পানিতে ক্ষেত খামার তলিয়ে রয়েছে। চাষাবাদও বন্ধরয়েছে।পানি বৃদ্ধি পেলে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ে।

    বিশেষ করে অমাবশ্যাকিংবা পূর্নিমার জোয়ারের সময়ই এসমস্যা প্রকট আকার ধারনকরে। লালুয়ার চারিপাড়া গ্রামের পানিবন্ধি আয়েশা জানান, জোয়ার-ভাটাতে  পানিতে মোগো  সব ডুইব্বা  গ্যাছে।  নদীতে  পানিবাড়লেই  মোগো  নাওয়া-খাওয়া  ঘুম  হারাম  হইয়া  যায়।  মোগোবিপদের কোন শেষ থাকে না, দুইদিন ধরে চুলায় হাড়ি দেওয়া হয়নিবলে জানান তিনি। বিধবা আছিয়া বেগম জানান, প্রতিনিয়তই পানি বাড়ায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে ও নাতী-নাতনী নিয়ে মাচারউপরে বসে থাকি একটু বেঁচে থাকার আশায়।

    লালুয়া  ইউনিয়ন  পরিষদ  চেয়ারম্যান  মো  শওকত  হোসেন  তপনবিশ্বাস বলেন, এ বাঁধের বিষয় নিয়ে বহুবার সংশ্লিষ্ট ও বিভিন্নদপ্তরে  জানানো  হয়েছে,  কিন্তু  কিছুই  হয়নি, অথচ অমাবস্যা-পূর্নিমার জোবা হলেই এ ইউনিয়নের ১২/১৩ টি গ্রামের মানুষথাকে  সবচাইতে  বেশী  দূর্ভোগে। লালুয়ার এসব  বানভাসী মানুষের  দূর্ভোগ  কাটাতে  তিনি  স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

    মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আকন বলেন,নির্মান কাজ শেষ হওয়ার এক বছর না যেতেই নিজামপুর বাঁধেরভাঙন  শুরু  হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এ ব্যয়বহুল বেরিবাঁধটি রক্ষা করা সম্ভব নয়। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরথেকেই দুই কিলোমিটার বেরিবাঁধটি পূর্ন নির্মানের জন্যমন্ত্রী, এমপি ও পনি উন্নয়ন বের্ডের দপ্তরে দৌড়ঝাপ করতে করতেকরতে আমার মেয়াদ শেষের দিকে, কিন্তু কোনই সুফল পাইনি। তাইএলাকার  জনগনের  স্বার্থে  তিনিও  প্রধানমন্ত্রীর  হস্তক্ষেপ  কামনাকরেন। 

    কলাপাড়া উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীখান  মোহাম্মদ  ওয়ালীউজ্জামান  বলেন,  লালুয়া  ও  মহিপুরের  বেরিবাঁধের  প্রকল্প  মন্ত্রনালয়  পাঠানো  হয়েছে।  মন্ত্রনালয়  থেকে  জরুরীভিক্তিতে কোন প্রকল্প দেয়া হলে অতিদ্রুত কাজ শুরু করা সম্ভব বলেতিনি সাংবাদিকদের জানান।

    প্রকাশিত: রবিবার ২৩, অগাস্ট ২০২০