পাইকগাছায় টানা কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে নার্সারি ব্যাবসায় ধব্স
ইমদাদুল হক, পাইকগাছা-খুলনাঃ- পাইকগাছায় টানা কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে নার্সারি মালিকরা পড়েছেন বেকায়দায়। নার্সারি বাগান গুলোতে বৃষ্টির পানি জমে মারা যাচ্ছে গাছের চারা। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছোট-বড় নার্সারি মালিকরা। পাইকগাছা উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৫ শতাধিত নার্সারী গড়ে উঠেছে। যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যা রয়েছে গদাইপুর গ্রামে। মৌসুম শুরুতে চারা তৈরীর জন্য নার্সারী মালিক ও কর্মচারীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠে।
বর্ষা শুরু হলে গুটি কলম তৈরী করা হয়। গুটি কলম তৈরী করতে গাছের ডালের দুই ইঞ্চি মত ছাল পুরাটা গোল করে কেঁটে ফেলে জৈব সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে কাঁটা অংশ ভাল করে বেঁধে রাখে। ১ মাসের মধ্যেই মাটির ভিতর থেকে শিকড় বেড় হয়। পেয়ারা, লেবু, জলপাই সহ বিভিন্ন গাছে গুটি কলম তৈরী করা হয়। জোড় কলম তৈরী করতে গাছের ডালের সঙ্গে গাছের ডাল জোড়া লাগিয়ে জোড় কলম তৈরী করা হয়। তেজপাতার সঙ্গে কাবাবচিনি, আমের সঙ্গে আম, ছবেদার সঙ্গে খিরখেজুর, আতা সঙ্গে দেশী আতা জোড় দিয়ে জোড় কলম তৈরী করা হয়। কাঁটা জাতীয় কুল সহ বিভিন্ন ফলের চারা চোখ বসিয়ে বাডিং কলম তৈরী করা হয় এবং ফুল জাতীয় গাছের ডাল কেঁটে সরাসরি মাটিতে পুতে কমল তৈরী করা হয়।
গদাইপুর এলাকার তৈরী কলম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়। বর্ষা মৌসুমে চারা উৎপাদন ও রোপনের সঠিক সময়।কিন্তু চলতি মৌসুমে অ-স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারনে নার্সারি গুলোতে চারা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেকেই এনজিও থেকে ঋন নিয়ে নার্সারি ব্যাবসা করেছেন। অ-স্বাভাবিক বৃষ্টির কারনে চারা পচে মারা যাচ্ছে যার ফলে ঋনগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। নার্সারি মালিক শ্যামনগর গ্রামের জিয়াউর রহমান বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে কুল,পেয়ারা, লেবুসহ বিভিন্ন কলম তৈরী করেছি।কিন্ত বৃষ্টির জন্য ক্ষেতে পানি জমে আমার অনেক চারা নষ্ট হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান,পাইকগাছার নার্সারী শিল্প খুলনা জেলা শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। এ বছর অধিক বৃষ্টির কারনে নার্সারী ব্যবসায়ীরা চারা উৎপাদন ও বিক্রি করার আশানারূপ বাজার ধরতে না পারায় তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সে জন্য কৃষি অফিস থেকে নার্সারি মালিকদের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রেখে চারা উৎপাদনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
পাইকগাছায় বৃষ্টির পানিতে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ পানিতে নিমজ্জিত
খুুলনার পাইকগাছার কপোতাক্ষী মাধ্যমিক ও শাহাপড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ বর্ষার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা না থাকায় দুটি বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ এলাকা কমলমতি শিশুরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কয়েকবার কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানালেও কোন ফল হয়নি। এলাকাবাসী মাঠটি ভরাট করে জলমগ্নতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নে অবস্থিত কপোতাক্ষী মাধ্যমিক ও শাহাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠান দুটির সামনে রয়েছে ৫ বিঘা আয়তনের খেলার মাঠ। বর্ষা মৌসুমে মাঠটি পানিতে তলিয়ে থাকে। যা নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যালয় দুটির ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ও এলাকার কমলমতি শিশুরা সকল খেলাধুলা ও বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, দীর্ঘ ৬-৭ বছর যাবৎ এ অবস্থা সৃষ্টি হলেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি। বিদ্যালয় দুটির দুপার্শ্বে পাকা রাস্তা অন্য পার্শ্বে বসতি ও মৎস্য ঘের থাকায় পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও বৃষ্টির পানিতে মাঠে হাটু পানি জমে আছে। এ পানিতে বিদ্যালয়ের পাশের ছেলে মেয়েরা খেলাধুলা করছে।
অভিভাবক আজিজুর রহমান লাল্টু বলেন, মাঠটি ভরাট করা না হলে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার মানসিকতা হারিয়ে ফেলবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুস ছালাম খান বলেন, কয়েক বছর ধরে মাটি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বরাবর কয়েকবার লিখিত আবেদন করলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সরদার রুহুল আমীন বলেন, ৬/৭ বছর ধরে বর্ষাকালে মাঠটি পানিতে তলিয়ে থাকে। স্বভাবিকভাবে শুকাতে কয়েক মাস লাগে। ফলে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।