• সর্বশেষ আপডেট

    অভিন্ন নামে দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়, সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি বশেমুরবিপ্রবি'র ২৩ সংগঠনের

    জয়নাল আবেদীন জিহান, বশেমুরবিপ্রবিঃ- একই নামে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করার দাবি জানিয়ে যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ২৩টি স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক সংগঠন।

    সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বৃত্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সচিব সৈয়দ আলী রেজা স্বাক্ষরিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পিরোজপুর আইন, ২০২০ এর খসড়ার ওপর মতামত আহ্বানের একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এই বিবৃতি প্রদান করেছে সংগঠনগুলো।

    বিবৃতি প্রদানকারী সংগঠনগুলো হলো- বশেমুরবিপ্রবি প্রেসক্লাব, বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক ফোরাম, বশেমুরবিপ্রবি রিপোর্টার্স ইউনিটি, কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ, পোল্ট্রি প্রফেশনাল'স বাংলাদেশ, বশেমুরবিপ্রবি সাহিত্য সংসদ, যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরাম, বিডি ক্লিন, ইয়াস বাংলাদেশ, এগারজন-বশেমুরবিপ্রবি, রাইজিং বিডি রাইটার্স ফোরাম, আত্মার বাঁধনে সমৃদ্ধি (আবাস), আই+ওয়ান সোস্যাল সার্ভিসেস ক্লাব, গ্রীন ভয়েস, বাঁধন, আলোক ভেলা, বশেমুরবিপ্রবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, বশেমুরবিপ্রবি ফিল্ম সোসাইটি, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বশেমুরবিপ্রবি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার কাউন্সিল, আমি পাঠক, বশেমুরবিপ্রবি শিল্প ও সাহিত্য সংঘ এবং ইকো নেটওয়ার্ক।


    বিবৃতিতে বলা হয়, "যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক জানাচ্ছি যে, আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ টি স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক ও সাংবাদিক সংগঠন। আমরা জানতে পেরেছি, গত ২০১৯ সালের ২ জুলাই তারিখে স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম পিরোজপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদনের প্রেক্ষিতে সেবছরই ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যৌক্তিকতা জানতে চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠান।

    একই বছরেরই ১৫ ই সেপ্টেম্বর মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানায়। সর্বশেষ এবছর ২০২০ ইং সালের ১৬ই জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব সৈয়দ আলী রেজার স্বাক্ষরিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

    তাতে দেখা যায়, পিরোজপুরের বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।" খসড়া আইনটির ওপর ১০ দিনের মধ্যে মতামতও চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও মাননীয় মন্ত্রী জনাব শ. ম. রেজাউল করিমের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন প্রণয়নের পর্যায়ে বলে জানানো হয়েছে।

    কিন্তু আমরা জানাতে চাই যে, গোপালগঞ্জে ইতোমধ্যেই রয়েছে হুবহু "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়" নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাই ২০০১ সালে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমিতে তাঁরই নামে স্থাপিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স প্রায় দুই দশক হলো। বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে আসন সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম, ৩৪ টি বিভাগে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ এই বিশ্ববিদ্যালয়।

    মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির পিতা। তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক হতেই পারে। বর্তমানে তাঁর নামে মেডিকেল, কৃষি, মেরিটাইম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, এভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস, ডিজিটাল ও একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বমোট মোট ৭ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় নামে আরও একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের কাজ চলছে।

    তবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জাতির জনকের নামে হলেও প্রতিটি নাম স্পষ্টভাবে স্বতন্ত্র ও একটি অপরটি থেকে আলাদা। কিন্তু পিরোজপুরে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম হুবহু গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামেই প্রস্তাব করা হয়েছে।

    আমরা মনে করি একই নামে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে পরিচয় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, সুতরাং নামকরণের বিভ্রান্তি হবে এমনটা হওয়া কাম্য নয়। পৃথিবীর কোনদেশে হুবহু অভিন্ন নামে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে বলে আমাদের জানা নাই।

    আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে, হুবহু নামে পার্শ্ববর্তী জেলায় মাত্র ৪৮ কি.মি. দূরত্বে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে, দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করতে গিয়ে প্রয়োজনের তাগিদে স্থানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করবে। তখন জাতির জনকের নাম মৌখিকভাবে বিলীন হবে এবং স্থানের নামেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় বিস্তার লাভ করবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণে বিশেষ কোনো স্বার্থকতাই থাকবেনা।

    আলোচিত, পিরোজপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবনা পর্যায়ে রয়েছে। এমতাবস্থায় যে কোন সূক্ষ্ম ভুল সংশোধনের সময় ও সুযোগ উভয় আছে। এই মর্মে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাচ্ছি যে, প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি বঙ্গবন্ধুর নামেই হোক, তবে নাম নির্ধারনের ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম বিবেচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি একক, স্বতন্ত্র ও ভিন্ন গঠনের নামে প্রতিষ্ঠিত হোক"।

    প্রকাশিত: বুধবার ২৯, জুলাই ২০২০