• সর্বশেষ আপডেট

    কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

    মাসুদ রানা, রাজারহাট-কুড়িগ্রামঃ- কুড়িগ্রামে রেকর্ড পরিমাণ ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। রোববার এই বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসার ঢলের কারণে নদ-নদীগুলোতে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

    জেলার রাজারহাটে অবস্থিত কৃষি ও সিনপটিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, মৌসুমী বায়ূ বাংলাদেশের উপর সক্রিয় থাকায় আবারও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। রোববার ভোররাত ৩টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ১২ ঘন্টায় ২০০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। আগামী দু’দিন ভারী বৃষ্টিপাত এবং এরপর থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত হালকা বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।

    কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে উজান থেকে ঢল নেমে আসায় আবারও নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। রোববার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ৯ ঘন্টায় ধরলা নদীর ফেরীঘাট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

    তিনি জানান, এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বাড়লেও বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

    জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফা বন্যার ৯দিন অবিবাহিত হচ্ছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়্য়া জেলার ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৭৫টি গ্রাম এখনও বন্যার পানিতে ভাসছে। এসব গ্রামে পানিবন্দি হয়ে আছেন প্রায় ৪৭ হাজার পরিবারের ১ লাখ ৯০ হাজারের মতো মানুষ। আর বাড়িঘর ছেড়ে ১৩২টি আশ্রয় কেন্দ্র, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও রাস্তায় প্রায় ৫ হাজার পরিবারের ২২ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়ে আছেন। এ অবস্থায় রোববার নতুন করে রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার বন্যার্তদের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।

    এদিকে আকস্মিকভাবে তিস্তা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে অবস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বুড়িরহাট সলিড স্পার। নদীর বাম তীর ঘেঁষে প্রবাহিত তীব্র স্রোত সরাসরি সলিড স্পারে এসে ধাক্কা খেয়ে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি করছে। আর এই ঘূর্ণাবর্ত তলদেশের মাটি তুলে আনছে উপরে। বালি ভর্তি জিও ও সিনথেটিক ব্যাগ ফেলে স্পারটি রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না ঘূর্ণাবর্তকে। ফলে যে কোন মূহূর্তে স্পারটি ভেঙে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ভাঙনে স্পারটির বাম দিকে ৬টি পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়েছেন।

    এই পরিস্থিতিতে রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ বুড়িরহাট সলিড স্পার রক্ষায় চলমান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

    তিস্তা নদীর বাম তীরের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বুড়িরহাট, খিতাবখাঁ, চতরা, কালির মেলা, গতিয়াসাম, রামহরি, পাড়া মৌলা ও  তৈয়বখাসহ ১৫টি গ্রামকে ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ বছর আগে ১৫০ মিটার সলিড স্পারটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

    এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, বালি ভর্তি জিও এবং সিনথেটিক ব্যাগ ফেলে সলিড স্পারটি ভাঙন থেকে রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।



    প্রকাশিত: রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০