• সর্বশেষ আপডেট

    আশ্রয়ন প্রকল্পের কোটি টাকালোপাটের তথ্য ফাঁস

    কলাপাড়ায় আশ্রয়ন প্রকল্পের কোটি টাকালোপাটের তথ্য ফাঁস, অবশেষে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা আবার ফেরৎ ॥

    রাসেল কবির মুরাদ, কলাপাড়া-পটুয়াখালীঃ- কলাপাড়ায় আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টিঘাটলা নির্মানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বরাদ্দকৃত ১ কোটি ১১লাখ ৭৫ হাজার তিনশ’ পয়ত্রিশ টাকা লোপাটের তথ্য ফাঁস হয়ে পড়ারপর ২১ জুলাই মঙ্গলবার সরকারী হিসাবে উক্ত অর্থ  জমা দিয়েছে আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সারিকা ট্রেডার্স। তবে কোন কাজ না করে কিভাবে সরকারী বরাদ্দের বিপুল পরিমান এঅর্থ লোপাট করা হল সে বিষয়টি এবার খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।

    নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্রে জানা যায়, এর আগে কোন কাজ না করেইজাল  জালিয়াতি  করে  রাঙ্গাবালী  উপজেলার  মেসার্স  সারিকাট্রেডার্স ৭ এপ্রিল আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের বিপুল পরিমান এ সরকারিঅর্থ হাতিয়ে নেয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির গলাচিপাস্থ সোনালীব্যাংকের  হিসাব  নম্বরে  (চলতি-  ৪৩১০২০০০০১৫০৫)  কলাপাড়াহিসাব রক্ষন অফিসের ব্যয় বরাদ্দ বিলের ভাউচারের মাধ্যমে এ টাকাহস্তান্তর হয়।

    বিভিন্ন  তথ্যসূত্রে  আরো  জানা  যায়, প্রধানমন্ত্রীর  কার্যালয়আশ্রয়ন-২  প্রকল্প  তেজগাঁও  ঢাকা  এর  স্মারক  নম্বর-০৩.০২.০০০০.৭০১.০২.০৯৬.১৯.১৩১৪  তারিখঃ  ৩১  ডিসেম্বর-২০১৯চিঠিতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কমিউনিটি সেন্টার নির্মান ব্যয়নির্বাহের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দকরা  হয়।

    যেখানে  কলাপাড়ায়  খাঁজুরা,  চালিতাবুনিয়া,  গোড়াআমখোলা, ছোট বালিয়াতলী, ফতেপুর, লক্ষ্মী বাজার, নিশানবাড়িয়া,গামুরবুনিয়া, নীলগঞ্জ ও নিজ শিববাড়িয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের জন্যপ্রত্যেকটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয় নয়লাখ ৮০ হাজার ১১৩ টাকা।

    এছাড়া নিশানবাড়িয়া ও গামুরবুনিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫  টাকা।  নীলগঞ্জ  ও  গোড়াআমখোলা  পাড়া  আশ্রয়নের  দু’টিঘাটলা নির্মাণ ব্যয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা এবং খাঁজুরা ওফাসিপাড়া দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয় চার লাখ ৫৮হাজার ৮৩৫ টাকা। বাস্তবে এ ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টিঘাটলার কোন কাজ করা হয়নি।

    সেখানে সকল বিল বাবদ মোট এককোটি  ১১  লাখ  ৭৫  হাজার  তিন  শ’  পয়ত্রিশ  টাকা  ঠিকাদারি
    প্রতিষ্ঠান  সারিকা  এন্টার  প্রাইজ  তুলে  নিয়েছে।  ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির নামে যেসব চিঠি ইস্যু দেখানো হয়েছে তার সবমেমো  উপজেলা ত্রাণ ও দূর্যোগ  মন্ত্রণালয়ের। কবে টেন্ডার দেয়াহয়েছে,  কীভাবে  ঠিকাদার  নিয়োগ  করা  হয়েছে  এবং একইদিনে ব্যাংক হিসাব ব্যতিরেকে বিলের সমুদয় টাকা ঠিকাদারের হিসাবেসরাসরি গেল এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

    ঠিকাদারীপ্রতিষ্ঠানের নামে যেসব চিঠি ইস্যু দেখানো হয়েছে তার সবমেমো  উপজেলা ত্রাণ ও দূর্যোগ  মন্ত্রণালয়ের। কবে টেন্ডার দেয়াহয়েছে, কীভাবে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে এবং একইদিনে ব্যাংক হিসাব ব্যতিরেকে বিলের সমুদয় টাকা ঠিকাদারের হিসাবেসরাসরি কিভাবে গেল এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

    চম্পাপুর  ইউনিয়নের  চেয়ারম্যান  রিন্টু  তালুকদার  এবং লতাচাপলী ইউনিয়নের  চেয়ারম্যান  আনছার  উদ্দিন  মোল্লা  জানান,  তাঁদেরইউনিয়নে কমিউনিটি সেন্টার ও ঘাটলার কাজ করার জন্য কোন বরাদ্দআছে তাও জানা নেই। আর এ ধরনের কোন কাজ করা হয়নি। সদ্য বদলী হওয়া ইউএনও মো: মুনিবুর রহমান জানান, আমার যেসবসই  দেখানো  আছে  তা  জাল।  আশ্রয়ন  প্রকল্প  বাস্তবায়নের  কোনচিঠিপত্র  আমি  কলাপাড়ায়  থাকাকালীন  রিসিভ  করিনি।  কাজকর্মতো দুরের কথা। পূবালী ব্যাংকে যে একাউন্ট খোলা তার সম্পর্কেআমার কিছুই জানা নেই। আমার সকল স্বাক্ষর জাল করে হিসাব রক্ষণঅফিস থেকে কর্মস্থল ত্যাগের পনেরো দিন পরে সরাসরি ঠিকাদারেরহিসাবে  কীভাবে  অর্থ  ট্রান্সফার  করা  সম্ভব  হলো,  এটি  আমারবোধগম্য নয়।

    কলাপাড়ার  বর্তমান উপজেলা  নির্বাহী  অফিসার আবু  হাসনাতমোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, বিষয়টি জেনে আমি মাঠ পর্যায়েগিয়ে নিশ্চিত হয়েছি আশ্রয়ন প্রকল্পের কোন কাজই হয়নি। গোটাবিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। উপজেলা  প্রকল্প  বাস্তবায়ন  কর্মকর্তা  তপন  কুমার  ঘোষ  জানান,তিনিও বিষয়টি জেনে অবাক হয়েছেন। ওই ফাইলটিও তার অফিসেনেই। তার সই-স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে বলে জানান তিনি। আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ঠিকাদার মোঃ শামীম জানান, করোনার কারনেকোন কাজ করতে পারিনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাজ সম্পন্নকরার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এ নিয়ে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়ায় প্রকল্পেরবরাদ্দকৃত সমুদয় অর্থ মঙ্গলবার সরকারী হিসাবে জমা করে দিয়েছি।

    প্রকাশিত: বুধবার ২২ জুলাই, ২০২০