আইসিইউ আছে চিকিৎসক নেই! দরকার সরকারি নজরদারি।
মাহমুদ আরাফ মেহেদিঃ করোনা ভাইরাসের ছোবলে কুপোকাত চট্টগ্রামসহ গোটা দেশ আক্রান্তের দিক দিয়ে রাজধানী ঢাকার পরই চট্টগ্রাম। এই পর্যন্ত আক্রান্ত প্রায় সাড়ে পাচঁ হাজার ছুঁই ছুঁই। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় নগরীতে ভেঙে পড়েছিল চিকিৎসা ব্যবস্থা, হাসপাতালের সিট ও আইসিইউ বেড খালি না থাকায় বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি করোনা রোগীসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও, তবে ইতিমধ্যে নগরবাসীর মাঝে কিছুটা স্বস্থি ফিরেছিল হলিক্রিসেন্ট করোনা হাসপাতাল চালু হওয়াতে।
বৈশ্বিক এই মহামারীতে কভিড- ১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার লক্ষে সিটি মেয়র আ. জ. ম নাছির উদ্দীনের আহ্বানে এগিয়ে আসেন প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স এসোসিয়েশন, তাদের নিজস্ব অর্থায়নে নগরীর খুলশীতে পরিত্যক্ত হলিক্রিসেন্ট ডায়াগনষ্টিক সেন্টারকে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য আধুনিক ৮০টি আইসোলেশন বেড ১১টি আইসিইউ, ১০টি এইচডিইউ বেড সহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বেলিত ডেডিকেটেড হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু করে ইতিমধ্যে ৪০টি আইসোলেশন বেড ১১টি আইসিইউ, ও ১০টি এইচডিইউ বেড নিয়ে চিকিৎসা যাত্রা শুরু করেছে হাসপাতালটি।
করোনা চিকিৎসায় বেড শূণ্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ করোনার ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো, এমন অবস্থায় চিকিৎসাসেবা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা দেখা দেয় চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে, তবে হাসপাতালটি চালু হওয়ায় অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে নগরবাসীর মাঝে, ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালটিতে।
অন্যদিকে শুরুতে সাধারণ অন্যান্য রোগীদের নিরাপত্তার অজুহাতে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া থেকে বিরত থাকলেও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার চাপে এখন করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো তবে হাসপাতাল গুলোতে বরাদ্ধকৃত বেডের চেয়ে রোগী রয়েছে কয়েকগুণ বেশি। এমতাবস্থায় করোনা রোগীরা ভর্তি হতে পারছে হলিক্রিসেন্ট করোনা হাসপাতালে।
জানা যায় সাধারণ অন্যান্য রোগীর কথা চিন্তাকরে, চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীদের আলাদা চিকিৎসা দিতে, চট্টগ্রাম বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমতির নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করা হয় ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল, তবে বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমতির অর্থায়নে তৈরি হলেও বর্তমানে হাসপাতালটি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট ২ হিসেবে সরকারি ভাবে সরকারি খরছে পরিচালিত হচ্ছে। তিবে সমস্যা পিছু ছাড়ছেনা নগরবাসীর আইসিইউ এইচডিইউ বেড থাকলেও নেই পরিচালনার অভিজ্ঞ জনবল ফলে রোগীরা পাচ্ছেনা আইসিইউ সেবা।
করোনা উপসর্গ নিয়ে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে রোগী ভর্তি করার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও নানা সমস্যায় জর্জরিত হাসপাতালটি। ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর গভির সংকটে পরে আছে এটি। মাসের প্রথম থেকে করোনা রোগীদের জন্য হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়, শুরুর পর থেকেই একদিকে যেমন চিকিৎসক, নার্স সল্পতা তেমনি কর্মচারীদের সংকটও প্রকট। হাসপাতালে ১০ আইসিইউ প্রস্তুত থাকলেও অভিজ্ঞ জনবল ও অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে তা এখনো শুরু করা যাচ্ছে না।
হাসপাতাল পরিচালনার কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে ১৯ জন চিকিৎসককে পোস্টিং করা হয় এই হাসপাতালে। তারমধ্যে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে ৩ জন ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২ জনকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি ১৪ জনের মধ্যে ২ জন গর্ভবতী ও ২জন করোনায় আক্রান্ত। সে হিসেবে ১০ জনের মতো চিকিৎসক আছেন হাসপাতালটিতে। ৩৭জন নার্সের পোস্টিং করা হলে ৩৫ জন হাসপাতালে যোগদান করেছে তারা তিন শিফটে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ার্ড বয় রয়েছেন মাত্র ২ জন। বিশাল এই হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে মাত্র ১ জন দিয়ে।
২০ শয্যার আইসিইউর ১১টি শয্যা প্রস্তুত থাকলেও হাসপাতালের ৩৫ জন নার্সের কারো নেই আইসিইউ পরিচালনার অভিজ্ঞতা। আইসিইউ পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক।১০০ শয্যার এ হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ২৫-৩০টি। কিন্তু ভর্তি রোগীর অনুপাতে চিকিৎসকরা বলছেন ৪০-৪৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন। ৩০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও রিফিলের কোন ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যে দিনে ৪ থেকে ৫টি সিলিন্ডার রিফিল করে, আনা হচ্ছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা ডা. মনোয়ার হোসেন দিগন্ত নিউজ'কে বলেন, আমাদের হাসপাতালে ৬০ শয্যার মত প্রস্তুত রয়েছে। বাকি ৪০ শয্যা করার জন্য হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় কাজ চলছে।
আইউসিইউ পরিচালনা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আইসিইউ পরিচালনা করার জন্য ৫ জন চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছিল তার মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ থাকায় যোগদান করেনি। বাকি ৪ জন যোগদান করেছে। তারা আইসিইউ পরিচালনা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়াও আইসিইউ পরিচালনা করার জন্য ৬ জন নার্সকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আইসিইউ, এইচডিইউ বেড সম্বেলিত ডেডিকেটেড হাসপাতালটি সম্পূর্ণভাবে চালু হলে নগরীতে আইসিইউ অক্সিজেনের অভাবে ও বিনা চিকিৎসায় আর কোন প্রাণ ঝরবেনা এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০