• সর্বশেষ আপডেট

    চিকিৎসা দূরের কথা খাবারও মিলছেনা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে।


    মাহমুদ আরাফ মেহেদিঃ চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট ২ হিসেবে পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের অধীনে পরিচালিত হলেও এখানে মিলেনি সরকারি অর্থ বরাদ্দ। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনুদানে মহামারী করোনার চিকিৎসা চলছে। সংকটের কারণে রোগীরা এখানে ভর্তি হলেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। উল্টো হাসপাতালের পরিবেশ দেখে অনেকে আতঙ্কে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসা, পরিবেশ ও সেবার বদলে হাসপাতালটি এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রোগীর স্বজনরা। সেখানে অবস্থা এমন যে, করোনায় মৃত্যুর আগে খাবারের অভাবে মারা যাবেন রোগীরা। কারণ হাসপাতাল থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে না। রোগীর টাকায় কিনে দেবে এমন সহযোগীও নেই। দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

    জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের শুরুতে ফেব্রুয়ারি মাসে নগরীর ১২টি বেসরকারি ক্লিনিকে তিনটি করে আইসিইউ বেড করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির। শুরুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি হলেও পরে অবস্থান বদলায়। 

    তারা সাধারণ রোগীর কথা চিন্তা করে নিজস্ব অর্থায়নে  নগরীর জাকির হোসেন রোডে পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট ক্লিনিককে করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করার প্রস্তাব দেন বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা। প্রস্তাব অনুযায়ী বেসরকারি ক্লিনিক মালিকরা পুরোপুরি প্রস্তুত করে দেওয়ার কথা। 
    এ জন্য প্রত্যেক ক্লিনিক মালিক তিন লাখ ও ডায়াগনস্টিক মালিকরা দেড় থেকে দুই লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ না করেই চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে।
    ২১ মে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও ১ জুন থেকে সেখানে রোগী ভর্তি করা হয়। জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় শাখা হিসেবে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও সুইপার মিলে ২৫ জনকে পদায়ন করা হয়। কিন্তু পরে রেলওয়ে হাসপাতালের প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন সেন্টার চালু হলে আট ডাক্তার-নার্স বদলি করে। এ ছাড়া কয়েকজন ডাক্তার-নার্স মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। তাই বর্তমানে তিন শিফটে মাত্র ১১ জন ডাক্তার-নার্স-ওয়ার্ড বয় সেবা দিচ্ছেন।

    ফলে নামে হাসপাতাল হলেও সেখানে কোনো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। পরিস্থিতি এমন যে, একজন সংকটাপন্ন রোগীর অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবর্তন করবেন এমন অভিজ্ঞ নার্সও নেই। তিন শিফটে কাজ করছেন দুই ওয়ার্ড বয় ও দুই সুইপার। ওয়াসার বিল দিতে না পারায় যে কোনো সময় সংযোগ বিচ্ছিন করতে পারে।

    অপরিচ্ছন্ন ও স্যাঁতসেঁতে কেবিনে একটি সিট ছাড়া কিছুই নেই।করোনা আক্রান্ত সাবেক যুগ্ম সচিব মঈনুল ইসলাম ভর্তি হয়েছিলেন জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি পানি আর বিস্কুট খেয়ে চার দিন কাটিয়েছেন। পরে তিনি  তার স্বজনদের জানালে স্বজনরা তাকে হালিশহরে আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে আসেন।

    হাসপাতালের বর্ণনা দিয়ে, মঈনুল ইসলামের স্বজনরা বলেন, ওয়াশরুম ভরে আছে ময়লাযুক্ত পানিতে। পানি গড়িয়ে কেবিনে ঢোকার উপক্রম। চিকিৎসা তো দূরের কথা করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়ার চার দিনেও নমুনা নিতে আসেনি কেউ। পানি খাওয়ার জন্য একটি গ্লাস মেলেনি। চার দিন ভর্তি থেকে একবেলা ভাত জোটেনি। পানি আর বিস্কুট খেয়েই থাকতে হয়েছে। 

    সরকারের একজন সাবেক যুগ্ম সচিবের সঙ্গেই এমন আচরণ করেছে চট্টগ্রাম নগরীর হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল।

    এ পরিবেশে রোগীরা সুস্থ হওয়ার বদলে অনাহারে মৃত্যুর ভয়ে আছেন।

    এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আটটি আইসিইউ ও ১০টি এইচডিইউসহ প্রায় ১০০ শয্যার হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দ না পাওয়ায় আপাতত মানুষের দেয়া  অনুদানে চালানো হচ্ছে হাসপাতালটি। ফলে  রোগী ভর্তির সময় বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসার বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়। আমরা  সরকারের কাছে বরাদ্দ ছেয়েছি, বরাদ্দ পেলে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে। 


    প্রকাশিত: বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০