• সর্বশেষ আপডেট

    চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত সাড়ে চার হাজার হলেও হাসপাতালে বেড মাত্র ৬'শ

    চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত সাড়ে চার হাজার হলেও হাসপাতালে বেড মাত্র ৬'শ

    মাহমুদ আরাফ মেহেদিঃ চট্টগ্রামে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা আক্রান্তের হার বাড়ছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন একাধিক মানুষ। নমুনা পরীক্ষা না হওয়ায় এদের হিসাব কেউ রাখছে না। সরকারি হিসাবে উঠছে না তাদের নাম। তাই করোনায় মারা যাওয়া রোগীর যে পরিসংখ্যান চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগ দিচ্ছে তা প্রকৃত চিত্র নয়। প্রকৃত অর্থে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের কয়েকগুণ হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    এদিকে করোনা উপসর্গ বা অন্য কোনো জটিল রোগ নিয়ে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে গেলেও মিলছে না চিকিৎসা, তার কারণ হচ্ছে চট্টগ্রামে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল মিলে কোভিড- আক্রান্ত রোগীদের জন্য বেড রয়েছে ৬০০ এর মত তবে চট্টগ্রামে এপর্যন্ত কভিড- ১৯ আক্রান্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার, প্রতিদিন গড়ে দুই আড়াইশ রোগী আক্রান্ত হচ্ছে।

    একদিকে আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে, শিল্পপতি, শিক্ষক, ডাক্তার, আলেমসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকেও অনেক রোগী ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে, এই মুহুর্তে চট্টগ্রাম মেডিকেলে কভিড- রোগীদের জন্য প্রয়োজন মিনিমাম ৫০০ বেড সেখানে চট্টগ্রাম মেডিকেলে কোভিড- আক্রান্ত রোগীদের জন্য রয়েছে মাত্র ১০০ বেড নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ, ফলে চট্টগ্রামে জনগনের একমাত্র আস্থার স্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায় ইতিমধ্যে মারা গিয়েছে অনেকে রোগী। 


    এই মুহুর্তে প্রয়োজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ গুলো কভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য প্রস্তুত করা। যেহেতু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া অধিক ব্যয়বহুল সেহেতু সাধারণ মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নেয়া সম্ভব নয়, তাই প্রয়োজন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যাবস্থা বাড়ানো।

    সরকারি জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি, রেলউয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও ফিল্ড হাসপাতালসহ সরকারি ভাবে কোভিড- ১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য বেড রয়েছে ৩০০ টির মত।

    অন্যদিকে সাধারণ রোগীদের কথা চিন্তা করে বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমতির নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করা হয় একশ বেডের হলিক্রিসেন্ট করোনা হাসপাতাল, পরে আক্রান্ত বাড়ায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার চাপে বেসরকারি ক্লিনিক গুলোতে কোভিড- আক্রান্ত  রোগীদের জন্য প্রায় ৩০০ এর অধিক বেড বরাদ্ধ করা হয়েছে, ফলে সরকারি বেসরকারি মিলে বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রায় ৬০০ বেডে করোনা রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে তবে এটি মোটেই পর্যাপ্ত নয়।

    ইতিমধ্যে প্রত্যেক হাসপাতালে বরাদ্ধকৃত বেডের চেয়ে কয়েকজন রোগী বেশি ভর্তি রয়েছে, বাবা ছেলে, ভাই বোন একি পরিবারের লোক হলে একি কেবিনে ৩ ৪ জন রোগীও রাখা হচ্ছে হাসপাতাল গুলোতে। 


    সরে জমিনে চট্টগ্রাম মেডিকেলসহ নগরীর কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, যে হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ৩০ টি বেড বরাদ্ধ করা হয়েছে  সেখানে বর্তমানে ৪০ জন কভিড রোগী ভর্তি আছে তার মধ্য ১০ টি আইসিইউ'র মধ্য ৭টি তে কভিড আক্রান্ত ক্রিটিক্যাল রোগী আইসিইউ তে রয়েছে, নগরীতে আরেকটি হাসপাতালে দেখা যায় কোভিড- রোগীর জন্য ১৬টি সিট বরাদ্ধ করা হলেও সেখানে বর্তমানে ২০ জন কোভিড- রোগী ভর্তি আছে, তবে কতৃপক্ষ বলছে আরো বেশ কয়েকটি বেড কোভিড- রোগীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে, এমনিভাবে নগরীতে প্রায় সরকারি -বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ রয়েছে অনেকগুণ, রয়েছে আইসিইউ এর তীব্র সংকট।

    যেহেতু সাধারণ রোগী ও কোভিড- রোগী একই ফ্লোরে বা একই সাথে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়, তাই এত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে সরকারি - বেসরকারি হাসপাতাল কতৃপক্ষ, বরাদ্ধকৃত বেডের চেয়ে রোগী বেশি হওয়ার ফলে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে অনেক জটিল কঠিন রোগে আক্রান্ত  রোগীকে। 

    চট্টগ্রামসহ সারাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে থাকার সাথে সাথে হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউথর চাহিদাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এ পর্যন্ত দেখা গেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় ৫ শতাংশের জন্য আইসিইউ সেবা প্রয়োজন হয়। 


    আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সরকারিভাবে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা লক্ষাধিকে পৌঁছাবে। অর্থাৎ, সেই হিসাবে দেশে ইতিমধ্যেই আইসিইউ বেডের প্রয়োজন ৫ হাজারে ঠেকেছে। যারা শনাক্ত হয়নি কিন্তু করোনার উপরসর্গ নিয়ে ভুগছেন তাদের হিসাবের মধ্যে আনলে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। অথচ, সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা সর্বমোট ৭৩৩টি। 

    তাছাড়া বেসরকারি খাতেও আইসিইউ বেডের সংখ্যা হাতে গোনা। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় আইসিইউতে বেড না পেয়ে অনেক কোভিড রোগী মারা যাচ্ছেন। কেবলমাত্র কোভিড রোগীদেরই যে আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে বিষয়টি তেমন নয়, আরো অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত সংকটাপন্নদের জন্যও আইসিইউ প্রয়োজন হয়। সুতরাং, আইসিইউ বেডের সংকট ক্রমান্বয়ে জটিল থেকে জটিলতর হওয়াই স্বাভাবিক। 

    পৃথিবীর প্রায় সব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাই চাপের মুখে থাকায় বর্ধিত সংখ্যক আইসিইউ পরিচালনার জন্য বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসাও এখন প্রায় অসম্ভব। সুতরাং, আইসিইউর বেড সংখ্যা বৃদ্ধি ও নতুন আইসিইউ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়ার সাথে সাথে আগামী কয়েক মাস আমাদের বিদ্যমান আইসিইউর উপর নির্ভর করেই কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।


    প্রকাশিত: শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০