• সর্বশেষ আপডেট

    রাজারহাটের প্রভাবশালীদের দখলে ঐতিহ্যবাহী মৎস্য চাষের বিল | Digonto News BD


    মাসুদ রানা, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম):: রাজারহাটের ঐতিহ্যবাহী মাছ চাষের বিলগুলো এখন প্রভাবশালীদের দখলে।ফলে সরকার প্রতি বছর   প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। বিলের ধারের মৎস্যজীবি পরিবারগুলোর মাছধরা বন্ধ হওয়ায় জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়ছে।

    সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে  প্রায় ৫০০ একরজমির উপর সরকারী ২০টি মাছ চাষের বিল ও ৫টি প্লাবন ভূমি রয়েছে। এরমধ্যে রাজারহাট সদর ইউনিয়নে ৩০.২৬ একর জমির উপর বড়গিলা বিল  ৫.৬৮ একর জমিতেসরলা বিল ৬৬.৩৭একর জমিতে দেউলার বিল,চাকিরপশার ইউনিয়নে ১৫৪.৯৩একর জমিতে চাকিরপশার বিল,ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নে ১১.৮০একর জমিতে চতলারবিল,৪.৮৪ একর জমিতে চতলার কুড়া,৩একর জমিতে নাখেন্দার বিল,৩২.৯৯ একর জমিতে কোটেশ্বর বিল,১.৫০ একর জমিতে ফতেখাঁ মেঘার দিঘী .৯৮একর জমিতে পুরাতন হাট খোলা এবং ৪৪.৯৭ একর জমিতে ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা বিল রয়েছে।

    বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে ৬.৫৭একর জমির উপর বাদিয়ার ছড়া,৩.২০একর জমির উপরমাল্লির ছড়া,৫.৫৮একর জমিতে উকিলের ছড়া,ছিনাই   ইউনিয়নে ১৫.২৬ একরজমির উপর বুড়িদহ সাতবোন,৭.১২ একর জমিতে ফড়িংয়ের ছড়া,৫.৭৩ একর জমিতে কামারের ছড়া,১.৬৫   একর জমিতে মজুদ দারের দিঘী,নাজিমখাঁন ইউনিয়নে ৩.৮ একর জমির উপর যুগিদহ বিল এবং উমর মজিদ ইউনিয়নে ২.২৯একর জমিতে মাদারের কুড়া নামক বিল রয়েছে। 

    এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে সরকারী খাস ভূমির উপর প্লাবন ভূমি ও জলাশয়। তবে কাগজে কলমে উল্লেখিত মাছ চাষের বিলের জমির পরিমানের সাথে  বাস্তবের কোন মিল নেই।অধিকাংশ বিলের জমির বৃহাদাংশ এখন প্রভাবশালীদের দখলে। 

    এতোমধ্যে দেউলারবিলটির পুরো অংশই স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে দখলে নিয়েছে। একইভাবে প্রভাবশালীরা সরলা ও বড়গিলা বিল দখল করে নিয়ে নিজেরাদীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষাবাদ করে আসছে। অন্যান্য বিল গুলোর বৃহাদাংশ দখল করে ফেলেছে প্রভাবশালী মহল। 

    প্লাবন ভূমিগুলোও এখন সরকারের হাত ছাড়া। অথচ এ বিলগুলো কাগজে কলমে সরকারী হিসেবে রয়েছে। তাছাড়া বিল গুলো দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ার কারনে বিভিন্ন অংশ পুরে উঠেছে। 


    সরেজমিনে উপজেলার সর্ববৃহৎ চাকির বিল ঘুরে দেখা গেছে,বিলের ১৫৪একর জমির মধ্যে অর্ধেক জমিও বিলে নেই। বিলের বিভিন্ন অংশে প্রভাবশালীরা পাড় বেঁধে পুকুর, বাড়িঘর তৈরী এবং মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে খন্ড,খন্ড করে ফেলেছে। 

    বিল কমিটির সভাপতি জোগেন চন্দ্র দাস জানান,আমরা চাঁন্দামারী জেলেপাড়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির নামে ২০১৭ইং সনে তিন বছরের জন্য ১৯লক্ষ ৮৯হাজার টাকায় লিজ গ্রহন করি। চুক্তিপত্রে ১৪১একর জমির উপর বিল থাকার কথা উল্লেখ করা হলেও সরেজমিনে আছে মাত্র ৬০একর জমির বিল। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বিলের লিজের পুরো টাকা আজ পর্যন্ত পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান।

    উপজেলার বাদিয়ার ছড়া বিল পরিচালনা কমিটির সেক্রেটাররী সচিন চন্দ্রবলেন,বিলের ধারের প্রভাবশালী কিছু মানুষ বিলের বৃহদাংশ   দখল করে রয়েছে।এর আগে উপজেলা প্রশাসন বিলের ভূমি উদ্ধারের চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।

    উপজেলার কোটেশ্বর বিলের সভাপতি স্বপন জানান,কাগজে কলমে ৩২.৯৯ একরজমি থাকার কথা কিন্তু রয়েছে আনুমানিক ২৫একর বাকী জমি প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল পুকুর ও বাড়িঘর নির্শান করেছেন।উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান উপজেলার অধিকাংশ বিলগুলোর বিপুল পরিমান জমি প্রভাবশালীদের থাকার সত্যতা স্বীকার করে জানান,অবৈধদখল উচ্ছেদের ব্যাপারে মৎস্য অফিসের কিছু করার নেই।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাঃ যোবায়ের হোসেন জানান,পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগীতায় বিলের জায়গা অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকার কাজ শেষ হলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।


    প্রকাশিত: শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০২০