• সর্বশেষ আপডেট

    রাজারহাটে সরকারী দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের দাবী খামারীদের | Digonto News BD

    মাসুদ রানা,রাজারহাট(কুড়িগ্রাম):: রাজারহাটে গাভীর দুধের ন্যায্য মূল্যনিশ্চিত করতে সরকারী দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন খামারীরা।গো খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও দুধের মূল্য বৃদ্ধি না হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে খামারীদের।      

    জানা যায় ,রাজারহাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৫শতাধিক গাভীর খামার সহ পরিবার ভিত্তিক ক্ষুদ্র পরিসরে প্রায় ৮হাজার মানুষ গাভীপালন করে আসছেন। এতে করে এই উপজেলায় প্রতিদিন ২০থেকে ২৫হাজারলিটার গাভীর দুধ উৎপাদিত হচ্ছে।  

    অথচ গোটা উপজেলা মিলে ব্র্যাকের২টি, রংপুর ডেইরীর ১টি এবং সমবায় সমিতির মাধ্যমে ১টি সহ মোট৪টি চিলিং সেন্টার ছাড়া এই উপজেলায় কোন দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্র নেই। ফলে ন্যায্য মূল্যে দুধ বিক্রি করতে পারছেন না খামারীরা।  

    বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি ও স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় খামার গড়ে তোলা শতশত যুবক ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে দুগ্ধ খামারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।


    সরেজমিন উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের চাকিরপশার পাঠক গ্রামের রতন দুগ্ধ খামারে দেখা যায়, শতাধিক উন্নত জাতের গাভী রয়েছে এই খামারে।খামার থেকে প্রতিদিন ৮থেকে ১০মন দুধ উৎপাদিত হয় । দুধের বেশির ভাগই বেসরকারী এনজিও ব্র্যাক, আরডি এবং সমবায় সমিতির নিকট নাম মাত্রমূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে । বাকী দুধ তারা বিভিন্ন মিষ্টি ও চায়ের দোকানে প্রতিকেজি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা দরে ফেরী করে বিক্রি করেন ।   

    খামারী রতনকুমার জানান,উপজেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৫শতাধিক দুগ্ধ খামার রয়েছে,এসব খামার থেকে যে- যেভাবে পাচ্ছেন দুধ বিক্রি করছেন। এসব দুধের বেশির ভাগই ব্রাক, আরডি ও সমবায় সমিতির নিকট প্রতি কেজি ৩১টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে   হচ্ছে। দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্র গুলোতে দুধে ফ্যাটের অজুহাত দেখিয়ে কম দামে দুধ কিনছে তারা। 

    উপজেলার ধনীপাড়া গ্রামের খামারী আবু-বক্কর বলেন,আমরা উপায়হীন,যেহেতু প্রতিদিন গাভী থেকে দুধ দোহাতে হয়। সরকারী ভাবে মিল্কভিটা দুধ ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা না হলে লোকসান গুনতে গুনতে এক সময় খামারীদের খামার বন্ধ হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।

    উপজেলার মানাবাড়ি গ্রামের শামসুল হক জানান, গরুর খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেলেও দুধের দাম বাড়েনি। সরকারী দুধ ক্রয় কেন্দ্র না থাকায় আমরা দুধের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না,ফলে দুগ্ধ খামার ধরে রাখা কঠিন হয়ে পরেছে।  

    এ অবস্থায় উপজেলার সকল খামারীরা রাজারহাটে গাভীর দুধের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারী দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন।        


    এদিকে স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় গরুর খামারের উৎপাদিত দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক নতুন দুগ্ধ খামারের মালিকরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে দারিদ্রতম কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় দুগ্ধ শিল্প মুখ থুমড়ে পড়তে পারে বলে আশংকা খামারীদের। উল্লেখ্য অত্র এলাকার দারিদ্রতা দুর করতে দুগ্ধখামার শিল্প অনেকটা সহায়ক ভুমিকা পালন করে আসছে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই বেকার যুবকরা  বেকারত্ব ঘোচাতে গড়ে তুলতে শুরু করেছেন দুগ্ধখামার।    

    সরকারী ভাবে ন্যায্য মূল্যে দুধ ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে খামারীদের উৎপাদিত দুধ ন্যায্য মূল্যে বিক্রি নিশ্চিত করতে পারলে সম্ভাবনাময় এ শিল্প বদলে দিতে পারে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা। উপজেলা ব্র্যাক দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্র সূত্র জানায়, দুধের ফ্যাটের উপর নির্ভরকরে তারা দুধ ক্রয় করেন। সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৫ ফ্যাটের নীচে দুধ ক্রয় করা হয় না । ৩ দশমিক ৫  ফ্যাটের প্রতিলিটার  দুধের মূল্য নির্ধারন করা আছে ২৮ টাকা ৯০ পয়সা। সাথে বোনাস ১ টাকা, ক্যারিং কমিশন ১ টাকা করে প্রতিকেজি দুধ কেনা হয়। 

              
    এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জোবাইদুল কবির জানান, উপজেলায় কোন সরকারী দুধ ক্রয় কেন্দ্র নেই। দুদ্ধ খামারীদের কথাচিন্তা করে সরকারী ভাবে উপজেলায় একটি করে মিল্কভিটা দুধ ক্রয় কেন্দ্রস্থাপনের সুপারিশ পাঠানো হবে।


    প্রকাশিত: শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০