রাজারহাটে কর্মহীনদের খাদ্য সংকট চরমে | Digonto News BD
মাসুদ রানা,রাজারহাট(কুড়িগ্রাম):: রাজারহাটে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের আশংকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় খাদ্য সংকট বাড়ছে। অনেকস্থানে অর্ধাহারে -অনাহারে দিনাতিপাত করছেন মানুষ। সরকারী ভাবে এখন পর্যন্ত ৩৮মেঃ টন চাউল ও ৯৩হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় একেবারে অপ্রতুল।
সরেজমিনে উপজেলার বিদ্যানন্দ,চাকিরপশার,ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ও রাজারহাট ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা ঘুরে কর্মহীন পরিবারের লোকদের সাথে কথা বলে নানাদূর্ভোগের চিত্র পাওয়া গেছে।
এসময় উপজেলার রাস্তা-ঘাট,হাট বাজারগুলো অনেকাংশে ফাঁকা দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে কিছু খাদ্য সামগ্রীর দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়বখাঁ (দাসপাড়া) গ্রাম। ওই গ্রামের বাসিন্দা অক্ষয় দাস (৬৫)। পেশায় জেলে। তিন সদস্যের সংসার। অন্যের পুকুরে মাছ ধরে ও মাছ কিনে পার্শ্ববর্তী ডাংরারহাট বাজারে বিক্রি করে তার সংসার চলতো।একমাস পূর্বে করোনা ভাইরাসের কারনে তার ব্যবসা বন্ধ হয়েছে।
অক্ষয় দাস জানান,“ব্যবসার যে সামান্য কিছু টাকা ছিল,সংসারের পিছনে অনেক আগে তা শেষ হয়েছে। পরিবার নিয়ে এখন খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে। একজন এক কেজি চাউল দিয়েছে। তাই দিয়ে কোন রকম চলেছে গতকাল।কিন্তু আজ সকাল থেকে একেবারে না খেয়ে। বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের দেখা করে অভাবের কথা বলেছি। লাভ হয় নাই। বলেছেন কিছু করার নাই”। একই অবস্থা ওই গ্রামের
অতুল দাস (৭০) ধীরেন দাস (৪০) ফুলবাবু দাস(৩৫) সুমন দাস (৩০) এবং নজীর হোসেন (৭০) এর পরিবারে।
ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের কিসামত গোবদা গ্রামের সওয়াব আলীরস্ত্রী রেজিয়া বেওয়া(৬৫)বলেন,“করোনা ভাইরাসের কারনে এল্যা মোক কাইয়ো কাজত ন্যায় না,কাইল কোন বেলা একনা ভাত খাইছং মনে পরে না। মোর কষ্ট দেখি এ্যাই-ওই চাউল,টাউল দিলে ভাত পাক করং,না পাইলে না খায়া থাকা নাগে বাবা।বেটাটারো কাম নাই,বেটা-বেটার বউ,নাতিটা সহ অনেক কষ্ট করবার নাগছি”।
রাজারহাট বাজারের কুন্ড মিষ্টান্ন ভান্ডারে কাজ করে পরিবার চলত এনামুলের(৫২)। দোকান বন্ধ থাকায় প্রায় একমাস থেকে কর্মহীন হয়ে বাড়িতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে থাকার কথা জানালেন তিনি।একই অবস্থা রাজারহাট বাজারের শাপলা মিষ্টান্ন ভান্ডারের কর্মচারী আব্দুল হাকিম(৫৫) এর। কষ্টের শেষ নেই তার। পরিবার নিয়ে খাদ্য কষ্টে ভোগার কথা বললেনতিনি।চাকিরপশার ইউনিয়নের চকরাটারি গ্রামের রিকসা চালক সাইদুল(৪৫)জানান,সারাটা দিন রিকসা নিয়ে ঘুরে আয় হয়েছে ৯০টাকা। মাও সহ ৬জনখাওয়ার মানুষ। তাহলে বলেন,কি কষ্ট যাচ্ছে হামার”।
একই ইউনিয়নের সাকোয়া গ্রামের রিকসা চালক শমসের আলী(৫৫)খুলিয়াতারী গ্রামের নুরমোহাম্মদ (৪৫)রতিরাম কমলওঝাঁ গ্রামের মংলু চন্দ্র(৪০) চাকিরপশার পাঠক(নিয়াইচুঙ্গি)গ্রামের জয়নাল আবেদিন সবাই একই সমস্যার কথা জানান।খুলিয়াতারী গ্রামের নরসুন্দর জয়কান্ত (৭০) রাজারহাটের খোলা বাজারে পিড়িতে বসে চুল,দাড়ি কামানোর ব্যবসা তার। তিনি জানান,“বাজারে লোকনাই,আসলেও করোনার ভয়ে মানুষ চুলদাড়ি কাটপের চায় না,তার উপর্যা ফির পুলিশেরদৌড়া-দৌড়ি”।
উমর মজিদ ইউনিয়নের ঘুমারু ভিমশীতলা গ্রামের দিনমজুর মানিকমিয়া(৩৮)। পরিবারের সদস্য ৫জন। তিনি বলেন“প্রায় ১মাস ধরি কামবন্ধ,ছাওয়া-পাওয়া নিয়া খুব দুরবস্থায় আছি হামরা। একই কথা বলেন,ওই গ্রামের দিনমজুর নুর ইসলাম সহ অনেকে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাজিবুল করিম জানান,এখন পর্যন্ত উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৩৮ মে,টন চাউল ও ৯৩হাজার টাকার ত্রান সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে ৩৬মে.টন চাউল বরাদ্দ এসেছে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তালিকা তৈরীর কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাঃ যোবায়ের হোসেন জানান,কেউযেন কষ্ট না পায়,যথাসাধ্য চেষ্টা করছি এবং বরাদ্দের পরিমান বৃদ্ধির জন্য উর্দ্ধতনকর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
প্রকাশিত: সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০