• সর্বশেষ আপডেট

    মাথার চুল বিক্রি করে সন্তান্দের জন্য খাবার কিনে পৃথিবী জুড়ে আলোচিত এই মা



    বাচ্চাদের জন্য খাবার কিনতে প্রেমা সেলভাম যেদিন মাত্র দুই ডলারে তার মাথার চুল বিক্রি করে দেন, সেদিন ছিল তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন।

    তিন সন্তানের মা প্রেমা সেলভামের স্বামী এর কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করেছেন। তার মাথার ওপর ছিল বিরাট ঋণের বোঝা। সেই সঙ্গে ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে তীব্র হতাশা আর বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। এই বিষণ্নতা তাকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়।

    তবে স্বামীর মৃত্যুর পরও প্রেমা আশা হাল ছাড়েননি।কিন্তু যখন সন্তানদের খাবার জোগাড় করতে গিয়ে মাথার চুল কেটে বিক্রি করতে হলো, তারপর যেন প্রেমার কাছে আর কিছুই রইলো না। পাওনাদারদের ঋণ শোধ করা বা সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেবার মতো আর কোন উপায় রইলো না।

    তবে এর পর যা ঘটেছিল, তা পুরো ভারত জুড়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। 

    সংসারের পুরো দায়িত্বের সঙ্গে স্বামীর ঋণ পরিশোধের দায়ও এসে পড়লো প্রেমার কাঁধে। নিজের শিশু সন্তানদেরও কাজে নিয়ে যেতে হলো তাকে। এভাবেই চলছিল কিছুদিন।

    "যখন কাজে যেতাম, প্রতিদিন দুশো রুপির মতো আয় হতো, আমার পরিবারের খরচ চালানোর জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল।"

    কিন্তু তারপর প্রেমা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ফলে তার আয় কমে গেল। জ্বরে ভুগে তিনমাস তাকে বাড়িতে পড়ে থাকতে হলো। ততদিনে তার আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ, ঋণ বেড়ে গেছে অনেক।

    প্রেমার কোন ধরণের সম্পত্তি ছিল না। ছিল না কোন গয়না বা মূল্যবান কিছু, যেটা বিক্রি করতে পারেন।

    ''আমার কাছে এমনকি একটা দশ রুপির নোট পর্যন্ত ছিল না। কেবল কয়েকটি প্লাস্টিকের ঘটি-বাটি ছিল।''

    তারপর হঠাৎ প্রেমার মনে হলো, তার এমন কিছু আছে যা তিনি বিক্রি করতে পারেন।

    "আমার মনে পড়লো একটা দোকান আছে যারা মানুষের মাথার চুল কেনে।" বিশ্বে চুল রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ভারত শীর্ষে। 

    প্রেমা একটি দোকানে গিয়ে তার চুল বিক্রি করলেন দেড়শো রুপিতে (দুই ডলার)।

    এটি বিরাট কোন অংক নয়, বড় কোন শহরে এক বেলার খাবারও কেনা যাবে না এই টাকা দিয়ে। কিন্তু প্রেমার গ্রামে এটা একেবারে কম নয়।

    "আমি আমার তিন সন্তানের জন্য তিন প্যাকেট রান্না করা ভাত কিনেছিলাম।"

    কিন্তু এটি ছিল সাময়িক সমাধান। প্রেমা জানতেন, তার সামনে আর কোন বিকল্প আর নেই। তখন তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করার কথা ভাবছিলেন।

    নিজের জীবন শেষ করে দেয়ার জন্য একটা দোকানে গিয়ে কিছু একটা কেনার চেষ্টা করছিলেন প্রেমা। কিন্তু দোকানদার তার মানসিক অবস্থা দেখেই বুঝতে পারছিল, কী করতে চলেছেন তিনি। দোকানদার তার কাছে কিছু বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালো।

    প্রেমা বাড়িতে ফিরে আসলেন। সেখানে ভিন্ন কোন উপায়ে আত্মহত্যার কথা ভাবছিলেন তিনি। কিন্তু এবার তাকে বাঁচালেন তার বোন। কাছেই থাকতেন তিনি, এবং ঠিক ঐ সময়টাতেই সেখানে গিয়ে আটকালেন তাকে।

    এরপর এ খবর প্রথমে রাজ্যে তারপর ভারত জুড়ে এখন বিশ্বে, প্রেমার দুর্ভাগ্যের কথা শুনেছিলেন বালা মুরুগান তার এক বন্ধুর কাছ থেকে, যিনি একটি ইটভাটার মালিক। প্রেমার কাহিনি যেন তাকে নিজের পরিবারের খারাপ সময়টার কথা মনে করিয়ে দিল।এভাবে একের পর এক মানুষ সহযোগীতার হাত বাড়ালো ।খবর-বিবিসি'র

    gifs website


    প্রকাশিত: বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০