৭২ কিউসেক পানি তুলে নিচ্ছে ভারত (ভিডিওসহ)
১.৮২ কিউসেক পানি
দেয়ায় নদীর কোনো ক্ষতি
হবে কিনা তা নিয়ে
যখন বিতর্ক, তখন অভিযোগ উঠেছে
অনেক আগে থেকেই পাম্প
দিয়ে উজানে ফেনী নদীর পানি
তুলছে ভারত। সরেজমিনে ফেনী নদীর সীমান্তবর্তী
এলাকা ঘুরে এরকম পাম্পের
অস্তিত্ব দেখতে পেয়েছে বিবিসি।
সম্প্রতি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত
সফরে ফেনী নদীর পানি
নিয়ে দুই দেশের মধ্যে
সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গত ৫
অক্টোবর নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে
এ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় এবং বৈঠকের
পর এ বিষয়ে একটি
সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
ওই এমওইউর আওতায় দুই দেশের অভিন্ন
ফেনী নদী থেকে ১
দশমিক ৮২ কিউসেক পানি
তুলে নেবে ভারত। তিস্তার
মতো ফেনী নদীর পানিবণ্টন
চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হলেও
তা ২০১১ সাল থেকে
ঝুলে ছিল। ত্রিপুরা রাজ্যের
সাবরুম শহরে খাবারের পানি
সংকট মোকাবেলায় নেওয়া প্রকল্পের জন্য ভারত ফেনী
নদী থেকে পানি তোলার
ব্যাপারে বাংলাদেশের সম্মতির অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। ইস্যুটি বেশ কয়েক বছর
ধরে ঝুলে থাকার পর
বাংলাদেশ এ বিষয়ে সম্মতি
দিয়েছে। তবে গত আগস্ট
মাসে ঢাকায় দুই দেশের যৌথ
নদী কমিশনের (জেআরসি) সচিব পর্যায়ের বৈঠকেই
ফেনী নদী থেকে ভারতকে
পানি দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল বলে জানা যায়।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে
বলা হয়, বাংলাদেশের পানি
দেওয়ার সিদ্ধান্তে ভারতের ত্রিপুরার মানুষ খুশি হলেও খুশি
নয় বাংলাদেশের মানুষ। ফেনী নদীর তীরে
দাঁড়িয়ে রামগড়ের বাসিন্দা মং সং চৌধুরী
বলেন, যে চুক্তি করলো
আমার মতে এটা ভালো
হলো না। আমাদের দেশ
এতে কতটা উপকৃত হবে
তা আমি জানি না।
এ নদীর ভাটিতে মুহুরী
সেচ প্রকল্পে পানির একটা বড় উৎস
ফেনী নদী। এ প্রকল্পের
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধাভোগী
৬০ হাজার একর কৃষিজমি, হাজারো
মৎস্য খামার। ফেনী নদীর ভাটিতে
খামার গড়েছেন মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. সুলাইমান।
তিনি জানান, তিস্তা চুক্তি ছাড়া ফেনী নদীর
পানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাকে আহত করেছে।
তিনি বলেন, যে পানিটা আছে
তা দিয়ে এখানে মোটামুটি
চলে। ইরিগেশনের কাজ চলে। তবে
এখানে থেকে কেউ শেয়ার
করলে অভিয়াসলি অ্যাফেক্টেড হবে।
সরকারি
তথ্যমতে, ফেনী নদীর উৎপত্তি
খাগড়াছড়ির পাহাড়ে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত
এলাকায়। উৎপত্তিস্থল থেকে বাংলাদেশ ও
ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে এ নদী ভাটিতে
বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। নদীর উজানে সীমান্তবর্তী
এলাকায় দেখা যায়, কোনো
চুক্তি ছাড়াই নদীতে পাম্প বসিয়ে পানি তোলে ভারত।
অথচ অভিযোগ রয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় চাইলেই নদীতে পাম্প বসিয়ে পানি তুলতে পারেন
না বাংলাদেশের কৃষকরা।
স্থানীয়
একজন পানির এক মোটা একটা
পাইপ (ভারতীয় অংশে) দেখিয়ে বলেন, এই যে পানির
লাইনটা দেখতেছেন, ২০০২ সাল থেকে
এরা পানি বহন করতেছে।
ওরা সরকারিভাবে এই পানি নিতেছে।
জানা
যায়, বাংলাদেশ অংশে এমন পানির
পাম্প আছে মাত্র তিনটি।
রামগড়ে
অবস্থিত ৪৩ বিজিবি ব্যাটলিয়নের
অধিনায়ক লেফ. কর্নেল তারেকুল
হাকিম বিবিসিকে জানান, সীমান্ত ৩৬টি পাম্প মেশিন
দিয়ে পানি তুলছে ভারত।
নো ম্যান্স ল্যান্ড থেকে এগুলো সরিয়ে
নিতে বিএসএফ এর সঙ্গে বৈঠকে
বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও পানি তোলা
বন্ধ হয়নি।
পানি
সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক ম ইনামুল হক
ভারতের এই পানি তুলে
নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, নদী থেকে খুব
সহজেই পানি তোলা যাচ্ছে,
ডিপে যাওয়া লাগছে না। এক একটা
পাম্প মিনিমাম দুই কিউসেক। যদি
৩৬টা পাম্প হয়ে থাকে তো
৭২ কিউসেক পানি তারা অলরেডি
তুলছে।
পানি
উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের হিসেবে, বর্ষা মৌসুমে এ নদীর পানিপ্রবাহ
থাকে ৮ হাজার থেকে
১০ হাজার কিউসেক। আর শুষ্ক মৌসুমে
থাকে প্রায় ৫০ কিউসেক। তবে
ভারতীয় তথ্যে, শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ থাকে ১০৯ কিউসেক।
ওয়ারপোর
সাবেক মহাপরিচালক এনামুল হক বলেন, ১.৮২ কিউসেক পানি
তুলে নেওয়ার যে চুক্তি হয়েছে
সেটা তেমন কোনো ক্ষতি
করবে না। ১২০ কিউসেক
পানি আমাদের ছিল, সেটা এখন
৫০-এ নেমে এসেছে।
কিন্তু ১.৮২ কিউসেক
যদি হয় একটা পাম্পের
জন্য, তাহলে ভারত অবৈধভাবে যে
৩৬টি পাম্প বসিয়ে পানি নিচ্ছে সে
বিষয়ে কী ব্যবস্থা।
পাম্প
নিয়ে ফেনী থেকে পানি
তুলে নেওয়ার বিষয়ে যৌথ নদী কমিশনের
বাংলাদেশের সদস্য বলছেন, এটি চুক্তি বহির্ভুত।
কে এম আনোয়ার হোসেন
অডিও বার্তায় বলেন, সরকারি পর্যায়ে এ ধরনের কোনো
চুক্তি বা সিদ্ধান্ত নেই।
তবে চুক্তি বহির্ভুত যে নদীগুলো আছে
সেখানে এসব হয়ে থাকে।
চুক্তির পর সেগুলো যেন
আর না হয় সে
বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর
ভবিষ্যতে সীমান্তবর্তী আরো ৭টি নদীর
পানি বণ্টন চুক্তি হতে যাচ্ছে, তখন
এগুলোর সমাধান হয়ে যাবে।
যৌথ
নদী কমিশন জানাচ্ছে, ৭টি শর্তে এ
পানি দিতে সম্মত হয়েছে
বাংলাদেশ। তবে দু’দেশের
অভিন্ন নদী হিসেবে ফেনী
নদীর যে পানি বণ্টন
চুক্তি সেটি হবে ভবিষ্যতে।
পানি
সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা
হয়, এই ১.৮২
কিউসেক পানি শুধুমাত্রই পানের
জন্য বিধায় মানবিক ও প্রতিবেশীসুলভতাকে বিবেচনা করে
তাতে সম্মতি দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পানির
পরিমাণ হলো ১.৮২
কিউসেক যা কিনা পরিমাণে
খুব সামান্য, যেখানে এক কিউসেক সমান
২৮.৩২ লিটার।
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৯