আমাকে পঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হয়েছে : তসলিমা নাসরিন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক- ভারতে ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। পড়ে গিয়ে পায়ের হাড় ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। এরপর চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে তাঁর ‘হিপ জয়েন্ট’ বাদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তসলিমা নাসরিন।ভারতে কলকাতায় বসবাসকারী তসলিমার অভিযোগ, সার্জনের ভুল সিদ্ধান্তে আজ তিনি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হতে চলেছেন। কেন ‘ক্রিমিনাল টিমের ট্র্যাপে’পড়লেন, এ জন্য নিজেকে ধিক্কার দেন তিনি।ফেসবুকে গত বুধবার এক দীর্ঘ পোস্টে তসলিমা নাসরিন এ অভিযোগ করেন। তবে তিনি সেই চিকিৎসক বা হাসপাতালের নাম উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেন, চিকিৎসক শুরুতেই ‘হিপ রিপ্লেসমেন্ট’ চিকিৎসায় না গেলেও পারতেন।ফেসবুক পোস্টে তসলিমা লিখেছেন, ‘হাসপাতালের বেডে আমার শুয়ে থাকার ছবি দেখে অনেকে ভেবেছে আমার বোধ হয় হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়েছে। না, সেসব কিছুই হয়নি।...সেদিন ওভারসাইজ পাজামা পরে হাঁটছিলাম ঘরে, পাজামা চপ্পলে আটকে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম। অগত্যা যা করতে হয়, করেছি। হাঁটুতে ব্যথা হচ্ছিল, আইস্প্যাক দিয়েছি, ভলিনি স্প্রে করেছি।’তসলিমা ভেবেছিলেন, হয়তো হাঁটুর লিগামেন্টে চোট লেগেছে। এক্স-রে করার জন্য যান হাসপাতালে। কিন্তু এক্স-রে আর সিটিস্ক্যান করে চিকিৎসক জানান, ফিমারে চিড় ধরেছে। এ নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর যুক্তি তর্ক হয়। কিন্তু শেষমেশ অস্ত্রোপচার করে তাঁর ‘হিপ জয়েন্টই’ বাদ দেন চিকিৎসক।বৃহস্পতিবার আরেক পোস্টে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, ‘ধিক্কার দিচ্ছি নিজেকে। ধিক্কার দিচ্ছি এতকালের আমার মেডিকেল জ্ঞানকে। আমাকে হাসপাতালে মিথ্যে কথা বলা হয়েছিল যে আমার হিপ বোন ভেঙেছে। আমার কোনো জয়েন্ট পেইন ছিল না, জয়েন্ট ডিজিজ ছিল না। আমাকে মিথ্যে কথা বলে, ফিমার ফ্র্যাকচারের ট্রিটমেন্টের নামে আমাকে হিপ জয়েন্ট কেটে, ফিমার কেটে ফেলে দিয়ে আমাকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।তসলিমা নাসরিন আরও লিখেছেন, ‘ধিক্কার দিচ্ছি আমি কেন ক্রিমিনাল টিমের ট্র্যাপে পড়লাম। আজ আমি এক্সরে রিপোর্ট দেখলাম আমার। আমার কোথাও কোনও ফ্র্যাকচার হয়নি সেদিন। ফ্র্যাকচার হয়নি বলে আমার হিপ জয়েন্টে কোনও ব্যথা ছিল না, কোনও সুয়েলিং ছিল না।’তাঁকে বাংলাদেশি মুসলিম রোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তসলিমা। তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে বাংলাদেশি মুসলিম রোগী হিসেবে দেখা হয়েছে। যার কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে অপারেশান করা হবে। সেই নিরীহ রোগী দেশে ফিরে যাবে, এবং ভেবে সুখ পাবে যে তার ট্রিট্মেন্ট হয়েছে। আগের পোস্টে ‘ভুল চিকিৎসার’ পুরো দায় চিকিৎসকের ওপর দিয়ে তসলিমা নাসরিন লিখেন, ‘ফ্র্যাকচারের ফিক্সেশান ট্রিটমেন্ট না করে আমার হিপ রিপ্লেসমেন্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। আমি বাধা দিয়েছি। তিনি বারবার এসেছেন আমাকে কনভিন্স করতে। তিন চারজন ডাক্তারকে পাঠিয়েছেন কনভিন্স করতে। আমাকে কোনও সময় দেওয়া হয়নি চিন্তা করতে, কারও সঙ্গে পরামর্শ করতে বা শুভাকাংখীদের কারো সঙ্গে কথা বলতে।
এই পোস্টে যেসব কারণে হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হয় সেগুলোর একটি তালিকা দিয়েছেন ডাক্তারি পড়া এই নারীবাদী লেখিকা।