• সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ

    প্রভাবশালী মহলের’ আশ্বাসে দেশে এসেছিলেন দুই বোন

     

    কিছুই হবে না, একটি প্রভাবশালী মহলের এমন আশ্বাসেই দেশে এসেছিলেন পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ। ওই মহলটি নিজেদের সরকারের ‘খুব কাছের’ বলেও পরিচয় দিয়েছিল। এই দুই নারীকে প্রভাবশালী ওই মহলটি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছিল, ‘কানাডিয়ান পাসপোর্ট থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করতে পারবে না।’ আরও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, ‘প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করা হবে, তারা টেরও পাবে না।

    ‘পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নীরবেই কানাডা ফিরে যেতে পারবে’—এই ভরসা পেয়েই দুই বোন শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ ২৮ জুলাই ঢাকায় আসেন। আসার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ আদালতও। অবশেষে এক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে কানাডা ফিরে যাওয়ার সময় র‌্যাব সেই দুই বোনকে গ্রেফতার করে।

    র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই নারী জানিয়েছেন, তাদের বলা হয়েছিল পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে না। তাদের ভাই ওমর পুরো বিষয়টি নিয়ে কথিত ওই প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গ্রেফতার এড়ানোর কাজটি করেছিলেন। ওমর নিজেও অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত। তিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। কানাডা থেকে বাংলাদেশে এসে এই দুই নারী এক মাস বিয়েসহ বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।


    চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদকে গ্রেফতারের নির্দেশনা দিয়েছিলেন আদালত। এরপরও প্রভাবশালী ওই মহলের আশ্বাসে গত ২৮ জুলাই তারা দেশে আসেন। বিভিন্ন পারিবারিক কার্যক্রম শেষ করে তারা গত ২৪ আগস্ট ভোরে কানাডা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে রওনা হন। এ সময় একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব তাদের গ্রেফতার করে।

    গ্রেফতারের পর উচ্চ আদালতে দুই নারীকে হাজির করে। দীর্ঘ সময়ে অর্থ আত্মসাৎকারী এই দুই নারী দেশে থাকলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করায় আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে।

    হাইকোর্টের বিচারপতি আহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার র‍্যাব ফোর্সেসের সাদা পোশাকে টিম দুই নারীকে গ্রেফতার করায় সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত পেতে সহায়তা হবে বলে মন্তব্য করেন। আদালতের আদেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করার মাধ্যমে সাধারণ জনগণ এবং রাষ্ট্রের আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধারে র‌্যাব বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এমনকি র‌্যাবের এই কাজকে আদালতের আদেশে সন্নিবেশিত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।

    দুই বোনকে গ্রেফতারের পর তাদের পাসপোর্ট হেফাজতে নেয় র‌্যাব। তাদের পরিবারের ঋণখেলাপি বাকি ৯ সদস্য পাসপোর্ট জমা না করা পর্যন্ত দুই বোন শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদের পাসপোর্ট জমা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখতে বলা হয়েছে।

    অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গ্রেফতার পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদকে প্রায় ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের ৫ শতাংশ (প্রায় ১০ কোটি টাকা) পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

    দুই বোন
    র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ
    র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শারমিন ও তানিয়া দুই দশক ধরে কানাডায় থাকেন। পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৮ জুলাই তারা দেশে আসেন। ২৪ আগস্ট তাদের দেশত্যাগের পরিকল্পনা ছিল। এর আগেই ভোরে দুই জনকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। দুই বোন কানাডার নাগরিকত্ব লাভের পাশাপাশি সেখানে বাড়িসহ বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছে। যা বাংলাদেশ থেকে তারা আত্মসাৎ করেছিলেন।

    তাদের বাবা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিন পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী। তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পরিচালক ছিলেন। ওই সময়ে পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে-বেনামে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

    চলতি বছরের ৭ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির ঋণখেলাপিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে উপস্থিত না হওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল আদালত তাদের গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা  বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়।

    গ্রেফতার দুজন তাদের বাবা খবির উদ্দিনের মাধ্যমে ঋণ নেন। শারমিন ৩১ কোটি ও তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

    ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে ২০১৯ সালে কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় আদালত পি কে হালদারসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

    প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৬ হাজার ব্যক্তি বা শ্রেণির আমানতকারী রয়েছেন এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এ অর্থের একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা বিভিন্ন নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
    প্রকাশিত শুক্রবার ২৬ আগস্ট ২০২২