• সর্বশেষ আপডেট

    দুর্নীতির মামলায় প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সর্বোচ্চ সাজা চায় দুদক

    অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা রায় ঘোষণার কথা রয়েছে আগামীকাল বুধবার (২৭ জুলাই)। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে মামলাটির রায় ঘোষণা হবে বলে জানা গেছে।

    মামলায় প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে ৫টি ধারায় সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছে দুদক পক্ষ। অন্যদিকে আসামিপক্ষ বলছে, অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। আসামিরা খালাস পাবে।

    দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক মাহমুদ  বলেন, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সবকিছুর কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপন ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। এছাড়াও ওসি প্রদীপ ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্ররোচনার অভিযোগ আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। প্রদীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংসহ একাধিক অভিযোগ তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা চাই আসামিদের বিরুদ্ধে ৫টি ধারায় আনিত অভিযোগের প্রত্যেক ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।  

    প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সমীর দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী থানার সেলিম এলাহীর অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। সেই সেলিম এলাহীকে মামলায় সাক্ষী করা হলেও তিনি আদালতে সাক্ষী দেননি। আদালতে ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে দুই জন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে আদালতে জেরা করা হয়। বাকি ২২ জন সাক্ষীর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেছে। তারা মামলা সম্পর্কে অবগত নয়। আমাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষীতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারমানকে হাজির করা হয়েছিল।  

    তিনি আরও বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষীর মাধ্যমে মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আসামিদের আয়কর বিবরণী আদালতে দাখিল করা হয়েছে। পাশাপাশি আসামির বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তাহলে প্রদীপ কিভাবে মামলার আসামি হয়? দুদক ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আশাকরছি ন্যায়বিচার পাবো।

    দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী, ২০০৪-এর ২৬ (২) ধারা ৩ বছর কারাদণ্ড, ২৭ (১) ধারা ৩ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ধারা ১০ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় ৭ বছরের কারাদণ্ড ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

    এর আগে গত ১৮ জুলাই  চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে এ মামলায় দুদকপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর বিচারক ২৭ জুলাই রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। গত ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ১৭ ফেব্রুয়ারি চুমকির বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। তবে এই মামলায় প্রদীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিপরীতে উচ্চ আদালতে একটি আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় ঐদিন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি। পরবর্তীতে গত ৪ এপ্রিল আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ায় ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলায় ২৯ জনকে সাক্ষী করা হলেও দুদকের পক্ষে ২৪ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। আসামি পক্ষের ২ জন সাফাই সাক্ষীও সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলা শুরু থেকে চুমকি কারন পলাতক থাকলেও গত ২৩ মে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ দিন তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।  

    ২০২০ সালের ২৩ অগাস্ট দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূতসম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়। তদন্তের পর টাকার অংকে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ২০২১ সালের ২৮ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর আসামি প্রদীপের উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। সম্পদ বিবরণীতে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকারজ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়। প্রদীপের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করতে নগরের কোতোয়ালী থানাধীন পাথরঘাটা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ি শ্বশুরের নামে নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ওই বাড়িটি প্রদীপের শ্বশুর চুমকির নামে দান করেন। দানপত্র দলিল হলেও বাড়িটি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কর্তৃক অর্জিত। আয়কর রিটার্নে আসামি চুমকি কমিশন ব্যবসা এবং বোয়ালখালী উপজেলায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া ৫টি পুকুরে মাছের ব্যবসার যে আয় দেখানো হয়েছে তা-ও প্রদীপ দাশের অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে ভুয়া ব্যবসা দেখানো হয়েছে। প্রদীপ তার স্ত্রীকে কমিশন ব্যবসায়ী ও মৎস্য ব্যবসায়ী সাজিয়ে অবৈধ সম্পদ বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।

    অভিযোগপত্রে যেসব সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো- নগরের পাথরঘাটায় একটি ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনার গয়না, একটি কার ও একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব এবং কক্সবাজারে চুমকির নামে একটি ফ্ল্যাট।

    প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২২