• সর্বশেষ আপডেট

    ভাঙা মন নিয়েই স্বপ্ন দেখছেন ডলি


    মিরপুরে ব্যস্ততার ভিড়েও ডলি রানী সরকারকে আলাদা করা যাচ্ছে সহজেই। স্পিন আর বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্প চলছে।

    তাদের সঙ্গেই হচ্ছে লেভেল-টু কোচিং কোর্স। আফতাব আহমেদ, নাজমুল হাসানরা এই কোর্সের শিক্ষার্থী। তাদেরই সহপাঠী হিসেবে শিখছেন ডলিও।  
    জাতীয় দলে খেলতে চেয়েছিলেন, পারেননি। হৃদয়ে স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার ক্ষতটা এখনও বয়ে বেড়ান। সঙ্গে নতুন স্বপ্ন দেখেন, পূরণের চেষ্টার অনেক ধাপের একটি হিসেবে করছেন এই কোচিং কোর্স।

    ছোটবেলায় পাড়ার ক্রিকেটে ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে স্বপ্ন বোনার শুরু। এরপর ভর্তি হন বিকেএসপিতে। জাতীয় দলের ২০ জনের ক্যাম্পেও ডাক পেয়েছিলেন, কিন্তু থামতে হয়েছে সেখানেই। পরে বিকেএসপিতেই চাকরি হয়ে গেছে, ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা আর এগোয়নি।  

    ভুগতে থাকা জীবনে স্বচ্ছলতা এলেও হৃদয়ের ক্ষতটা মোছেনি ডলির। নিজে জাতীয় দলে খেলতে পারেননি, কিন্তু তার ছাত্র-ছাত্রীরা খেলবেন এমন স্বপ্ন মনে লুকিয়ে পথ চলেন তিনি।  

    মিরপুরের ডাইনিংকে সাজিয়ে-গুছিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে লেভেল-টু কোচিং কোর্সের জন্য। ওই রুমের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে ডলি যেন হারালেন অন্য ভূবনে, ‘এখন তো বিকেএসপি ও ক্রিকেট বোর্ড অনেক সুযোগ সুবিধা তৈরি করে দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের সময় এমন ছিল না। নিজে নিজে করতাম, মানুষের কথা-অবজ্ঞা-অবহেলা এসব পেরিয়েই বড় হয়েছি। ’

    ‘আমি ছেলেদের সঙ্গে খেলতাম। ছেলেরা সাপোর্ট দিয়েছে বলেই এতদূর এসেছি। মেয়েদের কাছে যতটা না অনুপ্রেরণা পেয়েছি তার দ্বিগুণ পেয়েছি ছেলেদের কাছ থেকে। কারণ মাঠে যখন খেলতাম তখন ১০ জন ছেলের সঙ্গে একজন মেয়ে। পাড়ায় পাড়ায় যখন খেলা হতো তখন আমাকে নিয়েই দল করা হতো। আমাকে বাদ দিলে অনেকেই খেলতে চাইতো না। ওরা আমাকে সাহায্য করেছে। ’

    ডলি এরপর বলেন বাধা-বিপত্তির কথাও, ‘আশেপাশে অনেকে ছিল। বাড়ি থেকে বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে বলতো ছেলেদের সঙ্গে কেন মেয়েকে খেলতে দিলেন। আমার এখন স্বপ্ন একটাই নিজে কখনো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাইনি তো, তাই আমি চাই আমার মাধ্যমে জাতীয় দলের খেলোয়াড় তৈরি হোক। ’ 

    খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শেষে বিকেএসপির চাকরিটাতে ভালোই চলছিল ডলির জীবন। কিন্তু তার ইচ্ছেটা আরও বড়। জাতীয় দলে তার হাতে তৈরি খেলোয়াড়রা খেলবেন- স্বপ্নটা এমন।  

    কোচিংয়ের হাতেখড়িটা কীভাবে হলো? ডলিই শোনালেন সেই গল্প, ‘২০১৪ সালে খেলাকে বিদায় বললাম। তারপর থেকে কোচিংয়ে। আমি বিকেএসপির স্টুডেন্ট ছিলাম। সেখান থেকেই কোচিংয়ে আসার অনুপ্রেরণা পাই। আমাদের বিদেশি কোচ মানজিৎ সিং স্যার স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় আমাদের যে এডমিশন হয় সেখানে আমাকে নিয়ে গিয়ে সিলেকশনগুলো দেখতেন, কেমন করি। এরপর বিকেএসপিতে সার্টিফিকেট কোর্স ও ইন্ট্রোডাকশন কোর্স করেছি। তারপর বিসিবির আন্ডারে লেভেন ওয়ান ও লেভেল টু করছি এখন। ’

    লেভেল-টু কোচিং করতে এসে অনেকেরই সান্নিধ্য পেয়েছেন। ক্লাস নিয়েছেন কিংবদন্তি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ, অভিজ্ঞ কোচ জেমি সিডন্স ও শন ম্যাকডরমট। ডলির জন্য এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম। তার কাছে এটা ‘আউটস্ট্যান্ডিং। ’

    'এ জায়গায় না এলে ওনাদের সংস্পর্শে আসা হতো না। দারুণ একটা সুযোগ, বিসিবি আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে এখানে লেভেল টু করার জন্য, এ কারণে ওনাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা আউটস্ট্যান্ডিং। ’

    কোচ হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? ডলির জবাব, ‘ন্যাশনাল টিমেই কাজ করার ইচ্ছে আমার। প্রিমিয়ার লিগে আমি রূপালী ব্যাংকের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করছি। অবশ্যই সুযোগ আসলে ন্যাশনাল টিমের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ’

    ডলির স্বপ্নের সঙ্গে শোনা হয় অনেক না বলা কথাও। নারী ক্রিকেট কীভাবে এগোচ্ছে, কী অবদান রাখতে চান; কেন তারা আড়ালে থেকে যান- এসব গল্প বলতে বলতে ডলি শোনান আশার কথা। অপবাদ, বঞ্চনা আর স্ট্রাগলকে পেছনে ফেলে ক্যারিয়ারটাকে এতটুকু এগিয়ে এনেছেন। শত মানুষের ভিড়েও নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। লড়াইও করছেন অনেকটা পথ ধরে। ডলি নিশ্চয়ই জানেন- তার স্বপ্ন আর লড়াইয়ে এ দেশের অনেক মেয়েরাও এগিয়ে চলে!

    প্রকাশিত: সোমবার ৩০ মে ২০২২