• সর্বশেষ আপডেট

    বিশ্ব ফুটবলকে ঝুঁকিতে ফেলছে ম্যানসিটি-পিএসজি


    বিশ্ব ফুটবলকে ঝুঁকিতে ফেলছে ম্যানসিটি-পিএসজি!
    ইউরোপিয়ান ফুটবলে মাঠের বাইরেও দীর্ঘদিন থেকে অর্থের খেলা চলছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দুই ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মালিকানাধীন দুই ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজি।


    অঢেল অর্থ ঢেলে তারা বিশ্বের নামীদামী ফুটবলারদের সহজেই দলে ভেড়াচ্ছে। এমনকি এজন্য তাদের লাভ-লোকসানের হিসাবও করতে হয় না।  
    সিটি ও পিএসজির বার্ষিক লাভ-লোকসানের হিসাব দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন যে, তারা ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে মেনে চলে। এমনকি, গত ১০ বছরের হিসাব বের করলে দেখা যাবে- পিএসজির লোকসান ৯৮৮ মিলিয়ন ইউরো। আর সিটির ক্ষেত্রে এই লোকসানের পরিমাণ ১০০ কোটি ইউরোর বেশি। অন্যদিকে বার্সেলোনার মতো স্প্যানিশ জায়ান্ট কোনোমতে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ লা লিগার আর্থিক নিয়ন্ত্রণ।

    গত ১০ বছরে ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব:

    ১. ম্যানচেস্টার সিটি: ১.৬৫ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ের বিপরীতে আয় ৬০৬ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ ১০ বছরে তাদের লোকসান ১.০৪৬ বিলিয়ন ইউরো।

    ২. পিএসজি: ব্যয় ১.৪৩৮ বিলিয়ন ইউরো এবং আয় ৪৫০ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ লোকসান ৯৮৮ মিলিয়ন ইউরো।  

    ৩. জুভেন্টাস: ব্যয় ১.৫৭৮ বিলিয়ন ইউরো এবং আয় ১.০২৫ বিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ লোকসান ৫৫৩ মিলিয়ন ইউরো।

    ৪. বার্সেলোনা: ব্যয় ১.৫৩৫ বিলিয়ন ইউরো এবং আয় ৯৯৩ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ কালাতান জায়ান্টদের লোকসান ৫৪২ মিলিয়ন ইউরো।

    ৫. লিভারপুল: ব্যয় ১.০৮৯ বিলিয়ন ইউরো এবং আয় ৬৬০ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ লোকসান ৪২৯ মিলিয়ন ইউরো।

    ৬. বায়ার্ন: ব্যয় ৭৯৬ মিলিয়ন ইউরো এবং আয় ৩৭৪ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ লোকসান ৪২২ মিলিয়ন ইউরো।

    ৭. রিয়াল মাদ্রিদ: ব্যয় ১.০৯৮ বিলিয়ন ইউরো এবং আয় ৯০৩ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ লোকসান ১৯৫ মিলিয়ন ইউরো।

    উপরের খরচের হিসাব দেখলেই বোঝা যায়, পিএসজি ও ম্যানসিটির কাছে অর্থ কোনো ব্যাপার নয়। শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করার মতো খেলোয়াড় কেনা তাই তাদের জন্য কঠিন কোনো কাজ নয়। এমনটা তারা করেও আসছে বহুদিন থেকেই। কিন্তু কিলিয়ান এমবাপ্পের ট্রান্সফার ইস্যু বিষয়টিকে আরও সামনে এনেছে।

    বহু জল্পনার পর পিএসজির সঙ্গেই সঙ্গেই চুক্তি নবায়ন করেছেন এমবাপ্পে। অথচ গত মৌসুমের শুরু থেকেই তার রিয়ালের যাওয়া নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। এমনকি বিশ্বকাপজয়ী ফরোয়ার্ড নিজেই অনেকবার মাদ্রিদে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তাকে রেখে দিতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে পিএসজি, তা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু ক্লাবটি সেই অর্থের পরিমাণ জানায়নি।  

    এমবাপ্পেকে রেখে দিতে পিএসজি যে পন্থা অবলম্বন তা নিয়ে বেশকিছু ক্লাব প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে স্প্যানিশ এবং ইতালিয়ান লিগ বিষয়টা নিয়ে আপত্তি তুলেছে। এমনকি লা লিগা উয়েফার কাছে পিএসজি ও লিগ ওয়ানের বিপক্ষে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ফরাসি লিগ ওয়ান তাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেছে। কিন্তু খোদ ফরাসি ফুটবলেই পিএসজির প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ লিগের শীর্ষ বেতনভোগী ২০ ফুটবলারের ১৮ জনই পিএসজির।  

    লিগ ওয়ানে পিএসজির আর্থিক প্রভাবের বিষয়টি এখন বাকি লিগগুলোতেও পড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি আর্লিং হল্যান্ডকে দলে ভিড়িয়ে ম্যানসিটিও পিএসজির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ বেতনভোগী দুই ফুটবলারই এখন তাদের- হল্যান্ড ও কেভিন ডি ব্রুইন।  

    ইউরোপীয় ফুটবলে (সবমিলিয়ে) সর্বোচ্চ বেতন পাচ্ছেন যারা:

    ১. এমবাপ্পে (পিএসজি): ১০০ মিলিয়ন ইউরো (বিভিন্ন সূত্রমতে)
    ২. নেইমার (পিএসজি): ৪৯ মিলিয়ন ইউরো
    ৩. মেসি (পিএসজি): ৪০ মিলিয়ন ইউরো
    ৪. হল্যান্ড (সিটি): ৪০ মিলিয়ন ইউরো
    ৫. কেভিন ডি ব্রুইন (সিটি): ৪০ মিলিয়ন ইউরো
    ৬. রোনালদো (ম্যানইউ): ৩১ মিলিয়ন ইউরো
    ৭. হ্যাজার্ড (রিয়াল মাদ্রিদ): ৩০ মিলিয়ন ইউরো
    ৮. বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ): ২৪ মিলিয়ন ইউরো
    ৯. লেভানডোভস্কি (বায়ার্ন): ২৩ মিলিয়ন ইউরো
    ১০. দাভিস দে গিয়া (ম্যানইউ): ২৩ মিলিয়ন ইউরো

    চোখ কপালে তুলে ফেলার মতো অর্থের লেনদেন: 

    পেপ গার্দিওলা আসার পর থেকে ম্যানসিটির আর্থিক বিনিয়োগের চিত্র বদলে যেতে শুরু করে। তার সময়ে এক কোটি ইউরোর বেশি বিনিয়োগ করে মালিকপক্ষ। ডিফেন্ডারদের পেছনেই তারা খরচ করেছে ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি। এর মধ্যে রুবেন দিয়াস (৬৮ মিলিয়ন ইউরো), এমেরিক লাপোর্তে (৬৫ মিলিয়ন ইউরো), হুয়াও কানসেলো (৬৫ মিলিয়ন ইউরো), বেনিয়ামিন মেন্দি (৫৭ মিলিয়ন ইউরো), নিকোলাস ওতামেন্দি (৫৫ মিলিয়ন ইউরো), জন স্টোনস (৫৫ মিলিয়ন ইউরো) ও কাইল ওয়াকার (৫২ মিলিয়ন ইউরো)-এর মতো ডিফেন্ডারদের পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে সিটিজেনরা।


    প্রকাশিত: সোমবার ০৬ জুন ২০২২