• সর্বশেষ আপডেট

    ইউএনও’র বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

     

    টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে বিয়ের আশ্বাসে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদনের পাশাপাশি অভিযুক্তকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন ভুক্তভোগী।

    অভিযুক্ত মনজুর হোসেন (পরিচিতি নং-১৭৩০০) বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তার সাবেক কর্মস্থল বাসাইল ও বর্তমান কর্মস্থলে সমালোচনার ঝড় বইছে।ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী ও তার লিখিত অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে বাসাইলের ইউএনও থাকাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে ইউএনও’র পরিচয় হয়। 

    একপর্যায়ে ইউএনও ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বাসাইলস্থ সরকারি বাসভবনে নিয়ে যায়। সেখানে বিয়ের আশ্বাসে তাকে ধর্ষণ করে। এরইমধ্যে একাধিক স্থান থেকে ওই ছাত্রীর বিয়ের প্রস্তাব এলে ইউএনও’র পরামর্শে তা প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী ও মনজুর হোসেন টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী কলেজের পাশে পাওয়ার হাউজের পেছনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করে। সেখানে তারা দুই মাস থাকার পর বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে চাপ দেন ভুক্তভোগী। 

    তখন ইউএনও জানায়, ভারত ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে বিয়ে করবে।আরও জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে মনজুর হোসেনের পরিচিত জোবায়েত হোসেন ও সরকারি গাড়ির চালক বুলবুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসা ভিসায় ভারত যায়। ওই বছরের ১২ অক্টোবর তারা ভারত থেকে দেশে ফের। ভারতে অবস্থানকালে তারা অধিকাংশ সময় নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েছে। ভারতের হায়দ্রাবাদে হাসপাতালের কাছে একটি বাসা নিয়ে সেখানে অবস্থান করে তারা দুই জনেই চিকিৎসা নেয়। ওই সময় কলেজছাত্রী ইউএনও’র ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে জানতে পারে মনজুর হোসেন বিবাহিত এবং তার দুই সন্তান রয়েছে। ইউএনও’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ের বিষয়টি গোপন করেছে বলে জানায়। ১২ অক্টোবর ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পর তারা যার যার বাড়িতে চলে যায়। 

    পরে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে তারা আবার দেখা করে এবং মনজুর হোসেন পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব দেন।কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও বিয়ে না করায় পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ভুক্তভোগী। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।এদিকে, ওই ছাত্রীকে আইনি সেবা দিচ্ছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

     তিনি ওই ছাত্রীর পক্ষে গত ২২ মার্চ ইউএনও মনজুর হোসেনের কাছে আইনি নোটিশ পাঠান।বাসাইল উপজেলা ইউএনও’র গাড়িচালক বুলবুল হোসেন বলেন, ‘আমি তৎকালীন ইউএনও স্যারের হুকুম পালন করেছি। কাজের অংশ হিসেবে ওই ছাত্রীসহ তিন জনকে বেনাপোল সীমান্তে নিয়ে গেছি। এর আগেও ওই নারী ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে একাধিকবার এসেছেন।’ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার জীবন তো শেষ, আমি কোথায় যাবো। আমি তো এই লাইফ চাইনি। সামাজিকভাবে যে আমি এতটা হেনস্তা হচ্ছি, আমি তো এখানে দোষী না। আমার সঙ্গে যে সম্পর্ক ছিল কোনও দিন সে বলতে পারবে না তার কাছে কোনও টাকা চেয়েছি। একটা টাকাও তিনি আমাকে দেয়নি, কিন্তু অনেকে টাকার কথা বলছে।

    তিনি আরও বলেন, ‘আমার হয়ে লড়ছেন ব্যারিস্টার সুমন। আমার পক্ষে হাইকোর্ট থেকে ব্যারিস্টার সুমন লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। তদন্ত কমিটি আমাকে এবং ইউএনও মনজুর হোসেনকে বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। আমরা সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম। আমি সব প্রমাণ সেখানে উপস্থাপন করেছি।অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউএনও মনজুর হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

    টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও তদন্ত কমিটির সদস্য সোহানা নাসরিন জানান, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত চলছে। আগামী ১৪ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত কমিটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো যাবে।

    প্রকাশিত: শুক্রবার ০৮ এপ্রিল ২০২২