• সর্বশেষ আপডেট

    প্রথমে শূন্য ফের গণনায় ৮৩ ভোট পেলেন তিনি

     


    ভোট গণনার পর ফল ঘোষণার সময় সদস্য প্রার্থী জানতে পারেন, তিনি পেয়েছেন শূন্য ভোট। এরপর সে প্রার্থী দাবি তোলেন, তার সব ভোটের সঙ্গে নিজেরটিও চুরি হয়ে গেছে। 

    এ কথা ছড়িয়ে পড়লে ওই প্রার্থীর সমর্থকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। অবরুদ্ধ করলেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনরায় ভোট গণনা করা হয়। এবার সংখ্যা পরিবর্তন হয়ে ওই প্রার্থীর নামের শেষে যোগ হয় ৮৩টি ভোট। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য প্রার্থী আবু তালেবের সঙ্গে। ইউনিয়নের বেলঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

    আবু তালেবের দাবি, সব ভোটের সঙ্গে তার নিজের দেওয়া ভোটটিও চুরি করেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী।

    জানা গেছে, আবু তালেব বেলঘরিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডে এর আগেও সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তিনি মোরগ প্রতীকে ভোট করছিলেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রিংকু আলী। তিনি ফুটবল প্রতীকে এক হাজার ১১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।

    রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রথমবার ভোট গণনায় ফলাফলে জানানো হয় , আবু তালেব কোনও ভোট পাননি। ফলাফলের এই বার্তা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রার্থীর সমর্থকরা বিক্ষোভ শুরু করেন এবং প্রশাসনেরসহ প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।

    আবু তালেব বলেন, ‘একটা ছেলে মোরগ প্রতীকে ভোট দিয়েছে, মোবাইলে ছবিও তুলেছে। তাহলে তার ভোটটা কোথায় গেলো? যে ব্যক্তি ভোটে দাঁড়িয়েছে, সে কি তার নিজের ভোটটাও নিজেকে দেয় না? পৃথিবীর কোথাও কি এমন ঘটনা ঘটেছে? এটা কীভাবে সম্ভব?’

    এরপর আবু তালেবের সমর্থকেরা ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকেন, ‘বিচার চাই, বিচার চাই। ভোট চোরের বিচার চাই। আমার সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এই নির্বাচন মানি না। বিচার চাই, বিচার চাই।’ এভাবে চিৎকার দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

    কেন্দ্রের বাইরে এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নির্বাচন অফিসের পক্ষ থেকে পুনরায় ভোট গণনা করা হয়। পরে তিনি ৮৩ ভোট পেয়েছেন বলে জানানো হয়।
    বেলঘরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘ভোটের এক বান্ডিল ব্যালট পেপার টেবিলের নিচে পড়ে থাকায় আমাদের চোখে পড়েনি। এ ভুলের কারণে প্রথমবার গণনায় আবু তালেব শূন্য ভোট পেয়েছেন। কিন্তু পরে টেবিলের নিচে ব্যালট পেপার খুঁজে পাওয়ায় পুনরায় ভোট গণনায় তার প্রাপ্ত ফলাফল বেরিয়ে আসে।’

    প্রিসাইডিং কর্মকর্তার এমন ভুলের বিষয়ে চারঘাট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রবিউল আলম বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। পরবর্তী গণনায় ভুল সংশোধন হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল হতে বলা হয়েছে।’

    এদিকে পরিবার, প্রতিবেশী ও এলাকার ভোটারদের আশ্বাসে রাজশাহীর চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন গোলাম রসুল। ইচ্ছা ছিল ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার মানুষের সেবা করবেন। রবিবার ভোট গণনা শেষে দেখা যায় তিনি একটি ভোট পেয়েছেন।

    রবিবার সন্ধ্যায় শলুয়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। এতে দেখা যায়, গোলাম রসুল ফুটবল প্রতীক নিয়ে শুধু একটি ভোট পেয়েছেন। তবে তিনি নিজের ভোটটিও নিজেকে দেননি। পরিবারে স্ত্রী ও সন্তানসহ তিন জনের ভোট থাকলেও কারও ভোট তিনি পাননি। একটি মাত্র ভোট তাকে কে দিয়েছে সেটাও তিনি জানেন না।

    পরিবারের সদস্যদের ভোট না পেয়ে অনেক দুঃখ পেয়েছেন জানিয়ে গোলাম রসুল বলেন, ‘গ্রামের বাসিন্দারা ভোট দেননি, এটা তেমন কিছু নয়। কিন্তু পরিবারের সদস্যের কেউ ভোট না দেওয়ায় এবং নিজের ভোটটিও দিতে না পারায় ভীষণ লাগছে।’

    তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীর আশ্বাসে ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু পরে কারও সমর্থন পাইনি। সবাই অন্য প্রার্থীকে নিয়ে ব্যস্ত। টাকা পয়সা খরচ না করায় কেউ আমাকে সমর্থন দেয়নি। ভোটে দাঁড়ানোই বউ-ছেলেও রাগ করেছিল। এ অবস্থায় ভোটের দিন পাশের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এ জন্য নিজেও নিজেকে ভোট দেইনি। কে একজন আমাকে ভোট দিয়েছে জানি না। তবে পরিবারের কেউ দেয়নি।’

    চারঘাট উপজেলার শলুয়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষে সঠিকভাবে গণনা করা হয়েছে। সেখানে রসুল ফুটবল প্রতীকে 

    শুধুমাত্র এক ভোট পেয়েছেন। আশরাফ আলী মোরগ প্রতীক নিয়ে ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।’

    চারঘাট উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে ছয়টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকার চার ও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।


    প্রকাশিত: শুক্রবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২১