• সর্বশেষ আপডেট

    কৌশল বদলাচ্ছে বিএনপি

      

    জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এবং দেশে ‘ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে’ নতুন কৌশল প্রণয়ন করে,তা দৃশ্যমান করার কথা থাকলেও এই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে বিএনপি। গত ১৪-১৬ ও ২১-২৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ৮-৯ অক্টোবর দলের পেশাজীবী অনুসারীদের সঙ্গে বৈঠকের একমাস পেরিয়ে গেলেও এ সংক্রান্ত কোনও নির্দেশনা দিতে পারেনি দলটি। দৃশ্যমান হয়নি কোনও অগ্রগতিও। 

    বিএনপির প্রভাবশালী দায়িত্বশীলরা জানান, ধারাবাহিক বৈঠকে নেতাকর্মীদের মতামতের সারাংশ দলের কেন্দ্রীয় দফতর বিভাগ কম্পাইল করে সাংগঠনিক সম্পাদক (দফতরের সদ্য সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত) সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের মাধ্যমে স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এরপর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার পর দলের শীর্ষনেতৃত্ব স্থায়ী কমিটির তিন জন সদস্যকে মতামতগুলো মুল্যায়ন করে ‘একটি ভবিষ্যৎ রূপরেখা’ প্রণয়নের দায়িত্ব দেন। এরপর অন্তত দুই সপ্তাহ আগে তিন জন সদস্য স্থায়ী কমিটিতে তাদের ‘রূপরেখা’ জমা দেন। এই তিন সদস্য হলেন— মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। 

    বিএনপির  চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সূত্র জানায়, ধারাবাহিক বৈঠকে আমন্ত্রিত ছয়শ’ সদস্যের মধ্যে পাঁচ শতাধিক অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে চার শতাধিক মতামত দেন।

    অংশগ্রহণকারীদের এসব মতামতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল— নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ে আন্দোলন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কর্মসূচি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ 
    দলীয় জোট নিয়ে দলের করণীয় এবং জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ। এছাড়া সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ নানা বিষয়ে মতামত দেন তৃণমূলের নেতারাও। এই বৈঠকের একমাস পেরিয়ে গেলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পরবর্তী কোনও নির্দেশনা দিতে পারেননি। উপরন্তু, দলের হাইকমান্ড স্থায়ী কমিটির প্রায় অধিকাংশ সদস্যকেই ‘অ্যাসাইনমেন্টে’ ব্যস্ত রেখেছেন।

    বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দলের সিনিয়র নেতারা (ফাইল ফটো)বিএনপির দায়িত্বশীল সিনিয়র নেতারা বলছেন, স্থায়ী কমিটি সেপ্টেম্বরে ধারাবাহিক বৈঠকের আগে পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে যে রূপরেখা তৈরি করেছিল, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিক বৈঠকে প্রদত্ত মতামতগুলো কম্পাইল করে স্থায়ী কমিটিতে জমা দিয়েছি। তারা আলোচনা করেছেন। এখনও আলোচনা চলছে। সুনির্দিষ্ট কোনও ছকে ফেলে আমরা রূপরেখা তৈরি করতে চাই না। সমান্তরালভাবে অন্যান্য ইস্যুগুলো নিয়ে এখনও কাজ চলমান রয়েছে। দেশ-বিদেশে এই রূপরেখা নিয়ে কাজ হচ্ছে।’


    বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতার ভাষ্য— বর্তমানে সরকারের বিরুদ্ধে যেসব বিরোধী দল কথা বলছে, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে দলীয় সরকারের অধীনে না করার বিষয়ে একসুরে কথা বলছে, এই বিষয়টিও বিএনপির পক্ষ থেকেই সামনে আনা হয়েছে। বিশেষ কোনও ছকে ফেলে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের চেয়ে কৌশলগত কারণে ভিন্ন-ভিন্ন পদ্ধতিতে প্রক্রিয়া নিয়ে এগুতে চাইছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ কারণেই আগে-ভাগে দাবিনামা উত্থাপন না করে মাঠপর্যায়ে মতামত তৈরির প্রক্রিয়াটিকে সামনে আনা হয়েছে।

    প্রভাবশালী এই সূত্রটি জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয় অ্যাড্রেস করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ইস্যু, সাংগঠনিক ইস্যু এবং স্থানীয় ইস্যুগুলোকে নিয়ে কাজ করবে বিএনপি। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি বিষয়কে সামনে আনার পক্ষে বিএনপি

    এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আবারও বৈঠক করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা। এর আগে, গত ১২ অক্টোবর সাংগঠনিক নেতাদের বৈঠকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক বিভাগে বাকি থাকা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলের কমিটি গঠনের ওপরে জোর দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এ বিষয়টির ফলোআপ জানবেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এরপর দেবেন পরবর্তী নির্দেশনা।

    বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নেতা  জানান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম গুছিয়ে নেওয়ার পরই পরবর্তী বিষয়গুলো সামনে আসবে।

    জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু  বলেন, ‘এটা আপনারা কখনও বুঝতে চান না যে, দেশে গণতন্ত্র বিধ্বস্ত, দেশ পুলিশ শাসন করছে। এ পরিস্থিতিতে ওভারনাইট কিছু একটা দাঁড় করানো যায় না। এটা  ধাপে ধাপে হওয়ার বিষয়। আমরা স্টেপ বাই স্টেপ কাজ করছি। সারাদেশের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি, এগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করার পরই দৃশ্যমান হবে সবকিছু।


    প্রকাশিত: বুধবার ১০ নভেম্বর ২০২১