• সর্বশেষ আপডেট

    সন্তান নিয়ে স্কুলে ছাত্রী, কোলে করে ক্লাস নিলেন শিক্ষক

      

    ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাল্যবিয়ের শিকার স্কুলছাত্রীর সন্তানকে কোলে নিয়ে ক্লাস নিলেন পঙ্কজ কান্তি মধু (৪৫) নামের এক শিক্ষক। সদর উপজেলার চিনাইর আঞ্জুমানআরা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।

    এরই মধ্যে শিক্ষকের পাঠদানের ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা যায়, শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি মধু এক কন্যাশিশুকে কোলে নিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে তার মা ক্লাসের পাঠে মনোযোগ দিতে পারছিল না। এ সময় শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি ছাত্রীর সন্তানকে কোলে নিয়ে ক্লাস শুরু করেন। এ সুযোগে কেউ ছবিটি ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করে।

    শিক্ষক পঙ্কজ মধু গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার বিটকাটিয়া গ্রামের লিও মধুর ছেলে। তিনি ১১ বছর ধরে চিনাইর আঞ্জুমানআরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার দাতিয়ারা গ্রামে বসবাস করেন। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করোনার সংক্রমণ রোধে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে হয়। এক বছর পর ওই ছাত্রীর কন্যাসন্তান হয়। গত মাসে বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি জানতে পারেন ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। পরে তাকে খবর দেন বিদ্যালয়ে আসার জন্য। রবিবার সকালে ছাত্রী তার তিন মাসের কন্যাকে কোলে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে।

    শিক্ষক পঙ্কজ কান্তি সাংবাদিকদের বলেন, ছবিটি কে-বা কারা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে আমি জানি না। এমন ছবি ফেসবুকে দিয়ে ভাইরাল করার যুক্তি নেই। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে বাঁচতে চাই। শিক্ষার্থীর ক্লাসের সুবিধার কথা চিন্তা করে তার সন্তানকে কোলে নিয়ে ক্লাস করিয়েছি। ভাইরাল হওয়ার জন্য এই কাজ করিনি।

    তিনি বলেন, সম্প্রতি বিদ্যালয় খোলার পর আমি যখন জানতে পারি করোনাকালীন সময়ে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে, তখন যোগাযোগ করে বিদ্যালয়ে আসতে বলি। স্বামী ও শিশুসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসে। তখন শিক্ষার্থীর লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার জন্য তার স্বামীকে অনুরোধ করি। আমার কথায় উৎসাহ পেয়ে শিক্ষার্থী ক্লাসে যায়। কিন্তু শিশুসন্তান কোলে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছিল না। তাই শিশুটিকে কোলে নিয়ে ক্লাস করাই।

    বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বলেন, পঙ্কজ কান্তি মধু ইংরেজির একজন ভালো শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কার কী ধরনের অসুবিধা, পরিবারে সমস্যার বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন। 

    বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন বলেন, শিক্ষক ক্লাসটি করানোর জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কাজটি হয়তো ঠিক করেছেন। কিন্তু অন্য দৃষ্টিতে দেখলে কাজটি ঠিক হয়নি। এখানে দুটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে; এক হচ্ছে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর শিশুকে কোলে নিয়ে ক্লাস করানোর কারণে অন্য শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। কোনও আয়াকে ডেকে শিক্ষক শিশুটিকে রাখার ব্যবস্থা করতে পারতেন। কারণ বিদ্যালয়ে আয়া আছে। দ্বিতীয়ত, করোনার প্রভাবে এক বছর আগে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে, এটি বাল্যবিয়ে জনিত অপরাধ। এই অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। আমরা এগুলো যদি কঠিনভাবে না দেখি তাহলে কেবল শিক্ষা নিয়ে কথা বললে হবে না। করোনায় স্কুল বন্ধ রাখার কারণে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। 


    প্রকাশিত: রবিবার ০৩ অক্টোবর , ২০২১