• সর্বশেষ আপডেট

    বিদ্যমান হিন্দু আইন সংস্কারের দাবি

     

    বিদ্যমান হিন্দু আইন বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গেও অসঙ্গতিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ।  এ কারণে  শিশু, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি বৈষম্যমূলক হিন্দু আইন সংস্কারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

    শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে  আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

    সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সভাপতি ড. ময়না তালুকদার বলেন, ‘বাংলদেশের সংবিধান নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র এমন কোনও আইন প্রণয়ন করবে না, যা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।’

    তিনি বলেন, ‘আইনগুলো প্রায় শতাব্দিকাল যাবৎ অসংশোধিত রয়ে যাওয়ায় এবং কোডিফাইড না হওয়ায় আদালতে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যাঘাত ঘটছে। এই আইন ব্রিটিশ আমলে গৃহীত এবং সনাতন হিন্দু ধর্মের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। বৌদ্ধ, জৈন এবং বিভিন্ন আদিবাসী গোত্রের মানুষ আলাদা ধর্মের অনুসারী হলেও তাদের সবাইকে একই হিন্দু আইনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ধর্মের নামে এই আইন প্রচলিত হলেও বাস্তবিক অর্থে এর সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নামেমাত্র। এসব আইন মূলত প্রথাগত।’

    ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রথা অনুযায়ী, একেক অঞ্চলে একেক রকমের হিন্দু আইন প্রচলিত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশেও একেক অঞ্চলে একেক রকম প্রথাভিত্তিক হিন্দু আইন প্রচলিত আছে। এই আইন সনাতন ধর্মের অনুসারীদের জন্য সর্বজনগ্রাহ্য সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় বিধান হলে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্নরকম আইন হতে পারতো না। ব্রিটিশ সরকার তাদের ২০০ বছরের শাসন আমলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রথাগুলোকে আইন হিসেবে গ্রহণ করেছিল। অনেক দেশে বৈষম্যমূলক আইন তুলে দিয়ে সেসব দেশে নারী-পুরুষ সমঅধিকার-ভিত্তিক সুষম আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ প্রথমে পাকিস্তানের অন্তর্গত এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হিন্দুদের ধর্ম পাওয়া যায়।’

    সংবিধানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এখানে ঘোষিত মৌলিক অধিকারের প্রথমটিই হচ্ছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ দ্বিতীয়ত: বলা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।’ তৃতীয়ত: ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী- পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবেন।’ অথচ সমান অধিকার দূরে থাক, প্রচলিত হিন্দু আইন অনুযায়ী, পিতা-মাতার সম্পত্তিতে পুত্র সন্তানের উপস্থিতিতে কন্যা সন্তানের অধিকার নেই।’’

    ময়না তালুকদার বলেন, ‘‘তাই আমরা প্রথমত হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। দ্বিতীয়ত: আমরা হিন্দু অভিভাবকত্ব আইনের লিঙ্গবৈষম্য দূর করে সস্তানের ওপর বাবা এবং মায়ের সমান অভিভাবকত্ব ও অধিকার প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি। তৃতীয়ত: হিন্দু আইনে দত্তক নেওয়ার বিধান থাকলেও সে অধিকার শুধু পুরুষের। স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে স্ত্রী দত্তক নিতে পারে। অপুত্রক বিধবা মৃত্যুর আগে স্বামীর ‘পূর্ব নির্দেশ ছিল’ প্রমাণ করতে না পারলে দত্তক নিতে পারেন না। শুধু তাই নয়, দত্তক নিতে হবে শুধু পুত্র অর্থাৎ পুরুষ শিশুকে। কন্যাশিশু দত্তক নেওয়ার বিধান নেই। এধরনের বিধান অমানবিক, শিশুর প্রতি অসংবেদশীল এবং বৈষম্যমূলক। তাই লিঙ্গ ও বর্ণবৈষম্য নিরসন এবং মা ও শিশুর প্রতি অবিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গী অবসানের জন্য হিন্দু দত্তক আইন সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি। এবং চতুর্থত: হিন্দু শাস্ত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ এবং নারীর পুনর্বিবাহের সুস্পষ্ট বিধান থাকলেও বিদ্যমান হিন্দু আইনে বিবাহ বিচ্ছেদের কারও কোনও অধিকার নেই। তবে স্ত্রী বিদ্যমান থাকতে স্বামী যতগুলো ইচ্ছে বিয়ে করতে পারেন। নারী বিবাহ বিচ্ছেদও চাইতে পারবেন না, দ্বিতীয়বার বিয়েও করতে পারবেন না। এমতাবস্থায় শত নির্যাতন সহ্য করেও নারীদেরকে স্বামীর অধিনস্ত হয়ে থাকতে হয় এবং কোনও প্রকার দাম্পত্য সম্পর্ক না থাকলেও ওই স্বামীর পরিচয়ই তাকে আজীবন বহন করতে হয়। সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রয়োজন এবং চাহিদা আছে, কিন্তু আইন নেই।’’

    সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটক, মানবাধিকার কর্মী লীনা রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বৌদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নিরা বড়ুয়া প্রমুখ।


    প্রকাশিত: শুক্রবার ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১