• সর্বশেষ আপডেট

    সাঁতরে মসজিদে নামাজ পড়া সেই ইমাম পেলেন নৌকা ও অর্থ সহায়তা।

     

    ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের কারণে খোলপেটুয়া নদীর পানিতে ডুবে আছে সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগরের মানুষের ঘরবাড়ি। প্রতাপনগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায় নদীতে বিলিন হলেও হাওলাদার বাড়ি জামে মসজিদটি শুধুমাত্র টিকে আছে। নদীতে জোয়ার এলেই সাঁতরে মসজিদে যেতে হয় ইমাম হাফেজ মইনুর রহমানকে। সম্প্রতি তার এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাকে নৌকা ও নগদ টাকা সহায়তা দিয়েছে ‌‘ডু সামথিং ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। 

    স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রায় চারমাস অতিবাহিত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই ফের ইয়াসের আঘাত। সর্বশেষ ১০ সেপ্টেম্বর খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে প্রতাপনগর গ্রামের মানিক হাওলাদারের বাড়ি সংলগ্ন জামে মসজিদের পাশের বিকল্প রিং বাঁধ ভেঙে ফের প্লাবিত হয় প্রতাপনগর, তালতলা, মাদারবাড়িয়া, কুড়িকাহনিয়া ও কল্যাণপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রতিদিন দুপুরে ও রাতের জোয়ারে নিয়ম করে পানিতে ভাসছে ওই পাঁচ গ্রামের মানুষ। 

    প্রতিদিন সাঁতরে মসজিদের যেতেন ইমাম মইনুরপ্রতাপনগরের হাওলাদার বাড়ি জামে মসজিদের একেবার পাশের দুটিসহ আশপাশের ১৫/২০টি ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। তবু মসজিদ চালু রাখতে মসজিদের ইমাম হাফেজ মইনুর রহমান প্রতিদিন পাঁচবার সাঁতরে মসজিদে গিয়ে আজান ও নামাজ আদায় করেন। অন্য ওয়াক্তে অনেকে না যেতে পারলেও জুমার দিন মুসল্লিরা কষ্ট করে হলেও মসজিদে নামাজ আদায় করেন। কখনও কখনও ইমাম মইনুর রহমান মসজিদের ভেতরেই থেকে যান।  থাকেন, আবার যখন মসজিদের ভেতরে পানি উঠে যায় তখন মসজিদের ছাদে রাত্রিযাপন করেন বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় মসজিদের ইমাম সাহেব সাঁতরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যাওয়া-আসা করেন এমন একটি ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

    মানবিক সংগঠন হিউম্যানিটি ফার্স্টের অ্যাডমিন ও ভিডিও ধারণকারী প্রভাষক ইদ্রিস আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান থেকে এই এলাকার মানুষ জোয়ার ভাটায় বসবাস করছে। তাদের যে কী কষ্ট, সেটা চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। আমি সাতক্ষীরা এলাকায় ফিরলে প্রতাপনগরের বিভিন্ন এলাকায় কী অবস্থা দেখতে যাই। ওইদিন দূর থেকে দেখি একজন সাঁতরে আসছে, কৌতুহলবসত ভিডিও ধারণ করি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের প্রোফাইলে আপলোড দিলে মুহূর্তেই কয়েক লাখ ভিউ হয়। ভিডিও দেখে অনেকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন।
     
    এখন নৌকায় করে মসজিদের যান ইমাম ও মুসল্লিরাএর মধ্যে চিকিৎসকের একটি সংগঠন ‘ডু সামথিং ফাউন্ডেশন’ এগিয়ে আসে। মানবিক সংগঠন হিউম্যানিটি ফার্স্টের মাধ্যমে ডু সামথিং ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ইমাম হাফেজ মইনুর ইসলামের হাতে নগদ অর্থ ও নৌকা তুলে দেওয়া হয়। বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে ঘর নির্মাণ এবং ইমামতির পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন সংগঠনটির সদস্যরা। 

    হাওলাদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মইনুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে আছে আমার এলাকা। নদীর জোয়ার-ভাটায় আমরা ডুবি-ভাসি। জোয়ার থাকলে সাঁতরে মসজিদে যেতে হয়। ওইদিন জুমার দিন ছিল, আমি সাঁতরে মসজিদে যাওয়ার সময় প্রভাষক ইদ্রিস আলী ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও দেখে একটি সংগঠন আমার জন্য নৌকা কিনে দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ আমি এবং মুসুল্লিরা ওই নৌকায় করে মসজিদে যাচ্ছি। আরও অনেকে আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
     
    তিনি আরও বলেন, আমার মসজিদের আশপাশে অনেক বাড়িঘর ও কবরস্থান ছিল, সব বিলীন হয়ে গেছে। গত দুইদিন আগে মসজিদের বারান্দাও ভেঙে গেছে। এখন শুধুমাত্র মসজিদটি টিকে আছে। কত সময় থাকবে জানি না। সবাই দোয়া করবেন মসজিদটি যেন টিকে থাকে। 


    প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১