• সর্বশেষ আপডেট

    ফসফরিক এসিড সংকটে উৎপাদন বন্ধ ডিএপি সার কারখানা


    জসিম তালুকদার (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত দেশের একমাত্র ডিএপিফার্টিলাইজার কোম্পানি ফসফরিক এসিডের সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে উৎপাদন। গত ১জুলাই থেকে কারখানায় ডিএপি সারের প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক এসিড মজুদ শেষ হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। চলতি অর্থবছরের ফসফরিক এসিড আমদানির ক্রয় প্রস্তাব শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে না পাঠানোর কারণে এমন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে ডিএপি সার কারখানা সুত্রে জানা গেছে। 

    গত জুন মাস থেকে ডিএপি সারা কারখানার পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক কমিটির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হলেও ক্রয় প্রস্তাবটি অদৃশ্য কারণে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও সিবিএ নেতাদের। এখানে বিসিআইসির উর্ধ্বতন কর্মকতাদের উদাসীনতার দায়ী বলে জানিয়েছে সিবিএ নেতারা। কারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে বর্তমান আমন মৌসুমে সারাদেশের কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি কারখানায় কর্মরত বিভিন্ন স্তরের সহস্রাধিক শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া সর্বশেষ আগামী ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে এই ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন পাওয়া না গেলে আগামী এক বছরের জন্য কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। 

    জানা যায়, আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় অবস্থিত ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড সার কারখানার প্রধান কাঁচামাল ৩০ হাজার মেট্রিকটন ফসফরিক এসিড (তিন লটে) ক্রয়ের জন্য গত ৭ এপ্রিল দরপত্র আহবান করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। যার মূল্য প্রায় (আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ) ১৭৭ কোটি ৩৪ লক্ষ সাতাশ হাজার টাকা। ২৪ এপ্রিল দুইজন সর্বনিম্ন দরদাতা নির্ধারণ করা হয়। গত ২ জুন তাদের বিপরীতে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণের জন্য ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করতে বিসিআইসির মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠান ডিএপি সার কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত এক মাসেও ক্রয় প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়নি বলে অভিযোগ তাদের। ফলে ডিএপি সার কারখানার মজুদকৃত ফসফরিক এসিড শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আগামী ২৩ জুলাই দরপত্রের অধীনে দাখিল করা দরপ্রস্তাব বৈধতার শেষ সময়। এই সময়ের মধ্যে ক্রয় প্রস্তাবটি অনুমোদন করা না গেলে আগামী এক বছরের জন্য ডিএপি সার কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। 

    এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছর সার কারখানা গুলোকে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ডিএপি সার কারখানার এ বছরের  লক্ষ্যমাত্রা দেড় লাখ মেট্রিকটন। কারখানাটির ক্ষমতা তার ছেয়ে অনেকগুণ বেশি। এই করোনাকালেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু নজির বিহীন ভাবে প্রতিষ্টার পর থেকে কারখানাটি এই প্রথম ফসফরিক এসিডের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।  তারা অবিলম্বে যে কোনমুল্যে কারখানা সচল করার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

    ডিএপিএফসিএলের সিবিএ সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, গত একমাস আগে দরপ্রস্তাব অনুমোদনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো  হয়েছে। কিন্তু এক মাসেও সেটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতে উঠেনি। এটি রাষ্ট্রের একটি সম্পদ। এটি বন্ধ হয়ে গেলে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। আমরা চাই আগামী ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে অনুমোদন পাবে। 

    এ ব্যাপারে বিসিআইসির যুন্মসচিব মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। এটি খতিয়ে দেখব৷ আশা করি ২৩ জুলাইয়ের মধ্যেই অনুমোদনটা হয়ে যাবে। 

    জানতে চাইলে শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা দৈনিক দিগন্ত নিউজ'কে জানান , কোন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। আগামীকাল অফিসে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে এ ব্যাপারে গ্রহণ করা হবে।

    প্রকাশিত: শনিবার ১০ জুলাই, ২০২১