• সর্বশেষ আপডেট

    গার্মেন্টস শ্রমিকদের শতভাগ ভ্যাকসিনের আওতায় আনা প্রয়োজন-নজরুল ইসলাম

                             

    বাংলাদেশে তৈরী পোশাকশিল্প শতভাগ ব্যাক্তি উদ্যোগে গড়া ওঠা রপ্তানীমূখী শিল্পখাত। ষাটের দশকে সীমিত পরিসরে তৈরী পোশাক শিল্পের শুরু হলেও সত্তরের দশকের শেষের দিকে রপ্তানীমূখী হয় এ খাতটি। দেশের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৭৬ শতাংশ আসে পোশাক রপ্তানী খাত হতেই। তাই, দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এখন প্রায় পোশাক শিল্পের উপরই নির্ভর করছে। পোশাক শিল্প সামাজিক অবস্থানেও রেখে চলেছে ব্যাপক অবদান। 

     ২৫ লাখেরও অধিক শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী পোশাক শিল্প খাতে কাজ করে উপার্জিত অর্থে তাদের জীবন মানে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এদের আশি ভাগই হল নারী। আমাদের সমাজে একসময় যাদেরকে পরিবারে বোঝা ভাবা হত। সংসার চালাতে অর্থের যোগানদাতা হিসেবে এসব নারীরা এখন পরিবারে ও সমাজে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। পোশাক শিল্পকে ঘিরে ডায়িং, স্পিনিং, প্যাকেজিংসহ সহ আরো অনেক শিল্প প্রসার লাভ করেছে। সব কিছু মিলিয়ে তৈরী পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। আমদানীকৃত কাঁচামালের উপর এখনো অনেকটাই নির্ভরশীল হওয়ায় বিগত সালে বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে পোশাক শিল্প মহাসংকটের মুখোমুখি হয়েছিল।  

    পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানীকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দের আবেদনের প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা পোশাক শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য ৫০০০ কোটি টাকা ঋন হিসেবে প্রনোদনা প্রদান করেন। তাই প্রবৃদ্ধির ধারায় ভাটা পরলেও সংকটকালে পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানীকারকরা এ শিল্পকে ধরে রাখতে সক্ষম হয় এবং সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২য় দফায় করোনার সংক্রমনের মাত্রা বাড়তে থাকলে আবারো কিছুটা সংকটের মুখে পোশাক শিল্প।

    করোনার দ্বিতীয় দফার সংকট মোকাবেলায় সরকার সারাদেশে লকডাউন ঘোষনা করেছে। জীবন ও জীবিকা দুটোকেই প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে চাচ্ছে সরকার। এরই প্রেক্ষিতে বিজিএমইএর পরামর্শে খোলা রাখা হয়েছে পোশাক কারখানা।

    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা, প্রথম দফায় ৪৫ বছর বয়সোর্ধরা করোনার ভ্যাকসিন পেয়েছিল। অনিবার্য কারনে সাময়িকভাবে করোনার টিকার জন্য রেজিস্টেশন বন্ধ থাকলেও এবার ৩৫ বৎসর ও তদোর্ধদের করোনার টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। চলছে পর্যায়ক্রমে করোনার টিকা প্রদান। গার্মেন্টস শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিজিএমইএ সবসময় গুরুত্বসহকারে কাজ করে থাকে। সংকটকালে জীবন ও জীবিকা উভয় দিক সামলাতে চালু রাখা পোশাক কারখানায় কর্মরত সকলকে করোনার ভ্যাকসিনের আওতায় আনা প্রয়োজন মনে করি। 

    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য সকলকে টিকার আওতায় আনতে যত অর্থের প্রয়োজন খরচ করতে রাজী আছেন বলে ইতিমধ্যে স্পষ্ট ঘোষনা দিয়েছেন। আমরা মনে করি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ যোগানদাতা, অর্থনীতির প্রাণভোমরা সদৃশ পোশাকশিল্পকে সুরক্ষিত রাখতে পোশাক শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদান করা প্রয়োজন। অন্যদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ধরা হলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের সকলেই যাতে টিকা পায় সেদিকটা বিবেচনায় আনতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি। এবং গার্মেন্টস শ্রমিকরা যাতে সহজে ও দ্রুত ভ্যাকসিন পেতে পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের বিনীত আবেদন জানাই।

    প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৩ জুলাই, ২০২১