• সর্বশেষ আপডেট

    লকডাউনের মুখে চট্টগ্রামের ৪ উপজেলা


    জসিম তালুকদার (চট্টগ্রাম): নগর ছাড়িয়ে এবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রামের গ্রাম-গঞ্জেও। এর মধ্যে উত্তর চট্টগ্রামের  চার উপজেলায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে গেল এক সপ্তাহে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ স্বাস্থ্য বিভাগও।

    সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ভাবতে শুরু করেছেন তাঁরা। এরমধ্যে এ চার 
    উপজেলার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যদি পরিস্থিতি অবনতি হয়, তা হলে 
    যেকোনো মুহূর্তেই লকডাউনের আওতায় আনারও পরিকল্পনা এঁকেছেন কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার বিকেলে এমনটিই দিগন্ত নিউজ কে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

    তিনি বলেন, ‘চারটি উপজেলায় পূর্বের চেয়ে রোগী বেড়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক 
    (ডিসি) ও জেলা এসপিকে অবহিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কঠোরতা 
    আরোপের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং সতর্ক অবস্থানের জন্য বলেছেন জেলা প্রশাসক। আমরাও আরও কয়েকদিন দেখব। যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়, তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    এদিকে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের একদল গবেষকের 
    গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। প্রতিবেদনে চট্টগ্রামে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের দুই রোগী পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুই রোগীর একজন নগরীর এবং অপরজন ফটিকছড়ির বাসিন্দা বলে জানানো হয়েছে।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে ফটিকছড়ি উপজেলায়। 
    শুধু এ উপজেলাতেই নয়, স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে উত্তর চট্টগ্রামের পাশাপাশি চারটি উপজেলাতেই চোখে পড়ার মতো রোগী পাওয়া গেছে গেল এক সপ্তাহে। বাকি উপজেলাগুলো হচ্ছে হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া। 

    এরমধ্যে সর্বশেষ দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয় ফটিকছড়ি উপজেলাতে। এ উপজেলায় 
    ৩৬ জন রোগী পাওয়া যায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী পাওয়া যায় হাটহাজারী উপজেলাতে। 

    এ উপজেলায় রোগী শনাক্ত হয় ২১ জন এবং রাঙ্গুনিয়ায় রোগী পাওয়া যায় ১৫ জন।
    তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ পর্যন্ত ফটিকছড়ি উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া 
    যায় ১ হাজার ১৫৯ জন, হাটহাজারীতে পাওয়া যায় ২ হাজার ৬২৮ জন, রাউজানে ১ হাজার ৪০৫ 
    জন রোগী পাওয়া যায়। এরমধ্যে গেল এক সপ্তাহে ফটিকছড়ি উপজেলায় রোগী পাওয়া যায় ১১৬ 
    জন এবং হাটহাজারীতে রোগী পাওয়া যায় ৮৮ জন।

    এদিকে এসব অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলেও সাধারণ মানুষ উদাসীন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতসহ সামাজিক দূরত্ব মানছে না সাধারণ মানুষ। 

    এমন পরিস্থিতি থাকলে সামনে ভয়াবহ রূপ নেয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
    হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমীন দিগন্ত নিউজকে বলেন, অভিযান ও জরিমানা 
    কম হয়নি।

     কিন্তু কিছুতেই মানুষ সচেতন হচ্ছে না। মানুষের সচেতনতার অভাবের কারণে এমন 
    পরিস্থিতি। প্রয়োজন হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আরও বেশি কঠোরতা প্রয়োগ করা হবে।

    ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সায়েদুল আরেফিন দিগন্ত নিউজকে বলেন,  উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে আলোকে কাজ করা হবে। যেহেতু এ অঞ্চলে রোগীর সংখ্যা বেশি পাওয়া যাচ্ছে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ পরবর্তী যে সিদ্ধান্ত দিবেন, তার আলোকে কাজ করা হবে।

    সংক্রমণ বাড়লে ঝুঁকি না নিয়ে স্থানীয়ভাবে লকডাউনের নির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ 
    হাসিনাও। গতকাল সোমবার সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেয়া হয় বলে 
    মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান।

     বলা হয়, এলাকায় চলাচলসহ অন্যান্য কার্যক্রম স্থানীয়ভাবে বন্ধ করে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনার 
    চেষ্টা করতে।পর্যবেক্ষণ করছি, প্রয়োজন হলে লকডাউন করা হবে", সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। 

    সবচেয়ে বেশি সংক্রমক এলাকা ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া। এ বেল্টে গেল এক 
    সপ্তাহ ধরে রোগী শনাক্ত বেশি হচ্ছে। ডিসি মহোদয়ের সাথেও কথা বলে রেখেছি।

     দরকার হলে প্রয়োজনীয় কি ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা দেখা হবে। এ এলাকাগুলো এখনও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। 

    কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত আলোকে তা বিধি-নিষেধ কঠোর করার পাশাপাশি প্রয়োজন হলে লকডাউন করা 
    হবে। ইতোমধ্যে আজ (সোমবার) প্রধানমন্ত্রীও সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যেখানে সংক্রমণ বেশি সেখানেই 
    লকডাউন করতে। আমরা আরও দুই-তিনদিন দেখি, যদি পরিস্থিতি অবনতি হয়, তাহলে যথাযথ 
    ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    "সত্যিকারের লকডাউন হলেই কমবে সংক্রমণ", জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া৷ 
    ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া এ চার উপজেলার পাশেই একটা সীমান্ত রয়েছে। যা 
    আমাদের জন্য শঙ্কার। যদিও এ চার উপজেলার সংক্রমণ রোধে কর্তৃপক্ষ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, 
    সংক্রমণ বাড়ার আগেই তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

    এক্ষেত্রে যদি লকডাউন দেয়া হয়, তাহলে তা শুধুমাত্র কাগজে আর মুখে না রেখে, বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে। তাহলে অবশ্যই অবশ্যই এর সুফল পাওয়া যাবে। সংক্রমণও কমে আসবে। পাশাপাশি 
    পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়াতে হবে। পজিটিভ-নেগেটিভ রোগী পৃথক করা গেলে সহজেই সংক্রমণ হ্রাস 
    করা সম্ভব।

    প্রকাশিত: শুক্রবার ১৮ জুন, ২০২১