• সর্বশেষ আপডেট

    শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: দুই ভাই-বোনের আর কেউ থাকলো না!


    ছেলের স্কুল থেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) নিতে ঢাকা এসেছিলেন দোলা বেগম (৩৪)। লকডাউনের কারণে ঢাকার বাসা ছেড়ে মুন্সিগঞ্জ শহরে বাবার বাড়িতে আসছিলেন তিনি।

    ১৫ বছরের ছেলে ইফাজকে সঙ্গে নিয়ে নারায়ণগঞ্জঘাটে এসে লঞ্চে ওঠেন মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে।  
    পথে শীতলক্ষ্যা নদীতে জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায় সাবিদ আল হাসান নামের লঞ্চটি। ছেলেকে বাঁচাতে হাত ধরেছিলেন বেশকিছুক্ষণ। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। সাঁতার জানলেও কিছুদূর যাওয়ার পর ইফাজকে নির্মাণাধীন ব্রিজের শ্রমিকরা উদ্ধার করে। আর ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দোলার মরদেহ উদ্ধার করে উদ্ধারকারীরা।

    দোলা বেগম শহরের দক্ষিণ কোটগাঁও এলাকার দুলু মিয়ার মেয়ে। তারা পাঁচ বোন এক ভাই। সোমবার (৫ এপ্রিল) সকাল ৯টায় দক্ষিণ কোটগাঁও এলাকায় তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।  

    সরেজমিনে জানা যায়, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে ছেলে
    ইফাজ ও ৬ বছরের মেয়ে আকসাকে নিয়ে বসবাস করছিলেন দোলা। তিনি একা হাতেই ছোট থেকে বড় করেছেন দুই সন্তানকে। সন্তানদের কোনো আবদারের কমতি রাখেননি। সবসময় চোখের সামনে রেখে বড় করেছেন। শিশু আকসার চেহারা মায়ের মতো তাই সবার দৃষ্টি এখন তার দিকে। কিন্তু মা হারানোর কষ্টটা বোঝার মতো বয়স তার হয়নি। তাই মায়ের কথা মনে পড়লেই কান্না করছে আর মাকে খুঁজছে। আর ছেলে ইফাজ তো চোখের সামনেই হারিয়ে যেতে দেখেছে তার মাকে। তাই এই কষ্ট কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে। মা যে হারিয়ে গেছে আর ফিরে আসবে না এ কথাটা ছোট বোনটাকে কিভাবে বলবে সে। আত্মীয়-স্বজনরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন। দুই শিশুর মুখের দিকে তাকালে কেউ কান্না আটকে রাখতে পারছেন না। নীরবে কাঁদছেন বাড়ির সবাই।  

    ইফাজ জানায়, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে রওয়ানা দিয়েছিল লঞ্চটি। তখন একজন ব্যক্তি প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে চালাচ্ছিল। যখন বড় জাহাজটি লঞ্চের কাছাকাছি আসে তখন সব যাত্রীরা চিৎকার করে জাহাজকে থামানোর জন্য বলছিল। কিন্তু তারা না থামিয়ে উপর দিয়ে চলে যায়। তখনও আমি আম্মুর হাত আর আম্মু আমার হাত শক্ত করে ধরেছিল। কিন্তু এরপর লঞ্চটি আমাদের সবার উপরে পড়ে যায়। তখন পানিতে ডুবে যাই। আশপাশের সবাইকে বলেছি আমার আম্মুকে খুঁজে দেওয়ার জন্য।


    প্রকাশিত: সোমবার ৫ এপ্রিল, ২০২১