• সর্বশেষ আপডেট

    আকবরশাহয় গার্মেন্টস কর্মীর হত্যার রহস্য উদঘাটন, আটক ২

    আকবরশাহ থানা

    এম এ মেহেদীঃ স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে গত (২ অক্টোবর) দুপুর ০২ টার সময় আকবরশাহ থানাধীন হারবাতলী গ্যাস লাইন নুর হোসেনের বাড়ীর দক্ষিণে ঝোপের ভিতর একজন অজ্ঞাত মহিলার গলিত লাশ উদ্ধার করেন থানা পুলিশ।

    এ সংক্রান্তে প্রাথমিক পর্যায়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। যার মামলা নং-১৪/২০২০, পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছায়েম ঘটনাস্থল থেকে মহিলার কর্মস্থল মার্ক ফ্যাশন ওয়্যার (প্রাঃ) লিমিটেড, এর একটি পরিচয়পত্র, এক জোড়া সেন্ডেল একটি ভ্যানিটি ব্যাগ ও ব্যাগের মধ্যে থাকা অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করে গত ১০/১০/২০২০খ্রিঃ তারিখ উক্ত মৃত নারীর পরিচয় উদঘাটনের নিমিত্তে উক্ত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের এডমিন এর সাথে যোগাযোগ করেন।

    পরবর্তীতে ঘটনাস্থল হইতে প্রাপ্ত পরিচয়পত্র, এক জোড়া সেন্ডেল, ভ্যানিটি ব্যাগ ও ব্যাগের মধ্যে থাকা অন্যান্য জিনিসপত্র ও নিহত নারীর বোনের পরিহিত জামা ও সেলোয়ার দেখালে নিহতের ভাগিনা মোঃ শাহাদাত হোসেন তা দেখে সনাক্ত করে। লাশ সনাক্ত হওয়ার পর মৃত জেসমিন বেগম এর ছোট ভাই মোঃ মনির হোসেন বাদী হয়ে আকবরশাহ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

     নিহত জেসমিন বেগম, জেলা ভোলার লাল মোহন থানার ধলিঘর নগর ইউনিয়ন, বেদুরিয়া, গ্রামের মৃত মোঃ ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে, সে বর্তমানে ইব্রাহিম, সাং- হরিগঞ্জ, চরভুতা ৪নং ইউনিয়ন, ৩নং ওয়ার্ড, বাহাদুর বাড়ী, থানা-লালমোহন, জেলা- ভোলা, স্বামীর ঠিকানাঃ  বর্তমানে- চান্দগাঁও থানাধীন বাদামতলা, খাঁজা রোড, ডাইলের কলোনী, আলমের ভাড়াঘর, ৬নং বাসা্য বসবাস করতেন, সে একজন গার্মেন্টস কর্মী।
     
    বাদী মোঃ মনির হোসেন মামলায় উল্লেখ করেন  তার বড় বোন জেসমিন বেগম প্রতিদিনের ন্যায় গত ২১/০৯/২০২০খ্রিঃ তারিখ সকাল ০৭:৩০ সময় চট্টগ্রামস্থ মার্ক ফ্যাশন ওয়্যার (প্রাঃ) লিমিটেডে চাকরির উদ্দেশ্যে বাহির হয়ে রাত ০৮ টার  মধ্যে বাসায় ফেরত না আসায় ভাগিনা মোঃ শাহাদাত হোসেন(১৫) রাত ১১ টা পর্যন্ত  তার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে না পেরে পরের দিন ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে মামলার বাদীকে ফোন করে নিখোঁজের বিষয়টি বলেন। বাদী বিভিন্ন যায়গায় খোঁজ না পেয়ে ঢাকায় চলে যায়।

    অজ্ঞাতনামা মহিলার গলিত লাশ পাহাড়ে ঝোপের মধ্যে উদ্ধার করার পর পুলিশ মৃত দেহের পাশে
    জঙ্গল পরিস্কার করে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি ব্যাগ উদ্ধার করে উক্ত ব্যাগে ভিকটিমের আইডি
    কার্ড পাওয়া যায় এবং মৃতদেহের সনাক্ত করে। থানায় মামলা  হওয়ার পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের
    নির্দেশে পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয়।

    পরবর্তী গত  ২৭ অক্টোবর  সহকারী পুলিশ কমিশনার (পাহাড়তলী জোন), মোঃ আরিফ হোসেন, নেতৃর্ত্বে আকবরশাহ্ থানার একটি চৌকস টিম প্রধান সন্দেহভাজন মোঃ ফরহাদ(২৬) কে গ্রেফতারের জন্য নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন মাউরাদী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে, তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত  মোঃ ফরহাদ(২৬)কে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং তার দেওয়া তথ্য মতে তার সহযোগী মোঃ সেলিম প্রঃ মনির প্রঃ অজিউল্ল্যাহ (৩০) কে আকবরশাহ থানাধীন শাপলা গ্যাস লাইন বাবুলের চায়ের দোকানের পিছনে পাহাড়ের উপর তার নিজ বাড়ী থেকে ২৯ অক্টোবর ভোর বেলায় গ্রেফতার করা হয়।

    জানা যায় মৃত জেসমিন বেগম এর সাথে ফোনের সূত্রে ধরে ফরহাদের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্ক হয়। এবং সম্পর্কের একপর্যায়ে ২য় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ফরহাদ দুইদিকের সংসার সামলাতে হিমশিম খেয়ে যায় এবং ফরহাদের সাথে ভিকটিমের বিয়ের বিষয়টি তার প্রথম স্ত্রী জেনে যায়। অপরদিকে ভিকটিমের সংসারে ২ ছেলে, ১ মেয়ে এবং ফরহাদের ১ম সংসারে ১ সন্তান ছিল। এ নিয়ে ফরহাদ হতাশ হয়ে যায় এবং ভিকটিমের উপর ক্ষিপ্ত হয়। ফরহাদ ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

    জিজ্ঞাসাবাদে তারা  জানায়  গত ২০/০৯/২০২০ইং তারিখ সকাল ১০:০০ ঘটিকার সময় ফরহাদ হারবাতলি সাকিনে তার মামা মোঃ সেলিম প্রঃ মনির প্রঃ অজিউল্ল্যাহ(৩০) এর বাসায় আসে গত  (২১ সেপ্টেম্বর) রাত ০৮:০০ সময় জেসমিন বেগম (৩০) কে ফরহাদ হোসেন তার মামার বাসার নিচে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। এসময় ফরহাদ তার মামা মোঃ সেলিম প্রঃ মনির প্রঃ অজিউল্ল্যাহ(৩০)কে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। তার মামা ঘটনাস্থলে এসে ফরহাদ এবং ভিকটিমের ধস্তাধস্তি দেখতে পায়। পরবর্তীতে ফরহাদ তার মামাকে হত্যাকান্ডে সহযোগীতা করার জন্য বলে। এসময় ফরহাদ ভিকটিমের গলা টিপে ধরে এবং মামা মুখ চেপে ধরে দুজন মিলে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে দুজন মিলে ঝোপের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে।

    এবিষয়ে আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জহির হোসেন দিগন্ত নিউজকে বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২৯/১০/২০২০খ্রিঃ তারিখ আদালতে প্রেরণ করা হয় এবং ০২(দুই)দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত ৩১/১০/২০২০ তারিখ আদালতে প্রেরণ করি, উভয় আসামী  মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের ৩য় আদালতে আসামীরা স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করলে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারায়  আদালত জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।

    ১) মোঃ ফরহাদ(২৬), পিতা-সবু মিস্ত্রি, মাতা-মৃত রাশেদা বেগম, সাং-গুলুপপুর, কালু মিস্ত্রির বাড়ী,
    থানা-তজুমুদ্দিন, জেলা-ভোলা। ২) মোঃ সেলিম প্রঃ মনির প্রঃ অজিউল্ল্যাহ(৩০), পিতা-মৃত আবদুল
    হাসিম মিস্ত্রি, মাতা-মৃত আমেনা বেগম, সাং-পশ্চিম আড়ালিয়া, রহিম বক্স চকিদার বাড়ী, থানা-
    তজুমুদ্দিন, জেলা-ভোলা, বর্তমানে- শাপলা গ্যাস লাইন বাবুলের চায়ের দোকানের পিছনে পাহাড়ের উপর, থানা-আকবরশাহ, জেলা-চট্টগ্রাম।

    প্রকাশিত: রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০