• সর্বশেষ আপডেট

    করোনায় বিপর্যস্থ সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার

    মোঃ ওমর ফারুক, সৌদিআরব প্রতিনধিঃ-  বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের যখন পুরো বিশ্বময় একটা বিপর্যয় নেমে আসে । তখন এ-ই মহামারি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এবং ছড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবেও। প্রায় বিশ লাখের বেশি বাংলাদেশী প্রবাসী সৌদি আরব বিভিন্ন পেশায় কর্মরত আছেন।   

    করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে তখন সৌদি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেন। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সৌদি আরবের সাথে আকাশ পথের যোগাযোগ নিষিদ্ধ হয় আন্তর্জাতিক সকল ফ্লাইট এবং আসে লকডাউন ও কারফিউ।

    টানা প্রায় সাড়ে তিন মাসের ও বেশি সময় ধরে চলে কারফিউ ও লকডান এবং স্থবির হয়ে য়ায় সৌদি আরবের সকল ব্যবসা বানিজ্য ও সকল প্রকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। এবং বিপর্যয় নেমে আসে প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনেও।

    দীর্ঘ সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় লকডাউনের কারণে বেশীরভাগ প্রবাসী শ্রমিক কোনরকম খেয়ে দিনাতিপাত করিতেছেন। 

    এরপর এখন লকডাউন তুলে নেওয়ার পরে আস্তে আস্তে সৌদি আরবে স্বভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসার চেষ্টা করলে স্বাভাবিক হয়নি ব্যবসা বানিজ্য ও অর্থনেতিক কর্মকান্ড। চালু হয়নি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও।

     কিছু কোম্পানি কাজকর্ম সীমিত আকারে চালু করলেও বেশীরভাগ শ্রমিককেই বসিয়ে রাখা হয়েছে এবং যাদের কাজে লাগানো হয়েছে তাদের বেতনও অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে কোম্পানির আয় না হলে কোম্পানি বেতন দিবে কথা থেকে।

    বেশিরভাগ প্রবাসী শ্রমিক বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন  কোম্পানিতে কাজ করেন  অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চালু হচ্ছে না কনস্ট্রাকশন কোম্পানীগুলো এতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা এবং অনেক কোম্পানিই কর্মী ছাটাই করার চিন্তাভাবনা করছেন। যে সকল প্রবাসী শ্রমিক ছোট খাটো ব্যবসা বানিজ্যের সাথে জড়িত তাদের অবস্থা আরও নাজুক। 

    লকডাউনের কারণে বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক লোকসানের মূখে সকল ব্যবসায়ীরা, প্রতিষ্ঠানের ভাড়া কারেন্ট বিল কর্মচারীর বেতন কপিলের টাকা সবকিছু মিলিয়ে বিপুল অংকের লোকসানের পতিত হয়ে নাজেহাল অবস্থায় দিন যাপন করছেন।

    উমরাহ বন্ধ এবং এবছরের হজ্জ সীমিত করার কারণে মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।

    যেখানে প্রতি বছর হজ্জের সময়ে সারা বিশ্বের প্রায় ২৫ লাখের ও বেশি মুসলিম পবিত্র হজ্জ পালনে মক্কা মদিনায় অবস্থান করতো সেখানে মক্কা মদিনার আবাসিক হোটেল গুলো খালি পড়ে আছে আর সেখানে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন।

    ইউসুফ নামের মক্কার এক আবাসিক  হোটেল ব্যবসায়ী বলেন লক্ষ লক্ষ রিয়াল খরচ করে বিল্ডিং গুলো ভাড়া নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারী রেখে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাসের মতো উমরাহ বন্ধ এবং হজ্জ সীমিত হওয়ার কারণে পথে বসা ছাড়া আমাদের আরও কোন উপায় থাকলো না। এভাবে শত শত সৌদি প্রবাসী বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীর পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

    প্রত্যেক বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পযন্তই  সৌদি আরব প্রবাসীদের ব্যবসার উপযুক্ত সময় কিন্তু এবছর ব্যবসা যখন শুরু হওয়ার সময় তখনই করোনা সংক্রমণের কারণে সব উলটপালট হয়ে গেছে।

    এমতাবস্থায় বাংলাদেশের এসকল রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সহযোগিতায় যদি বাংলাদেশ সরকার ও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়  যৌথ প্রনোদনার মাধ্যমে সহযোগিতার হাত না বাড়ায় তাহলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রচন্ড রকমের বেকায়দায় পড়বেন এবং বিপর্যস্থ অবস্থায় দেশে ফেরত আসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

    ২০ লাখের ও বেশী প্রবাসী বাংলাদেশীর যেখানে এক তৃতীয়াংশের ও বেশি প্রবাসী কর্মহীন হয়ে পড়েছে এ-র প্রভাব আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের রেমিটেন্স এ-র পড়বে। তাই  বাংলাদেশ সরকার ও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ের উচিত অসহায় কর্মহীন সৌদি প্রবাসীদের নিয়ে নতুন করে চিন্তা করা। এটা সৌদি আরবে অবস্থানর অনেক প্রবাসী মনে করেন।

    প্রকাশিত: শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০