• সর্বশেষ আপডেট

    স্কুলছাত্রীর ইজ্জতের মূল্য ১০ হাজার টাকা!


    কুমিল্লার মুরাদনগরে এক বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সত্যতা পেয়ে স্থানীয় মাতাব্বররা গ্রাম্য শালিসে অভিযুক্ত বখাটের চুলকেটে জুতাপেটা দিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে।

    এমন ঘটনায় স্কুল মাঠে প্রকাশ্যে রফাদফা হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

    অভিযুক্ত বখাটে আবু তাহের (২৮) উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ছিলমপুর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে।

    সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গত ৫ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি শেষে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ৪ ছাত্রী বাড়ি যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বড়ই দেওয়ার লোভ দেখিয়ে একই গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে বখাটে আবু তাহের (২৮) ওই ৪ ছাত্রীকে তার বাড়িতে নেয়। ৩ জনকে উঠানে দাড় করিয়ে একজনকে ঘরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। পরে ছাত্রীটির মুখ চেপে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে ছাত্রীটির চিৎকার ও চেচামেচিতে উঠানে দাড়িয়ে থাকা অপর ৩ ছাত্রীও চিৎকার শুরু করে। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আবু তাহের ঘরের অপর দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। বাড়িতে গিয়ে ওই স্কুলছাত্রী তার পাশের বাড়ির ভাবীকে ঘটনাটি জানায়। ওই ভাবী ও তার চাচা ৮ মার্চ রোববার স্কুলে গিয়ে শিক্ষকের কাছে ঘটনার বর্ণণা দিয়ে বিচার প্রার্থী হয়। এ ঘটনা শিক্ষকদের কাছ থেকে কমিটির কানে গেলে তারা গত মঙ্গলবার রাতে ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পায়।

    উক্ত ঘটনায় গত শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্কুল কমিটির সভাপতি শাহীন আহম্মেদের সভাপতিত্বে স্থানীয় ইউপি সদস্য বশির আহাম্মদ দিপুসহ গ্রামের প্রায় ৪শ’ লোকের উপস্থিতিতে এক শালিস বৈঠক বসে। শালিসে উপস্থিত মাতাব্বররা ঘটনার সত্যতা পেয়ে বখাটে আবু তাহেরকে মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা, ২০টি জুতাপিটা ও মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। শালিসে এ স্পর্শকাতর বিষয়ে এমন ধরণের রায় হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের উৎপত্তি হয়েছে।

    বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহীন আহম্মেদ শালিসে বিষয়টি নিস্পত্তির কথা জানিয়ে জানান, বখাটে আবু তাহের ঘটনা স্বীকার করায় তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, ২০টি জুতাপিটা ও মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে।

    ভূক্তভোগি স্কুল ছাত্রীর বাবা বলেন, ২ মাস আগে মা মারা যাওয়া মেয়েটি এমন মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হওয়ায় আমরা চরম মর্মাহত। গ্রামের মাতাব্বররা বলেন, ঘটনাটি স্থানীয় ভাবে মিমাংসা করে দিব, এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করিওনা। আমি আসহায় দরিদ্র কৃষক। তাই তাদের কথার বাইরে যাইনি। শালিসে রায় করা টাকাটা পেলে মেয়েটিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব। কারণ মেয়েটি মারাত্বক ভয় পেয়েছে। রাতে সে ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে ওঠে।

    এ বিষয়ে জানতে চাইতে কুমিল্লা বারের আইনজীবী ও মুরাদনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তমাল জানান, শ্লীলতাহানির ঘটনা স্থানীয় শালিসে নিস্পত্তি করার যোগ্য নয়। শারিরিক নির্যাতনও আইন বহির্ভূত।

    মুরাদনগর থানার ওসি একেএম মনজুর আলম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। ভূক্তভোগি অভিযোগ দিলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    কুমিল্লা উঃ জেলা প্রতিনিধিঃ Rajib Imam
    প্রকাশিত: সোমবার, ১৬ মার্চ, ২০২০