• সর্বশেষ আপডেট

    আজ পয়শা'য় মুন্সি সাহেবের ওয়াজ মাহফিল




    ঢালী মনিরুজ্জামানঃ-আজ ১৫ জানুয়ারী মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পয়শা গ্রামে গোলাম রহমান মুন্সি (রহঃ) সাহেবের বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিল।

    আল্লাহ মানুষকে অতিযত্ন করে যেমনি ভাবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন ঠিক তেমনি ভাবে তাদের কল্যাণের জন্য কিছু মহামানব ও পাঠিয়েছেন।

    উনিশ শতকের শুরুর দিকে গোলাম রহমান মুন্সী (রহঃ) নোয়াখালী থেকে শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার পয়শা গ্রামে বসতি গড়েন।তখন এ অঞ্চলে কোন স্কুল মাদ্রাসা ছিলনা। বিধায় এখানকার মানুষেরা শিক্ষা বঞ্চিত ছিলেন।

    গুটি কয়েক মানুষ শিক্ষার সুযোগ পেলে ও বাকিরা ছিল অন্ধকারে ।ঠিক সেই সময়ে আল্লাহ তায়ালা আশীর্বাদ স্বরুপ আমাদের মাঝে গোলাম রহমান মুন্সী সাহেবকে পাঠান।তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে লেখাপড়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অভিভাবকদের  বোঝান।

    ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই বাস্তব জীবনে চরম উৎকর্ষতা লাভ করা সম্ভব হয়। জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে শিক্ষার বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগে জীবনকে উৎকর্ষমন্ডিত করা যায়। 

    বিশ্বের বহুমুখী জ্ঞানভান্ডারের সাথে শিক্ষার মাধ্যমেই পরিচিত হওয়া যায়। অজানাকে জানা এবং সেই জানাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার কৌশল শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ, যোগ্যতা ও মনুষ্যত্ব অর্জন এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হয়ে তা থেকে জীবনকে উপকৃত করার মাধ্যমই হলো শিক্ষা। সর্বোপরি, জীবনকে সাফল্যমন্ডিত, সৌন্দর্যমন্ডিত, অর্থবহ ও কৃতকার্য করার জন্য শিক্ষাই একান্ত ও মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির কখনো উন্নয়ন সম্ভব নয়।লেখাপড়া সম্পর্কে তিনি  অভিভাবকদের  বুঝাতে চেষ্টা করেন।তার অমায়িক ব্যবহার, পরোকপারী মনোভাব দেখে অভিভাবকেরা ধীরে ধীরে তার সাথে একমত হতে থাকে।

    তিনি এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে "রাজ"দের জায়গায় প্রথমে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর তুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন।আস্তে আস্তে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।তিনি যেমন মায়াবী ছিলেন আবার ছিলেন  ভীষন রাগী প্রকৃতির।কেউ স্কুলে না এলে তাকে জোড় করে ধরে আনা হতো। তাই ভয়ে কেউ স্কুল ফাঁকি দিতে চাইতো না।ফলে ফাঁকিবাজ দুষ্টু প্রকৃতির ছেলেরা বাধ্য হয়ে পড়ালেখা করতো।

    এমনি করে তিনি এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে আজীবন শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেন এই এলাকার মানুষকে।তার হাতে নির্মিত সেই স্কুলটি একসময় পাকা বিল্ডিংয়ে পরিনত হয়।যেটি এখন পয়শা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত। এই স্কুলটির বয়স এখন প্রায় ১১৫ বছর।

    তিনি মাইজভান্ডারীর মুরিদ ছিলেন।বিক্রমপুরে তার মাধ্যমেই শফিউল বশর  মাইজভাণ্ডারী সাহেবের আগমন ঘটে।তিনি বহু মানুষকে ভান্ডার শরীফে নিয়ে গিয়ে মুরিদ করেছেন। মাইজভাণ্ডারীর তৌহিদের ঝান্ডা তিনিই বিক্রমপুরে চালু করেন।

    প্রতি বছর মাঘ মাসের ২ তারিখে তিনি  একটি মাহফিল করতেন।সম্ভবত শফিউল বশর মাইজভাণ্ডারী সাহেবের মায়ের মৃত্যু দিবস উপলক্ষে এ মাহফিলটির প্রচলন করেছিলেন। সেই থেকে প্রতিবছর ২রা মাঘ তারিখে মুন্সি সাহেবের ভক্তবৃন্দ এবং পয়শা গ্রামবাসীদের উদ্যোগে এ ওয়াজ মাহফিল হয়ে আসছে।

    আজ ২রা মাঘ (১৫ জানুয়ারী ) পয়শা গ্রামের সেই ঐতিহাসিক ওয়াজ মাহফিল।বাদ আসর শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এ মাহফিল। 

    মাহফিলে প্রধান মেহমান হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি আবু সাঈদ (দাঃ বাঃ)।
    আরো ওয়াজ করবেন আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি মাহবুবুর রহমান জিহাদি, হাফেজ মুফতি সাইখ ইমরান হোসাইন,শাইখ মুফতি ইখতিয়ার আরেফি। সভাপতিত্ব করবেন হাজী মোঃ দেলোয়ার হোসেন মোল্লা।

    প্রকাশিত: বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২০