ঝালকাঠিতে গাছের সঙ্গে র্যাক দিয়ে চলছে বিদ্যুতের লাইন স্থাপন
আল আমিন,ঝালকাঠিঃ- গাছের সঙ্গে ঝুলছে
বিদ্যুতের তার, আবার কোথাও কোথাও
পাকা খুঁটি নেই, গাছেই র্যাক দিয়ে
লাইন টানা আছে। অনেক স্থানে র্যাক ছাড়াই জিআই তার দিয়ে অধিক ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিদ্যুৎ
লাইন। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এসব ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগের দেখা মেলে। এতে
প্রায়ই ঘটে আসছে দুর্ঘটনা। দিনের পর দিন বন্ধ থাকছে বিদ্যুত সরবরাহ। লোডশেডিংও হচ্ছে
ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগের কারনে।
এসব বিবেচনা করে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্টিভিউশন কোম্পানি
(ওজোপাডিকো) ‘সম্প্রসারণ ও পরিবর্ধন প্রকল্পের’ কাজ শুরু করে। গত বছরের জুলাই মাসে
প্রকল্পের এক কোটি টাকার কাজ শুরু হলেও ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অথচ এ প্রকল্পের
নতুন খুঁটি স্থাপন ও তারের সংযোগ দেওয়া হয়নি ৪০ থেকে ৪৫ ভাগও। অভিযোগ উঠেছে,
প্রকল্পের ঠিকারের খামখেয়ালিপনা,
দুর্নীতি ও কালক্ষেপনের জন্যই
নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন হয়নি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগগুলো রয়েই গেছে এবং নতুন করে
সংযোগও পাচ্ছেন না অসংখ্য পরিবার।
সরজমিন ঘুরে দেখা
যায়, নলছিটি শহর কিংবা গ্রামে রাস্তার
পাশে গাছের সঙ্গে জরাজীর্ণ অবস্থায় র্যাক দিয়ে বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে। শহরের হাসপাতাল
সড়ক, বিআইনপি কলোনির পেছনে,
পোস্ট অফিসের পাশে,
সবুজবাগ, প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের পাশে, মালিপুর, নাঙ্গুলী, বৈচন্ডি, মাটিভাঙা, সূর্যপাশা, সারদল, নান্দিকাঠি, ভরতকাঠি, পূর্ব দপদপিয়াসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকা খুঁটির
পরিবর্তে, কাফুলা গাছ,
তাল গাছ, মাদার গাছ, মেহগণি গাছ, চাম্বল গাছ ও রেইন্ট্রি গাছের সঙ্গে বিদ্যুতের তার
দিয়ে লাইন টানা হয়েছে। সেখান থেকে বাড়ি বাড়িতে দেওয়া হয়েছে সংযোগ।
শহরের কলেজ রোড এলাকার
বাসিন্দা ও পৌর কাউন্সিলর আবদুল কুদ্দুস মোল্লা বলেন, সবুজবাগ এলাকায় কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনের বাসার পাশে,
থানারপুল এলাকায় এবং বিআইপি
কলোনির পাশে গাছের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে
পারে। আমরা বিদ্যুত অফিসে যোগাযোগ করে খুঁটি স্থাপন করে নতুন সংযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেছি,
কিন্তু ঠিকাদার কাজ করছেন
না। সবুজবাগ এলাকার মো. মহসিন বলেন, আমাদের বাসার পাশেই একটি গাছের সঙ্গে র্যাক দিয়ে বিদ্যুতের লাইন দেওয়া হয়েছে।
অনেক বার বলেও একটি খুঁটি আনেনি তারা। নতুন খুঁটি স্থাপনের কাজ শুরু হলেও ঠিকাদার আমাদের
এখানে খুঁটি দিচ্ছে না। অথচ চায়না মাঠে অনেকগুলো খুঁটি রাখা আছে। এগুলো স্থাপন করা
হচ্ছে না। ফেলে রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে
জানা যায়, ওয়েস্টজোন পাওয়ার
ডিস্টিভিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ‘সম্প্রসারণ ও পরিবর্ধন প্রকল্পে’ এক কোটি টাকার
কাজ পায় খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রকি কনস্ট্রাকশন। এ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি
কিনে নেয় মাসুম মল্লিক নামে এক ঠিকাদার। তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের বরিশাল অঞ্চলে এ ধরনের
কয়েকটি প্রকল্পের কাজ করছেন। কার্যাদেশ অনুযায়ী নলছিটির প্রকল্পের মেয়ার দেওয়া হয়েছে
৬ মাস। গত বছরের জুলাই মাসে নলছিটিতে কাজটি শুরু করেন ঠিকাদার।উপজেলায় ১২ মিটারের ৮১০টি
খুঁটি এবং ৯ মিটারের ৫৫২টি পাকা খুঁটি স্থাপনের কথা রয়েছে।
এসব খুঁটিতে ১০০ গজ দূরত্বে
মার্লিন তার দিয়ে ৪০ কিলোমিটার এবং ওয়াসপ তার দিয়ে ৩২ কিলোমিটার সংযোগ দেওয়া হবে। প্রকল্পের
নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ৪০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ৪২০টি এলটি
এবং ৫৬০টি এইচটি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। এসব খুঁটিতে এখন পর্যন্ত তারের সংযোগ দেওয়া
হয়নি। বাকী ৫০ ভাগ কাজ শেষ না হতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ডিসেম্বরে। ঠিকাদার
বিদ্যুতের প্রায় ৫০০ খুঁটি চায়না মাঠ ও শিমুলতলা এলাকায় ফেলে রেখেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ,
ঠিকাদার অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন
স্থানে প্রকল্পের খুঁটি স্থাপন করছেন। কোথাও আবার পরিচিতজনদের খুঁটি আগে দিচ্ছেন। অতিগুরুত্বপূর্ণ
অনেক স্থানে এখনো খুঁটি স্থাপনের কোন ব্যবস্থাও করেননি তিনি। নলছিটি ওজোপাডিকোর প্রকৌশলী
মো. ফিরোজ সন্যামত বলেন, ঠিকাদারকে অনেক অনুরোধ
করেও সময় মতো কাজ সম্পন্ন করতে পারিনি। এ প্রকল্পের তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপের কাজ
শেষ হলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ শুরু হবে। এখন পর্যন্ত প্রথম ধাপের কাজই শেষ হয়নি। এতে
বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী। তিনটি ধাপের কাজ শেষ হলে শতভাগ বিদ্যুত
সরবরাহের উপজেলা হিসেবে নলছিটির নামও লেখা হবে।
এ ব্যাপারে প্রকল্পের
ঠিকাদার মাসুম মল্লিক বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে
অন্ততপক্ষে দেড় বছর সময় দেওয়া উচিৎ। কিন্তু আমাকে সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫ মাস। তার
মধ্যে যতটুকো সম্ভব করেছি। কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায়, নতুন করে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। কাজে কোন ত্রুটি
হচ্ছে না। প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী (বরিশাল) রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী
বলেন, নলছিটিতে এখনো অনেক কাজ বাকী
রয়েছে। এ অবস্থায় মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ঠিকাদার সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। সময় পেলে প্রাক্কলন
অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।