আবরার হত্যা : ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শহীদ আবরার হত্যার খবর ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে।
ফরাসি গণমাধ্যম এএফপি, যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েস অব আমেরিকা, কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা ও ভারতীয় দৈনিক হিন্দুতে এই হত্যার খবর এসেছে। এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। এ নিয়ে রাজধানী ঢাকা ও রাজশাহীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ চলছে। এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে পারে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্টানে।
মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফাহাদ হত্যার বিচারে আট দফা দাবি জানিয়েছেন তারা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি,
- ফাহাদ হত্যার বিচার দ্রুত টাইব্যুনালে করতে হবে।
- হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফাঁসি দিতে হবে।
- বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
- এছাড়া প্রশাসনের জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে আজ সকাল থেকে বুয়েট ক্যাম্পাস উত্তাল। আবরারের সহপাঠীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ১০টায় বুয়েট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে ‘বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে একটি মিছিল শুরু করেন তারা।
এসময় ‘খুনীদের ঠিকানা, এই বুয়েটে হবে না’, ‘ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই’, ‘প্রশাসনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘ভিসি তুই নীরব কেন, জবাব চাই, দিতে হবে’ এসব স্লোগান দিতে শোনা যায় শিক্ষার্থীদের। এর আগে সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল থেকে আবরারের লাশ বুয়েট ক্যাম্পাসে আনা হয়। এরপর রাত ১০টার দিকে পরিবারের স্বজন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীদের উপস্থিতিতে বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিতে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বুয়েটের অ্যাম্বুলেন্সে স্বজনরা আবরারের মরদেহ কুষ্টিয়া গ্রামের বাড়িতে দাফন করাতে নিয়ে যান।
ফাহাদের পিতা, বরকত উল্লাহ বলেন, আমার ছেলে নিষ্পাপ ছাত্র ছিল। তার নিজস্ব মতামত ছিল এবং সে জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছিল।
"তার কিছু ফেসবুক পোস্টের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহপাঠী আল জাজিরাকে জানিয়েছেন,।
প্রধান বিরোধী বিএনপি এই হত্যার নিন্দা জানিয়েছে, সেক্রেটারি-জেনারেল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেছেন, "মনে হচ্ছে আমরা একটি মৃত্যু উপত্যকায় বাস করছি।"
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিও রয়েছেন, দুর্নীতি, সহিংসতা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের তৎপরতার উপর চড়াও হয়েছিল।
গত মাসে চাঁদাবাজির অভিযোগের পরে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে যথাক্রমে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন: "শিবিরের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বা সরকারবিরোধী ফেসবুক স্ট্যাটাস পোস্ট করার জন্য আরেক সহপাঠী ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ছাত্রলীগের অধিকার কে দিয়েছিল?"
"ছাত্রলীগ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তাদের প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে," তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন।
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৯