• সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ

    আ.লীগ নেতা টিপু হত্যার অভিযোগপত্রে দলের একাধিক নেতার নাম

     

    রাজধানীর মতিঝিল থানার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারের জেরে খুন হন ওই থানার আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপু। হত্যার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা জড়িত। আজ সোমবার এই হত্যা মামলায় ৩৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

    অভিযোগপত্রে আসামির নামের তালিকায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী রয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।

    হারুন অর রশীদ বলেন, ডিবি পুলিশের তদন্তে টিপু হত্যার মোট আসামির সংখ্যা ৩৪। একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় তার নাম বাদ দিয়ে ৩৩ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। সোহেল নামের ওই আসামির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে তাঁর নামও সম্পূরক হিসেবে সংযুক্ত করা হবে চার্জশিটে।

    পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ অনুসারে জবানবন্দি প্রদান করেছেন তিনজন। তাঁরা হলেন, মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ (৩৪), নাসির উদ্দিন মানিক (২৬) ও সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩)। আধিপত্য বিস্তার ও আর্থিক লেনদেন টিপু হত্যার বড় কারণ। তবে টিপু হত্যায় যারাই জড়িত ছিলেন তাঁদের কারও রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যারাই সম্পৃক্ত বা টিপু খুনের সঙ্গে জড়িত তাঁদের প্রত্যেককে মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করে আজ আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

    টিপু হত্যা মামলার তদন্ত সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, জাহিদুল ইসলাম টিপু মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন, অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। ১৪ মাস আগে টিপু খুন হন। তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর ডিবি মতিঝিল টিম তদন্তকাজ শুরু করে। প্রথম কয়েক দিনের মধ্যে মাস্টারমাইন্ড পর্যায়ের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। টিপু একা খুন হননি। তাঁকে মার্ডার করতে আসা শ্যুটারদের গুলিতে খুন হন কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি (২২)।

    তিনি বলেনে, ‘এই খুনের তদন্তে আমরা প্রায় ২৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। আজকে আমরা ৩৩ জন আসামির নামে চার্জশিট দাখিল করেছি। মোট পলাতক রয়েছেন ৯ আসামি।’

    হারুন বলেন, ‘ঘটনা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শুটার আকাশকে বগুড়া থেকে ও মোল্লা শামীমকে ভারতে পালানোর প্রাক্কালে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তার ২৪ জনের সঙ্গে কথা বলে ও সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে এসেছে যে, টিপু হত্যা পরিকল্পিত। টিপুকে হত্যার জন্য বেইলী রোড, বায়তুল মোকাররম এলাকা ও হোটেলসহ বিভিন্ন এলাকায় মিটিং করেছেন জড়িতরা। হত্যার পর প্রথম এক মাসে অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরও যেহেতু এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। সে জন্য কোনো ধরনের ভুল বা ত্রুটি না হয় সে জন্য তদন্তে সময় নেওয়া হয়। আজ সেটার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।’

    ডিবি প্রধান আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, যারা জড়িত, অপরাধী, সাক্ষ্য প্রমাণ পারিপার্শ্বিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে শুধু তাঁদের নামই মামলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। যারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না তাঁদের কারও নাম সংযুক্ত করা হয়নি। অপরাধীদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা আমরা করিনি।’

    টিপু হত্যায় গ্রেপ্তার আসামি যারা-জিসান ওরফে জিসান আহাম্মেদ ওরফে মন্টু ওরফে এমদাদুল হক (৫০), জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক (৪৫), সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩), মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ (৩৭), শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫), মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর (৪০), আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল (৪৫), জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন (৫১), হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ (৫০), তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু (৩৬), মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু (৪০), নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক (৪৭), মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম (৩৬), ইয়াসির আরাফাত সৈকত (৩৩), আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল (৪৯), সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ (২৬), খাইরুল ইসলাম মাতব্বর ওরফে খোকা (88) আবু সালেহ শিকদার ওরফে সুটার সালে (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), ওমর ফারুক (৫২), সোহেল শাহরিয়ার (৪১), মোহাম্মদ মারুফ খান (২৮), ইসতিয়াক আহম্মেদ জিতু (৩৯), ইমরান হোসেন ওরফে জিতু (৩২), রাকিবুর রহমান ওরফে রাকিব (৩১), ও মোরশেদুল আলম পলাশ।

    পলাতক আসামি যারা-এনামুল ইসলাম ওরফে এক্সেল সোহেল (৪৮), রিফাত হোসেন (৩৮), রানা মোল্লা (৪০), আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব (৩৫), সামসুল হায়দার ওরফে উচ্ছল উজ্জল (৪১), কামরুজ্জামান বাবুল ওরফে বাবুল তালুকদার (৬২), গোলাম আশরাফ তালুকদার (৬৮) ও মারুফ আহমেদ মনসুর (৫৭)।

    টিপু হত্যার তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, টিপু হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের সরাসরি শুটার হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ (৩৪)। তাঁকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরেকজন শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫)। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে।

    আর টিপু হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩)। হত্যার পর তাঁকে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় ওমান থেকে গ্রেপ্তার করে দেশে আনা হয়।

    প্রকাশিত সোমবার ০৫ জুন ২০২৩